ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

কিশোরীবেলার যত্নআত্তি

কিশোরীবেলার যত্নআত্তি

ছবি :: সাদিক খান

 আফরোজা চৈতী

প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০২৪ | ২৩:৪৩ | আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২৪ | ১৩:৪৫

কৈশোর এক দারুণ রহস্যময় বেলা। এ সময় কিশোর-কিশোরীর শরীর ও মনে চলে নানা ধরনের টানাপোড়েন। না বড়, না ছোট। নানা ধরনের হরমোন ও শারীরিক পরিবর্তনে তারা ঠিক বুঝে উঠতে পারে না এ সময় কী করবে। অনেকে মানসিকভাবে বিষণ্ন হয়ে পড়ে। এ সময় মা-বাবাকে সন্তানের প্রতি বিশেষ যত্নশীল হয়ে উঠতে হবে।

মুড সুইংয়ের জন্য এ সময় কিশোরীদের মন খারাপ থাকতে পারে। বিষণ্নতার ফলে সে অনেক সময় মা-বাবা অথবা কাছের মানুষের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে। কিন্তু এটা সে ইচ্ছাকৃতভাবে করে এমন নয়; বরং শরীরের হরমোনের তারতম্য ও শারীরিক পরিবর্তনের এক বিরূপ প্রভাব পড়ে তার মনে। এ সময় কিশোরীদের স্তনগ্রন্থি বিকশিত হয়, মাসিক শুরু হয়, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চর্বি জমে, জননাঙ্গের গ্রন্থি ও কলার বৃদ্ধির জন্য বিপাকক্রিয়ার হার বেড়ে যায়। এ কারণে এ সময় পুষ্টির ভারসাম্য রক্ষা খুবই দরকার। দেখা যায়, কৈশোরে খাবার-দাবারে অনিয়ম, অপুষ্টি বা অতিপুষ্টিতে ওজনের ভারসাম্য নষ্ট হয় বেশি। এর প্রতিক্রিয়ায় পরবর্তী সময়ে দেখা দেয় নানা ধরনের সমস্যা। 

বয়ঃসন্ধিতে হরমোনের তারতম্যের জন্য কিশোরীদের মুখে ব্রণ বেশি হয়। এ সময় ব্রণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রচুর পানি পান করতে হবে; শাকসবজি ও আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে বেশি। উচ্চ শর্করাযুক্ত খাবার ব্রণের সমস্যা বাড়ায়। তা ছাড়া অতিরিক্ত ফাস্টফুড, কোমল পানীয়, কেক-পেস্ট্রিজাতীয় খাবার খেলে কিশোরীদের দ্রুত ওজন বাড়তে থাকে এবং হরমোনের তারতম্যের কারণে পলিস্টিক ও ওভারিয়ান সিনড্রোম দেখা দেয়। এর ফলে মাসিক অনিয়মিত হয়ে পড়ে, মুখে অবাঞ্ছিত লোম দেখা দেয়। 

এ সময় কিশোরীদের মাসিক বা পিরিয়ড শুরু হয়। প্রথমদিকে এ বিষয়টির কারণে অনেক কিশোরীই বিষণ্নতায় ভুগে থাকে। তারা নিজেদের নিয়ে সংকুচিত বোধ করতে থাকে; খাওয়া-দাওয়ায় অনীহা দেখা যায়। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। এ সময় তাদের খাবারে বিশেষ নজর দিতে হয়। অনেক কিশোরীর এ সময় বেশি পরিমাণে রক্তক্ষরণ হয়, দীর্ঘদিন ধরে রক্তক্ষরণ হয়। এ সময় প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবার না খেলে রক্তস্বল্পতা দেখা দিতে পারে। কিশোরীদের আয়রনের চাহিদা কিশোরদের তুলনায় বেশি থাকে। তাই প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার, যেমন– কলিজা, ডিম, মাংস ইত্যাদি খেতে দিতে হবে। সেই সঙ্গে কচুর শাক, বিট ইত্যাদি খেতে হবে; যে খাবারগুলোয় আয়রনের প্রচুর জোগান থাকে। যেহেতু খাবারে অরুচি থাকে, তাই রুচি অনুযায়ী খাবারে পুষ্টির জোগান নিশ্চিত করতে হবে। 

কিশোরী মেয়ের মা এ সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। তিনি এ সময় শুধু শাসন না করে বরং সন্তানের একজন ভালো বন্ধু হয়ে উঠতে পারেন, যাতে সন্তান তাঁকে যে কোনো সমস্যার ব্যাপারে খোলাখুলি বলতে পারে। এ সময় একজন কিশোরীকে তার শারীরিক পরিবর্তনের বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন করার পাশাপাশি তাদের যৌন আচরণ সম্পর্কেও সচেতন করতে হবে।
অনেক কিশোরী এ সময় অত্যধিক সৌন্দর্যসচেতন হয়ে ওঠে এবং স্লিম ও আকর্ষণীয় হওয়ার আশায় অতিরিক্ত ডায়েটিং করে। অথচ এ সময় কিশোরীদের খেতে হবে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিনযুক্ত খাদ্য। তাই কিশোরীদের খাদ্যতালিকায় দুধ, দই, পনির, সবুজ শাক, ছোট মাছ ইত্যাদি থাকতে হবে।

আরও পড়ুন

×