ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

সেরাদের সেরা ঋতুপর্ণা

সেরাদের সেরা ঋতুপর্ণা

ঋতুপর্ণা চাকমা

লাবণী মণ্ডল

প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৪ | ২৩:৪৬ | আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২৪ | ১৭:১০

ঋতুপর্ণা চাকমা– সদা হাস্যোজ্জ্বল, প্রাণবন্ত এক মেয়ে। ছোট এ মেয়েটি এখনও কথাবার্তা বা চলাফেরায় শিশুসুলভ। হেলেদুলে কথা বলেন শিশুদের মতোই। অথচ খেলার মাঠে কেমন আগ্রাসী হয়ে ওঠেন। দেশ ও দলের স্বার্থে তিনি সবই করতে পারেন। নেপালের কাঠমান্ডুতে এবারের দক্ষিণ এশিয়ান নারী ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পেছনে ছিল তাঁর বিশেষ ভূমিকা। তা এসেছে আত্মবিশ্বাস থেকে। এ আত্মবিশ্বাসই তাদের জয় এনে দিয়েছে।

ক্যারিয়ার শুরুর যাত্রা সম্পর্কে ঋতুপর্ণা বলেন, ‘এটা তো শুরু, এর ধারাবাহিকতা আমাদের ধরে রাখতে হবে, যা সম্ভব আপনাদের আশীর্বাদ পেলে।’ তখন চোখে–মুখে আনন্দের ছোঁয়া, বিনয়ে মাথা ঝুঁকিয়ে, অনেকটা নিচের দিকে তাকিয়ে কথা বলেন তিনি। তিনি হয়তো বিশ্বাস করেন, বিনয়ী মনোভাবই মানুষকে সর্বোচ্চ দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়। তাঁর আশা, এ দলকে ভালো পরিচর্যা করলে এশিয়ার সবচেয়ে ভালো দল হওয়া সম্ভব। যে দলের প্রত্যাশা তিনি মনে মনে গেঁথে রেখেছেন। তাদের চাওয়া-পাওয়া খুব বেশি নয়, তবে পারিশ্রমিকটা যাতে নিয়মিত হয়– এটুকুই প্রত্যাশা; যাতে পরিবার নিয়ে ভালোভাবে বেঁচে থাকতে পারেন। তাদের উৎসাহে যেন কোনো ভাটা না পড়ে।

ঋতুপর্ণা বলেন, ‘আমাদের চাওয়াগুলো খুবই সাধারণ। এতে নজর দেওয়া হোক। বেতন যেন নিয়মিত হয়। নিয়মিত নারী লিগ যেন হয়। বড় দলগুলো যেন নারী লিগে খেলে। একটু পরিচর্যা পেলে নারী ফুটবল আরও এগিয়ে যাবে।’

ঋতুপর্ণা চাকমা সাফের ফাইনালে নেপালের বিপক্ষে দর্শনীয় গোল করেছেন। তাঁর গোলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। ২-১ গোলে হারিয়েছে নেপালকে। বাঁ পায়ে বল রিসিভ করে বাঁ পায়ে চোখের পলকে নেপালি অধিনায়ক ও গোলরক্ষককে বোকা বানিয়ে গোল করেছেন। 

এ আনন্দের মধ্যেও টানা দুই সাফজয়ী দলের ফুটবলার ঋতুপর্ণার মনে এক বেদনার রেখা বইছে। ২০১৫ সালে ঋতুপর্ণা চাকমার বাবা মারা গেছেন। ঋতুপর্ণা চাকমার ভাই পার্বণ চাকমা দুই বছর আগে বিদ্যুৎস্পর্শে মারা গেছেন। বাবা ও ছোট ভাইকে ভীষণ মনে পড়ে তাঁর। এ দু’জনই ঋতুপর্ণার ফুটবলার হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখেছেন। ঋতুপর্ণা বলেন, ‘বাবা বেঁচে থাকলে খুব প্রাউড ফিল করতেন। তিনি ফুটবলপ্রেমিক ছিলেন; কিন্তু আমার সাফল্য দেখে যেতে পারেননি। ২০২২ সালে সাফে যাওয়ার দুই মাস আগে ছোট ভাইকে হারিয়েছি। সেও ফুটবল পছন্দ করত। সব সময় আমার পাশে থাকত।’

ঋতুপর্ণা ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘অন্তরের অন্তস্তল থেকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, যারা দেশ থেকে আমাদের জন্য মন থেকে দোয়া ও আশীর্বাদ করেছেন। আপনাদের দোয়া ও আশীর্বাদেই আমরা আজকে চ্যাম্পিয়ন। এই চ্যাম্পিয়ন ট্রফিটা শুধু আমাদের না, পুরো বাংলাদেশের।’ এটিই দেশপ্রেম; দেশাত্মবোধ এভাবেই তৈরি হয়। 

আরও পড়ুন

×