ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

‘কোচিং-ক্যাপ্টেন্সি সবই আমি করলে তো সমস্যা’

‘কোচিং-ক্যাপ্টেন্সি সবই আমি করলে তো সমস্যা’

ছবি: এএফপি

ক্রীড়া প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ জুন ২০২২ | ২২:৩৬ | আপডেট: ১৯ জুন ২০২২ | ২২:৩৬

তৃতীয়বারের মতো অধিনায়কত্ব পেয়ে প্রথম ম্যাচের অভিজ্ঞতা কেমন? ম্যাচের পর প্রশ্ন শুনে সাকিবের উত্তর- 'ভালো'! তার এই ভালো বলার মধ্যে যে তীক্ষ্ণ খোঁচা রয়েছে, সেটা কি বুঝতে পারছেন তাঁর ড্রেসিংরুমের সদস্যরা? বেশিরভাগেরই না বোঝার বোধটা প্রখর।

কেননা এমন হার তো তাঁদের কাছে নতুন কিছু নয়। আবারও মাঠে নামা হবে, আবারও দুই ইনিংসে ব্যাটিংয়ের সুযোগ মিলবে। তার কোনো একটাতে অন্তত ত্রিশ পেরোতে পারলেই পাস! দলের এই সংস্কৃতিকে বাড়তে দেওয়ার প্রশ্রয়টা ব্যাটাররা পেয়ে আসছেন বেশ ক'বছর ধরেই। 

দলের কেউ খারাপ করলে তাঁকে আগলে রাখার একটা অভ্যাসও তৈরি হয়েছে। যেন অধিনায়ককে বলতেই হবে, 'অমুক ভালো ব্যাটসম্যান, তমুক তো দলের জন্য এত কিছু করেছে। অমুকের ওপর ভরসা আছে, সে করবেই।' 

ক্যামেরার সামনে অধিনায়কের এসব বলার দিন বোধহয় শেষ। অ্যান্টিগায় চার দিনেই ম্যাচ হারার পর সাকিব ক্যামেরার সামনে বসেই পরিষ্কার বলে দিয়েছেন, তাঁর দলের বেশিরভাগ ব্যাটারেরই টেকনিকে সমস্যা আছে। যে কারণে ম্যাচের পর ম্যাচ দলের ইনিংসগুলো একশর আশপাশে গিয়েই থেমে যাচ্ছে।

সাকিবকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, জাতীয় দলের এই পর্যায়ে এসে কোনো ব্যাটারের নিশ্চয়ই টেকনিকে সমস্যা থাকতে পারে না? আপনার কি মনে হয় সমস্যা মানসিক? অতীতে কোনো অধিনায়ককে এমন প্রশ্ন করা হলে উত্তর হয়তো আসত এমন- মানসিক সমস্যা রয়েছে। অনেক দিন ধরে রান না পেলে আত্মবিশ্বাস তলানিতে থাকে। 

আগের দিন কোচ রাসেল ডমিঙ্গোও ওই 'আত্মবিশ্বাস তলানি' কথাটি বলেছিলেন। কিন্তু সাকিব যে আর সবার মতো নন, সেটা জানা আছে সবার। তাই তার উত্তর, ‘কে বলেছে টেকনিকে সমস্যা নেই। আমাদের বেশিরভাগ ব্যাটারই টেকনিক্যালি সাউন্ড না।’

কোনো রাখঢাক না রেখেই সাকিব কঠিন সত্যটি বলে দিয়েছেন। এটাও জানিয়েছেন, এই ম্যাচ ঘিরে খুব বেশি প্রত্যাশাও তাঁর ছিল না। ‘সত্যি কথা বলতে কী, এই টেস্ট ঘিরে খুব বেশি প্রত্যাশা আমার ছিল না। তবে এই কন্ডিশনে আমাদের ভালো করার একটা সুযোগ ছিল। আফসোস, সেই সুযোগ আমরা হারালাম। প্রথম সেশনের পর থেকেই আমরা ম্যাচটিতে পিছিয়ে ছিলাম। তারপর যে কয়েকটা সেশন ছিল সেগুলোতে আমরা রিকভারি প্রসেসে ছিলাম। সামনে যেতে পারিনি। ওটাই আফসোস।’

অধিনায়ক হয়ে সাকিব নিজে যেটুকু লড়াই করেছেন বাকিরা যদি তার কাছাকাছিও করতে পারত তাহলেও অন্তত এই টেস্টে উইন্ডিজকে চ্যালেঞ্জে রাখা যেত। উদাহরণ দিতে গিয়ে সাকিব দ্বিতীয় ইনিংসের কথাই টানলেন। 

‘আমাদের বেশিরভাগ ব্যাটারই রান পায়নি। তার পরও আমরা আড়াইশর কাছাকাছি করেছি। যদি বাকিরা কিছু করত তাহলে নিশ্চয়ই আরও রান হতো।' বাকিদের ব্যাটিং টেকনিকে যে সমস্যা, সেটা নিয়ে অধিনায়ক কি কোচের সঙ্গে কথা বলেছেন? সাকিবের উত্তর- ‘আমি কেন এটা বলতে যাব। কোচ বলবে এটা। আমি যদি অধিনায়কত্বও করি আবার কোচিংও করাই, তাহলে তো সমস্যা। আমি আমার অধিনায়কত্বের দায়িত্বটা ভালোভাবে পালন করি, বাকিরাও যে যার দায়িত্ব সেটা পালন করলেই হবে।'

অযথা বিতর্কে না জড়িয়ে কোচের দিকেই বল ঠেলে দিয়েছেন সাকিব। দিনের পর দিন চাপিয়ে দেওয়া দল, অদক্ষ ব্যাটার নিয়েই তো চলছেন কোচ রাসেল ডমিঙ্গো। মিডিয়ায় না বলুক, কখনও কি তিনি সাহস করে বিসিবি সভাপতিকেও ড্রেসিংরুমের কঠিন সত্যগুলো বলতে পেরেছেন। জানাতে পেরেছেন কি, এই দলের একটা অলিখিত সাইকেল রয়েছে, যেখানে কিনা কেউ খারাপ করলে আরেকজন এসে ঢাল হয়ে দাঁড়ান। যাতে কিনা তাঁর খারাপ সময়ে পাশে পান সবাইকে।

সাকিব জানেন, দু-এক দিনে এসব সংস্কৃতি ভাঙা যাবে না। সময় আর ক্ষমতা পেলে তিনি সেই পদক্ষেপ নেবেন ভবিষ্যতে। এখনই দলের সব কিছু অদলবদলও যে করা যাবে না, সেটাও জানেন অধিনায়ক। 'খুব বেশি পরিবর্তন করলে যে খুব ভালো হবে, তার কোনো গ্যারান্টি নেই। যারা আছে তাদের নিয়েই খেলতে হবে। ব্যাটাররা যদি নিজের নিজের জায়গা থেকে দায়িত্ব পালন করে তাহলে সবকিছুর সমন্বয়ে এই অবস্থা থেকে বের হওয়া সম্ভব। কারও একার প্রচেষ্টায় এটা সম্ভব নয়।' 

মুমিনুলকে বিশ্রাম দেওয়ার প্রশ্নেও সাকিবের ইঙ্গিত সিদ্ধান্তটা মুমিনুল নিলেই ভালো, 'মুমিনুলের সঙ্গে আমার প্রায়ই কথা হয়। ও যদি মনে করে ওর বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন, সেটা ওর সিদ্ধান্ত। তবে মাত্র একটি ম্যাচ শেষ হয়েছে। এ নিয়ে কথা না বলাই ভালো। হাতে দু'দিন সময় রয়েছে, তারপর দ্বিতীয় টেস্ট নিয়ে ভাবা যাবে।'

আরও পড়ুন

×