ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

নদী অথবা বহমান বহুমত

নদী অথবা বহমান বহুমত

শেখ রোকন

প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২৩ | ১২:৪১ | আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২৩ | ১২:৪১

লালন সাঁই যদিও ‘একে বহে অনন্ত ধারা’ কথাটি বলেছিলেন আধ্যাত্মিক অর্থে, তা নদীর ক্ষেত্রেও সমান তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, নদী চরিত্রগত দিক থেকেই বহুপাক্ষিকতার ও বহুমাত্রিকতার অনন্য প্রতীক। সাধারণত একটি নদী যেমন পাহাড়, সমতল, বনভূমি, সমুদ্র– সব ধরনের ভৌগোলিক এলাকা পরিভ্রমণ করতে পারে, তেমনই সাংস্কৃতিকভাবে নতুন নতুন জনপদ, সমাজ, ভাষা, উৎপাদন ব্যবস্থা পেরিয়ে এগিয়ে যেতে থাকে। যেমন ব্রহ্মপুত্র নদ তিব্বত, আসাম ও বাংলার ভিন্ন ভিন্ন ভূগোল ও সমাজের অভিন্ন সূত্র হিসেবে বহমান। 

বস্তুত মানবসভ্যতা আক্ষরিক অর্থেই নদীপথ ধরে এগিয়ে গেছে কিংবা নদীর পাড়েই থিতু হয়েছে। সুপেয় পানির উৎস হিসেবে নদী কেবল মানুষ নয়, জীবজন্তু, পশুপাশি, উদ্ভিদ, এমনকি ভূমিরও তৃষ্ণা মিটিয়ে থাকে বলে আর কোনো প্রাকৃতিক স্থাপনা নদীর মতো আধ্যাত্মিক তাৎপর্য ধারণ করে না। জীবনদায়ী ভূমিকার কারণে সব ধর্মেই নদী এক ‘পবিত্র সত্তা’। ভারতে যেমন গঙ্গাস্নান, তেমনই মধ্যপ্রাচ্যের জর্ডান নদীতে স্নানের মাধ্যমে পাপস্খলনের বিশ্বাস প্রচলিত। নদী কতটা বহুপাক্ষিক, এর প্রমাণ মিলেছিল বর্ণপ্রথা-জর্জরিত প্রাচীন ভারতীয় সমাজেও। যেখানে নিম্নবর্ণের মানুষের ছায়াও উচ্চবর্ণের কাছে পরিত্যাজ্য, সেখানে একই নদীতে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে স্নানে বাধা ছিল না। নদী পাড়ি দেওয়ার নৌকাও ছিল ছুঁতমার্গের আওতামুক্ত। 

দুই.

তত্ত্বের বাইরে ব্যবহারিক দিক থেকেও নদী নিয়ে বহুপাক্ষিকতা স্পষ্ট। একই নদী একেকজনের কাছে একেকরূপে ধরা দেয়। যেমন কারও কাছে নদী সুপেয় পানির আধার হিসেবে জীবনদায়ী, কারও কাছে বন্যা ও ভাঙনের উৎস হিসেবে প্রাণঘাতী। নদীকেন্দ্রিক জীবন ও জীবিকার ক্ষেত্রে কারও কাছে পানির নিচের মৎস্যসম্পদ গুরুত্বপূর্ণ, কারও কাছে পানির ওপরে ভাসা নৌযানই আসল। কেউ নদীকে দেখেছেন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে, কেউ একে শিল্প ও সাহিত্যের উপলক্ষ করে নিয়েছেন। ইংরেজ রাজনীতিক জন বার্নস টেমস তথা সব নদীকে যদিও ‘লিকুইড হিস্ট্রি’ বা তরলায়িত ইতিহাস হিসেবে দেখেছেন। বলা বাহুল্য, নদী কেবল ইতিহাসের বিষয় নয়। নদীর সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত সভ্যতা ও সমাজ, ভাষা ও সংস্কৃতি, খাদ্যাভ্যাস ও বস্ত্রাভ্যাস, উৎপাদন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা, পরিবেশ ও প্রতিবেশ, সংগীত ও চিত্রকলা। 

আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ব্যক্তিত্ব ও জাতিসংঘের শুভেচ্ছা দূত বিবি রাসেল আমার সম্পাদনায় প্রকাশিত ‘নদী প্রসঙ্গ’ গ্রন্থে এক নিবন্ধে লিখেছিলেন, বাংলাদেশের গামছার নজরকাড়া রঙের সঙ্গে নদী ও মৎস্যসম্পদের রং বৈচিত্র্যের কী সম্পর্ক। এককথায় বলা যেতে পারে, প্রকৃতি থেকে প্রতিরক্ষা, সবকিছুর মূলে রয়েছে নদী। কেবল উৎস হিসেবে নয়, একের মধ্যে অনেক ধারা ধারণ করার জন্যও।

তিন.

নদী কীভাবে রাজনৈতিক প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে উঠতে পারে, সেই সত্য বাংলাদেশের মানুষের চেয়ে আর কে বেশি জানে? ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানকালে তাই স্লোগান উঠেছিল– ‘তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা মেঘনা যমুনা’। সত্তরের নির্বাচন, একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধেও সেই স্লোগান হয়ে উঠেছিল ‘বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের প্রতীক’। কারণ, এই প্রধান তিন নদী যেমন তাদের শত শত শাখানদী ও উপনদী নিয়ে এক বঙ্গোপসাগরে মিশেছে; তেমনই ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশে মত, পথ ও আদর্শের অনেক পার্থক্য সত্ত্বেও সবাই মিলেছিল মুক্তিযুদ্ধের মোহনায়।

কেবল রাজপথের স্লোগানে নয়, খোদ মুক্তিযুদ্ধেও এ দেশের নদনদী হয়ে উঠেছিল ‘দ্বিতীয় বাহিনী’। পুলিৎজার বিজয়ী মার্কিন সাংবাদিক সিডনি শনবার্গ নিউ ইয়র্ক টাইমসে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রতিবেদন ও বিশ্লেষণ পাঠিয়েছিলেন তখন। একাত্তরের ১৩ এপ্রিল ডেটলাইনে তিনি লিখেছিলেন, পূর্ব পাকিস্তানের গ্রামাঞ্চলের জটিল পথ– গাঙ্গেয় ব্রহ্মপুত্র জলধারা ও সহস্র নদীর আঁকিবুঁকি– পশ্চিম প্রদেশের শুষ্ক ও পার্বত্য অঞ্চল থেকে আগত পাঞ্জাবি ও পাঠানদের কাছ অপরিচিত। যখন বর্ষায় নদী ফুলে উঠবে এবং মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বন্যায় পূর্ব পাকিস্তানের বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়বে, তখন এই অপরিচিতি আরও বাড়বে। ‘আমরা এখন বর্ষার অপেক্ষায় রয়েছি’, বললেন এক বাঙালি অফিসার। ‘তারা পানিকে এত ভয় পায় যে, আপনি ভাবতেই পারবেন না এবং আমরা হচ্ছি জলের রাজা। তারা তখন ভারি কামান ও ট্যাঙ্ক নিয়ে চলতে পারবে না। প্রকৃতি হবে আমাদের দ্বিতীয় বাহিনী’। (ডেটলাইন বাংলাদেশ : নাইন্টিন সেভেন্টিওয়ান/ সিডনি শনবার্গ/ মফিদুল হক অনূদিত/ সাহিত্য প্রকাশ, ১৯৯৫)।

চার.

দুর্ভাগ্যের বিষয়, প্রাকৃতিক ছাড়াও প্রতিরক্ষাগত দিক থেকে মূল্যবান নদনদীর প্রবহমানতা আমরা মুক্তিযুদ্ধের পর ধরে রাখতে পারিনি। নদীর উপযোগিতার মূল যে বিষয়– পর্যাপ্ত প্রবাহের নিশ্চয়তা– যত দিন গেছে ক্রমেই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।  সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যদিও অভিন্ন বা আন্তঃসীমান্ত নদীগুলো নিয়ে ১৯৭২ সালেই ভারতের সঙ্গে বোঝাপড়ার চেষ্টা করেছিলেন, পঁচাত্তরের মর্মান্তিক পট পরিবর্তনের পর তা ক্ষমতার ডামাডোলে পথ হারায়। স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পরেও বাংলাদেশে প্রবাহিত শতাধিক আন্তঃসীমান্ত নদীর পানিপ্রবাহের নিশ্চয়তা প্রতিষ্ঠা করা যায়নি। আর দেশ ও জনপদের এসব প্রাণপ্রবাহ ঘিরে যে দুষ্টচক্র গড়ে উঠেছে, এর প্রধান কারণ প্রবাহস্বল্পতা। 

আমাদের দেশে নদনদীর প্রধান সংকট ছয়টি : প্রবাহস্বল্পতা, ভাঙন, দখল, দূষণ, জলকাঠামো বিকৃতি ও সাংস্কৃতিক বিমুখতা। এগুলো প্রতিটি পরস্পর সম্পর্কিত। যেমন নদীতে প্রবাহস্বল্পতা দেখা দিলেই শুকনো মৌসুমে যেমন নাব্য সংকট, তেমনই বর্ষায় এসে দেখা দেয় ভাঙন। শুকনো ও বর্ষা মৌসুমের মধ্যে ভারসাম্যহীনতার কারণে ভাঙনের অনিবার্য কুফল হচ্ছে তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়া বা অস্বাভাবিক চর পড়া। উদ্বৃত্ত জনসংখ্যার এই দেশে নতুন জেগে ওঠা চর বা প্রবাহস্বল্পতায় দুর্বল নদীর তীরে তীরে দখল শুরু হয়। দখলের হাত ধরে আসে আবাসিক, বাণিজ্যিক বা শিল্প স্থাপনা। তার মানে, দূষণের পোয়াবারো। দখল ও দূষণ পোক্ত করতে বা ওই প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে শুরু হয় জলকাঠামো বিকৃতি। এই বিকৃতির মধ্যে রয়েছে নির্বিচার বালু উত্তোলন, অপরিকল্পিত সেতু বা বাঁধ নির্মাণ, পানি ব্যবস্থাপনার নামে নদীর স্বাভাবিক গতিপথ বা প্রবাহ ঘুরিয়ে দেওয়া বা রুদ্ধ করা। এতে করে নদী ক্রমেই শীর্ণ হতে থাকে বা রোষে ফুঁসতে থাকে। পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, এগুলোর প্রধান কারণ প্রবাহস্বল্পতা। নদীর প্রবাহস্বল্পতা হচ্ছে মানুষের শরীরের অপুষ্টির মতো, যেখান থেকে অন্যান্য রোগ বাসা বাঁধতে থাকে।

বাংলাদেশের নদনদীর প্রবাহ স্বল্পতার মূলে রয়েছে উজানে বিভিন্ন ড্যাম, ব্যারাজ, পানি প্রত্যাহার বা প্রবাহ ঘুরিয়ে দেওয়ার আয়োজন। অথচ এসব স্থাপনা ভাটির দেশের মতো খোদ উজানের দেশেরও ক্ষতি করে চলছে। এ ধরনের স্থাপনা কীভাবে বুমেরাং হতে পারে, এর সর্বসাম্প্রতিক উদাহরণ দেখা গেছে সিকিমের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত তিস্তায়। ভাটির দেশের জন্য উদ্বেগের বিষয় তো বটেই, উজানের দেশের জন্যও উদ্বেগের বিষয় হচ্ছ, ভারতজুড়ে এমন শত শত নদীতে ড্যাম বা ব্যারাজ নির্মিত হয়েছে এবং আরও অনেক প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন বা পরিকল্পনাধীন। 

বিশ শতকের গোড়ায় ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতে বাঁধ দিয়ে নদী বেঁধে ফেলার সর্বনাশা প্রবণতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে উদ্বিগ্ন করেছিল। এসব আয়োজনের বিরুদ্ধে ১৯২২ সালে তিনি লিখেছিলেন ‘মুক্তধারা’। সেই নাটকে উঠে এসেছে, উত্তরকূট রাজ্যের মুক্তধারাকে লৌহবাঁধ দিয়ে বাঁধতে গিয়ে কত মানুষ ধূলিচাপায় মারা যায়, বন্যায় ভেসে যায় এবং চাষের ক্ষেত শুকিয়ে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়। কিন্তু যন্ত্ররাজ তবুও যখন বাঁধ নির্মাণ থেকে সরে আসেন না। প্রজাদের বরাতে যুবরাজের দূত বলেন, ‘তারা বিশ্বাস করতেই পারে না যে, দেবতা তাদের যে জল দিয়েছেন কোনো মানুষ তা বন্ধ করতে পারে।’ 

দুর্ভাগ্যের বিষয়, শতবর্ষ পরেও দেবতা তথা প্রকৃতির দেওয়া প্রবাহ বন্ধের সর্বনাশা উদ্যোগ থেমে নেই। বরং ঝাড়েবংশে বেড়েছে বহুগুণে। আর নদীগুলো ক্রমেই মরে যাচ্ছে। বলা বাহুল্য, এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন, গুটিকয়েক প্রভাবশালী মানুষ। বিপুল অধিকাংশের মতামত সেখানে উপেক্ষিত।

পাঁচ.

উজানে প্রত্যাহারমূলক পদক্ষেপের কারণে প্রবাহস্বল্পতা নদীর প্রধান রোগ, সন্দেহ নেই। এর সঙ্গে অভ্যন্তরীণ অবিমৃশ্যকারিতাও কম নয়। দেশের আনাচে কানাচে অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ করে ছোট ছোট প্রবাহ বা জলাশয়গুলো মেরে ফেলার দায় আমাদেরই। আমরাই দখল ও দূষণের মহোৎসব চালিয়ে যাচ্ছি। প্রবাহ ও প্রতিবেশগত নানা কারণে নদনদীতে মৎস্যসম্পদ হ্রাস পেয়েছে বটে, কিন্তু কৃষিতে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশকই দেশে মৎস্যসম্পদের বিপুল অবনতি ঘটিয়েছে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন বিল ও নদীতে এমনকি সুন্দরবনের প্রবাহগুলোতে সরাসরি বিষ ঢেলে দিয়ে মাছের পাশাপাশি জলজ অন্যান্য প্রাণিসম্পদ ও অণুজীবের অপূরণীয় ক্ষতি কি আমরাই করছি না? জেনেশুনে বিষপানের এমন উদাহরণ আর কোথাও পাওয়া যাবে?

বিশ্বজুড়েই নদীকে বিবেচনা করা হয় সামষ্টিক সম্পত্তি হিসেবে, সেখানে সবার অধিকার সমান। কিন্তু আমাদের দেশে কেবল নদীর ভূমিই দখল হচ্ছে না, প্রবহমান নদীও ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর দখলে চলে যাচ্ছে। ছোট নদীগুলো তো বটেই, মাঝারি ও বড় নদীতেও আড়াআড়ি বেড়া দিয়ে মাছ ধরার আয়োজন চোখে পড়ে। 

মাঠ পর্যায়ের এসব চিত্রের তুলনায় কেন্দ্রীয় পর্যায়ের চিত্রও কম হতাশাজনক নয়। নদীবিষয়ক যেসব আইন, নীতি, বিধি বা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়, সেখানে নদীনির্ভর জনগোষ্ঠীর মতামত প্রতিফলনের কোনো সুযোগ বা সদিচ্ছা নেই। এমনকি নাগরিক সমাজের মধ্যে যারা নদী বিষয়ে চিন্তিত ও তৎপর, তাদের পরামর্শও নেওয়ার নজির খুব বেশি নেই। যারা অযাচিত পরামর্শ দিতে চান সংবাদমাধ্যম বা সামাজিক মাধ্যমসূত্রে, তারাও খুব একটা কল্কে পান বলে মনে হয় না। 

ছয়.

একাধিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, নদনদীর স্বাস্থ্যের সঙ্গে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সুশাসন ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রত্যক্ষ সম্পর্ক রয়েছে। যে দেশে বহুমত যত আদৃত, সেখানে নদী দখল ও দূষণের হার ও মাত্রা তত কম। এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ জাপান। সেখানকার নদীগুলোর পরিস্থিতি আমাদের চেয়েও নিকৃষ্ট ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সেখানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার যত প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ হয়েছে, নদীর পরিস্থিতি তত উন্নত হয়েছে। ঔপনিবেশিক ব্রিটেনের উদাহরণও দেওয়া যায়। খোদ টেমস নদীর উদ্ধারপর্ব শুরু হয়েছে কার্যত ব্রিটিশ সাম্রাজ্য পতনের পর। নদনদীর সঙ্গে সুশাসন ও গণতন্ত্রের সম্পর্কের আরও উদাহরণ দেওয়া যাবে। মূল কথা হচ্ছে, দেশে মুক্তমত প্রকাশের অধিকার থাকলে নাগরিকদের সচেতন অংশ পরিবেশ ও প্রতিবেশগত অবনতির প্রশ্নে সরকারকে প্রশ্ন করতে পারে, স্বাধীনভাবে মতামত দিতে পারে, সমালোচনা তুলে ধরতে পারে। আর সরকার বা কর্তৃপক্ষও নদী রক্ষার প্রশ্নে সংবেদনশীল ও সচেতন থাকে; কারণ নিয়মিত বিরতিতে তাকে নাগরিকদের কাছেই ফিরে যেতে হয় সমর্থনের জন্য। আর যদি সেই বালাই না থাকে, তাহালে নদনদীর বালাই দমনের বেহুদা ক্লেশ কে নিতে চায়? 

সাত.

বাংলা ভাষায়ও নদীর বেশ কয়েকটি প্রতিশব্দ রয়েছে। এর একটি ‘কল্লোলিনী’। কারণ, নদী কুল কুল করে কথা বলতে বলতে বয়ে যায়। বাংলাদেশের নদীগুলোকে কল্লোলিনী করে তুলতে হলে নাগরিকদের কথা বলতে হবে। বহুমতের পরিসর সৃষ্টি ও সম্প্রসারিত করতে হবে। নদীগুলো নিশ্চুপ হতে দেখে দেখে মানুষও যদি নিশ্চুপ থাকে, তাহলে যেমন নদীর তেমনই মানুষেরও দুর্দিনই অনিবার্য। 

লেখক: নদী গবেষক

আরও পড়ুন

×