ঢাকা বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

‘আমরা এখনও সভ্য হতে পারিনি!’

‘আমরা এখনও সভ্য হতে পারিনি!’

শিরীন হক

শিরীন হক

প্রকাশ: ২২ জুন ২০২৫ | ০০:৪৮ | আপডেট: ২২ জুন ২০২৫ | ১৫:৪৮

সম্প্রতি কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে চুরির অভিযোগে এক নারীকে গাছে বেঁধে মারধর ও মাথার চুল কেটে দেওয়ার মতো অমানবিক ও নৃশংস ঘটনা ঘটেছে। প্রতিবেশীর ফ্রিজ থেকে মাংস চুরির অভিযোগে প্রথম দফায় ওই নারীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করা হয়। এক পর্যায়ে তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে যান তাঁর স্বামী। রাত ৮টার দিকে ওই নারীর বাড়িতে ভাঙচুর করে তাঁকে তুলে আবার প্রতিবেশীর বাড়ি নিয়ে আসে একদল লোক। সেখানে তাঁকে মারধর করে মাথার চুল কেটে দেওয়া হয়। রাত ১০টার দিকে সালিশ বসান স্থানীয় ইউপি সদস্য। এ সময় মারধরের শিকার নারীর দুটি গরু, একটি ছাগল ও স্বর্ণালংকারের বিনিময়ে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ভুক্তভোগী নারী বলেন, ‘ষড়যন্ত্র করে চুরির নাটক সাজিয়ে আমার সঙ্গে অন্যায় করেছেন গ্রামের লোকজন। আমি বিচারের আশায় থানায় মামলা করেছি। মামলা তোলার জন্য সকলেই হুমকি দিচ্ছে।’
গত ১০ জুন (মঙ্গলবার) রাতে সাতজনকে আসামি করে মামলা করেন ভুক্তভোগী নারী। পরদিন সকাল ৯টার দিকে তিন নারী আসামিকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর আসামিদের ছিনিয়ে নিতে বেলা ১১টায় থানা ঘেরাও করে শতাধিক মানুষ।
------------------------------------------------------------------------------------------------

শিরীন হক
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান
সদস্য ও প্রতিষ্ঠাতা সভানেত্রী, নারীপক্ষ

আমরা এখনও সভ্য হতে পারিনি। একটি হলো– নারীকে আমরা এখনও মানুষ হিসেবে গণ্য করি না। অন্য বিষয়টি হলো– অপরাধ করে পার পাওয়া যায়। নারীর ওপর সহিংসতার যে আলামত আমরা দেখছি, এই দুটো মিলেই সেটির কারণ। একদিকে আমরা সভ্য হলাম না, অন্যদিকে নারীকে মানুষ হিসেবে সম্মান করতে শিখলাম না।

আমাদের নারীপক্ষের একটি স্লোগানই আছে– নারীকে মানুষ হিসেবে চিনুন, জানুন, সম্মান করুন। সমাজ হিসেবে আমরা এই মানসিকতা এখনও অর্জন করতে পারলাম না। এত বছর ধরে নারী আন্দোলন করেও এই মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনটা অর্জন করা সম্ভব হয়নি। নারীকে মানুষ হিসেবে গণ্য করতে আর কত বছর লাগবে জানি না। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা  সচেতনতা তৈরি করার জন্য কম টাকা খরচ করেনি। সেই সচেতনতা তৈরি হয়নি বলেই মনে হয়। 

বহু পথনাটক, উঠান বৈঠক, বেতার ও টেলিভিশনে প্রচারণা সত্ত্বেও আমরা সেটি অর্জন করতে পারলাম না। এটি আমাদের দুর্ভাগ্য ছাড়া আর কী বলব আমি জানি না। তারপরও চালিয়ে যেতে হবে আমাদের কাজ। 

বর্তমানে ভার্চুয়াল জগতে সহিংসতা এক নতুন দুশ্চিন্তার কারণ। বিশেষ করে যুবনারীদের ক্ষেত্রে এই অভিযোগ বেশি শোনা যায়। ডিজিটাল সুরক্ষা আইন যেটি এখন হলো, সেটি কতটুকু এই ক্ষেত্রে সফলভাবে প্রয়োগ করা যাবে, তা এখনও বলা যাচ্ছে না। এটির মধ্যে দিয়ে নারী কতটা সুবিচার পেতে পারে সেটি এখনও পরিষ্কার না। 

ভার্চুয়াল জগতে নারীকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে, নানারকমভাবে ছোট করা হচ্ছে, যৌনবস্তুতে পরিণত করা হচ্ছে। সেটি থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য নারীরা কোথায় যাবে? কার কাছে যাবে? থানাতে আমরা সহজে যেতে চাই না। কারণ থানাগুলো নারীবান্ধব না। নারীপক্ষ অনেকদিন পুলিশের সঙ্গে প্রশিক্ষণের কাজ করেছে। থানাগুলোকে নারীবান্ধব করা যায়নি এখনও। আমাদের সংবিধানে ন্যায়পালের একটি পদ আছে। স্বাধীনতার ৫৪ বছরে এতো সরকার এলো, গেল কিন্তু ন্যায়পাল কেউ নিয়োগ দিল না। এটি যেমন একটি বিষয়, আরেকটি হচ্ছে সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে আমরা সুপারিশ করেছি যে, একটি স্থায়ী নারীবিষয়ক কমিশনের। যেটি স্বতন্ত্র হবে ও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে। সাংবিধানিক কমিশন হবে। তারা সংসদের কাছে জবাবদিহি হবে। এরকম একটি কমিশন যদি দাঁড় করানো যায়, তাহলে আমার মনে হয় কমিশন অনেক বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিতে পারে। মনস্তাত্ত্বিক যে পরিবর্তন দরকার সমাজের, সেটিকে এগিয়ে নিতে পারবে।

গ্রন্থনা: দ্রোহী তারা

আরও পড়ুন

×