ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

স্বাভাবিক জীবনে অন্তর্ভুক্তি

অটিজম

স্বাভাবিক জীবনে অন্তর্ভুক্তি

ড. হাকিম আরিফ

সমকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ২৩:১৫

ড. হাকিম আরিফ
প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান
যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

অটিজমে আক্রান্তদের ভাষা নেই। ফলে তারা নিজেদের প্রকাশ করতে পারে না। সমাজের অন্যান্য মানুষ তাদের সম্পর্কে অনেক ক্ষেত্রে ভুল বোঝে। তাদের প্রকৃত প্রয়োজন কী তারা তা বুঝতে পারে না। ভাষাহীনতা হলো প্রথম প্রতিবন্ধকতা। ফলে সমাজে অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে ধারণা খুবই নগণ্য। দ্বিতীয়ত, তাদের একটা তকমা দেওয়া হয়– ‘বিশেষ শিশু’; ফলে সমাজ থেকে তাদের সম্পর্কে একটি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়। তৃতীয়ত, আমাদের সমাজে ধর্ম একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যুক্ত করে– মানুষ পাপ করলে এ ধরনের শিশু জন্ম নেয়। এমন সামাজিক কুসংস্কারাচ্ছন্ন বিষয়ও তাদের জন্য আরোপিত হয়। 

বিভিন্ন আর্থসামাজিক অবস্থার কারণে অটিজমে আক্রান্তরা সমাজে পুনর্বাসিত হয় না এবং তাদের সম্পর্কে নেতিবাচক দৃষ্টিকোণ তৈরি হয়। তাদের সঙ্গে থাকলে অন্য শিশুরাও আক্রান্ত হবে এমন উদ্ভট, ভ্রান্ত ধারণাও রয়েছে সমাজে। সর্বোপরি তাদের প্রতি সামাজিক মূল্যায়নটা খুবই নেতিবাচক। এখনও তাদের প্রতি তেমন ইতিবাচক ধারণা তৈরি হয়নি। সরকারের চেষ্টা রয়েছে। তবে তা কার্যকর করতে সর্বমুখী প্রচেষ্টা দরকার সমাজের ভেতর থেকে। 

এ ক্ষেত্রে সরকারের অনেক দায়িত্ব আছে। জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রচার-প্রচারণা চালানো প্রয়োজন। অটিজমে আক্রান্তরা অবহেলিত নয়, পাপের ফসল নয়– এটা সমাজে প্রতিষ্ঠা করা দরকার। জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে বহুমুখী প্রচারণা ও বাস্তবজীবনে তার প্রতিফলনের মধ্য দিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠন করতে হবে। এই ‘বিশেষ শিশুরা’ যেন বিশেষভাবে নয়, সাধারণ শিশুদের সঙ্গে একই ক্লাসরুমে বসে পড়তে পারে– তা নিশ্চিত করতে হবে। এ নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে যে ভুল ধারণা আছে, এগুলো ভাঙতে হবে। অটিজমে আক্রান্তদের বিভিন্ন জায়গায় যোগ্যতা অনুযায়ী পুনর্বাসন করতে হবে। তাদের পুনর্বাসন করার জন্য সক্ষমতা অনুযায়ী কাজ শেখানো এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষা দেওয়া যেতে পারে। লক্ষ্য অনুযায়ী প্রশিক্ষণ দিয়ে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হলে অটিজমে আক্রান্তরাও আর্থিকভাবে সক্ষম হতে পারে। এভাবে যদি তারা নিজেরা কাজ করতে পারে, তাহলে তাদের সম্পর্কে মানুষের ইতিবাচক ধারণা তৈরি হবে। এভাবে অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের সামাজিক ও স্বাভাবিক জীবনে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

তাদের স্বাভাবিক জীবন নিশ্চিত করতে অটিজম নিয়ে ব্যাপকভাবে সভা, সমাবেশ, সেমিনার করতে হবে। পত্রিকায় তাদের নিয়ে বেশি বেশি লেখালেখি করা এবং তাদের সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করতে অটিজম সম্পর্কিত গবেষণা জরুরি। গবেষণার জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগ স্থাপন এবং বিভাগগুলোয় গবেষণা করা যেতে পারে। গবেষণার ফলাফল জনগণের সামনে তুলে ধরার মধ্য দিয়ে একটি ইতিবাচক সাড়া আশা করা যেতে পারে। অটিজমে আক্রান্ত ব্যক্তি এবং অভিভাবকদের অভিজ্ঞতা মিডিয়ায় তুলে ধরতে হবে, তা অন্যদেরও এ নিয়ে বলতে উদ্বুদ্ধ করবে। তারা যে সমাজে অবহেলিত নয়– এটা যেন মা-বাবা সবার সামনে তুলে ধরেন, সে ক্ষেত্রে প্রচারমাধ্যমের দায়িত্বশীল ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা জরুরি। এতে একটা ইতিবাচক ধারণা তৈরি হবে। 
গ্রন্থনা: রিফতি-আল-জাবেদ

আরও পড়ুন

×