ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

বন্যার্তদের পাশে ইউনিলিভার

বন্যার্তদের পাশে ইউনিলিভার

ইউনিলিভারের উদ্যোগে ফেনী ও কুমিল্লায় প্রায় ৫০ হাজার মানুষের জন্য সহায়তা সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়

 হিল্লোল চৌধুরী

প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৩:১২ | আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১৩:৪৫

ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে বন্যা, ‍ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাংলাদেশে প্রায়ই ঘটে থাকে। তবে কিছু কিছু দুর্যোগের ভয়াবহতা এতটাই বেশি, তা সবাইকে হতবাক করে দেয়। সম্প্রতি দেশের পূর্বাঞ্চলে বিগত ৩৪ বছরে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা আঘাত হেনেছে। এ বন্যার সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে ১৯৮৮, ১৯৯৮ ও ২০০৭-এর বন্যার সঙ্গে। এসব বন্যায় হাজার হাজার মানুষের জানমালের ক্ষতি হয়।

২০২৪ সালের বন্যায় মৃতের সংখ্যা ৭০ ছুঁয়েছে; ভোগান্তিতে পড়েছেন ৫০ লাখের বেশি মানুষ। তলিয়ে গেছে দেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। ভিটে-মাটি, শস্য, পুকুরের মাছ, হাঁস-মুরগি, গবাদি পশু–সব হারিয়ে অনেকে প্রায় নিঃস্ব। আধুনিক যোগাযোগ ও উদ্ধার তৎপরতার এ সময় এই প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি তুলনামূলক কোনো অংশেই কম নয়।

বর্তমানে অনেক অঞ্চলে পানি নেমে গেলেও, কোথাও কোথাও এখনও বন্যার পানি আটকে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোয় প্রাণ ফিরতে সময় লাগবে, এমনটাই স্বাভাবিক। এ দুঃসময়ে বন্যার্তদের প্রয়োজন পর্যাপ্ত জরুরি সহায়তা; যা বন্যা মোকাবিলায় তাদের মনোবল বাড়িয়ে দেবে।

আশার কথা হচ্ছে–এই জাতীয় দুর্যোগে সরকারের পাশাপাশি শুরু থেকেই বানভাসি মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, অলাভজনক সংস্থা, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ। 

বন্যাকবলিত এলাকায় মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মতো এগিয়ে এসেছে শীর্ষস্থানীয় এফএমসিজি প্রতিষ্ঠান ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড (ইউবিএল)। প্রতিষ্ঠানটি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ১১ হাজার পরিবারের ৫৫ হাজারের বেশি সদস্যকে জরুরি খাদ্যপণ্য সরবরাহ করেছে। এ সহযোগিতা বন্যা ও বন্যা-পরবর্তী সময়ে তাদের কষ্ট লাঘব করবে।

বন্যায় ফেনী জেলার বাসিন্দাদের দুর্দশা ছিল সীমাহীন। পানিতে সব ডুবে যাওয়ার এমন ভয়ংকর অভিজ্ঞতা জেলার প্রবীণ বাসিন্দাদেরও হয়নি। আকস্মিক বন্যায় বাসিন্দারা পূর্ব প্রস্তুতি নিতে পারেনি; তাই ক্ষতির পরিমাণও বেড়েছে। ফেনীতে সবচেয়ে বেশি ২৯ জনের মৃত্যু হয়।

ইউনিলিভারের উদ্যোগে ফেনী সদর, ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়ার প্রায় ছয় হাজার পরিবারের ৩০ হাজারের বেশি মানুষের জন্য বিভিন্ন জরুরি খাদ্যপণ্য ও সহায়তা সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়। পার্শ্ববর্তী কুমিল্লায়ও বন্যার প্রকোপ দেখা দেয়। সেখানের লাকসাম, নাঙ্গলকোট, মনোহরগঞ্জ, চৌদ্দগ্রাম ও বুড়িচংয়ে এসব সামগ্রী প্রায় চার হাজার পরিবারের ২০ হাজারের বেশি মানুষের কাছে ইউনিলিভার প্রয়োজনীয় সহায়তা সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছে।

এ ছাড়া বন্যায় পরবর্তী সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার নন্দীরগাঁও ইউনিয়ন, ফতেহপুর ইউনিয়ন; কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার তালিখান ইউনিয়ন, পানিছাপড়া হাওর অঞ্চল, পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়ন; সিলেট সদরের মঙ্গলগাঁও ইউনিয়ন ও সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রায় এক হাজার পরিবারের ৬ হাজারের বেশি মানুষকে জরুরি সহায়তা দিয়েছে ইউনিলিভার। বন্যা-পরবর্তী সময়ে কলেরাসহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব ও খাদ্য সংকট দেখা দেয়। কোম্পানিটির উদ্যোগে বিতরণ করা জরুরি পণ্য স্বাস্থ্য সুরক্ষাসহ বন্যার্তদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সাহায্য করবে।

ইউনিলিভারের উদ্যোগে এসব জরুরি সহায়তা কার্যক্রম সফল করতে মাঠপর্যায়ে কাজ করেছে ‘ইয়ং পাওয়ার ইন সোশ্যাল অ্যাকশন’ বা ইপসার স্বেচ্ছাসেবকরা। ইউনিলিভার ও ইপসা বিশ্বাস করে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করতে সমাজের সম্মিলিত অংশগ্রহণ প্রয়োজন।

এ প্রসঙ্গে ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের (ইউবিএল) ডিরেক্টর-করপোরেট অ্যাফেয়ার্স, পার্টনারশিপস অ্যান্ড কমিউনিকেশনস শামিমা আক্তার বলেন, ‘দেশের পূর্বাঞ্চলের এ আকস্মিক বন্যা সাধারণ মানুষের জীবনে বিপর্যয় নিয়ে এসেছিল। বন্যা পরিস্থিতি তীব্র আকার ধারণ করার ছয় দিনের মধ্যে ইউনিলিভার বাংলাদেশ ও ইপসা একত্রে সরকারের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে ১০ হাজারের বেশি পরিবারের কাছে প্রয়োজনীয় জরুরি পণ্য পৌঁছে দিতে পেরেছে। আমাদের চেষ্টা থাকবে বন্যা-পরবর্তী পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশের মানুষের স্বাস্থ্য ও জীবনমান উন্নয়নে কাজ করা।’

ইয়ং পাওয়ার ইন সোশ্যাল অ্যাকশনের (ইপসা) প্রধান নির্বাহী মো. আরিফুর রহমান বলেন, ‘দুর্যোগপ্রবণ দেশ হওয়ায় বন্যা মোকাবিলার অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে। তবে এবারের বন্যার প্রকোপ বেশি থাকায় প্রত্যন্ত ও দুর্গম এলাকায় জরুরি সহায়তা পৌঁছে দেওয়া ছিল বেশ চ্যালেঞ্জের কাজ। ইউনিলিভারকে ধন্যবাদ এ উদ্যোগে ইপসাকে সম্পৃক্ত করায়।’
 

আরও পড়ুন

×