দুবাইয়ের হৃদয় ভেঙে শান্তরা রাওয়ালপিন্ডিতে

ছবি- সংগৃহীত
নাজমুল হক নোবেল, দুবাই থেকে
প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ০১:১১ | আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ১৩:৫৮
‘মেয়দান রেসকোর্স’; দুবাইয়ে গত কয়েক দিন এই হোটেলটি ছিল বাংলাদেশ দলের আবাসস্থল। বিলাসবহুল তো বটেই, আরও একটি কারণে বিখ্যাত এই হোটেল। ‘নাদ আল সেবা’ অঞ্চলের ওই হোটেলের প্রতিটি রুম থেকে দুবাইয়ের বিখ্যাত ঘোড়দৌড়ের ট্র্যাক দেখা যায়। এই আকর্ষণেই বিশ্বের আনাচে-কানাচে থেকে ঘোড়দৌড়প্রেমী ভিড় জমান এই হোটেলে। গতকাল স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় এই হোটেল ছেড়েছে বাংলাদেশ দল।
গতকাল গভীর রাতেই শান্ত-মুশফিকদের রাওয়ালপিন্ডি পৌঁছে যাওয়ার কথা। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে পাকিস্তান অধ্যায়টা কি সুখকর হবে টাইগারদের জন্য? দুবাইয়ের হতাশাজনক পারফরম্যান্সের পর সেটা বেশ কঠিনই। তবে ছয় মাস আগে এই রাওয়ালপিন্ডিতেই পাকিস্তানকে টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করেছিলেন তারা। সেই সুখস্মৃতি আবার আশাবাদীও করে তোলে।
আশা-নিরাশার দোলাচলে থাকলেও প্রথম ম্যাচে ভারতের কাছে হারে বাংলাদেশের সেমির রাস্তা অনেকটাই কঠিন হয়ে গেছে। এখন শেষ চারে খেলতে হলে বাকি দুই ম্যাচ জিততেই হবে। একটি জয় পেলেও সেমিতে ওঠা সম্ভব, তবে সেটা নির্ভর করবে গ্রুপের অন্য ম্যাচগুলোর ফলাফল ও নেট রানরেটের ওপর। সেটা হিসাবের খাতায় তোলা থাকলেও ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের টপঅর্ডার ব্যাটারদের পারফরম্যান্সে ভীষণ হতাশ সমর্থকরা। নোয়াখালীর ছেলে পারভেজ আহমেদ প্রায় ১ হাজার ৭০০ কিলোমিটার নিজে ড্রাইভ করে সৌদি আবর থেকে এসেছেন। কিন্তু তিনি মাঠে ঢুকে গ্যালারিতে ঠিকঠাক আসন গ্রহণের আগেই ৫ উইকেট নেই। এত কষ্ট করে এত আশা নিয়ে এসে দলের ব্যাটিংয়ের এ হাল দেখে হৃদয় ভেঙে গেছে তাঁর।
বাংলাদেশের ইনিংস শেষে স্টেডিয়াম থেকে বাইরে বেরিয়ে এসে হতাশা নিয়ে বসেছিলেন তিনি। টপঅর্ডারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হতাশ তিনি অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ও অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে। প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি করা তাওহিদ হৃদয়ের জন্য খারাপও লাগছে তাঁর। ওই তরুণের বিশ্বাস, জাকের আলীর সঙ্গে টপঅর্ডার থেকে আর কেউ তাওহিদকে সঙ্গ দিতে পারলে একটা ফাইটিং স্কোর হতো। বিসিবি পরিচালক ইফতেখার হোসেন মিঠু তো বাংলাদেশের প্রথম পাঁচ ব্যাটারের আউট দেখতেই পারেননি। গতকাল তিনি নিজেই জানান, তিনি মাঠে ঢোকার আগেই পাঁচজন আউট হয়ে যান।
দুবাইয়ের পাশের শহর আজমান থেকে আসা জাকির হোসেন তো আরও হতাশ। তিনি বাংলাদেশ দলে আমুল পরিবর্তন আনার পক্ষে। সিলেটের এই তরুণ টিম ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্ত নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর মতে, বছরের এ সময়ে দিনের বেলায় কড়া রোদ থাকলেও বিকেল হতেই আবহাওয়া বদলে যায়। হিমেল হাওয়া শুরু হয় এবং শিশির পড়ে। যে কারণে সন্ধ্যার পর বল গ্রিপ করাই কঠিন হয়ে পড়ে। টস জিতেও এই সুবিধা কাজে লাগাতে পারেনি বলে মনে করছেন তিনি। প্রথম ঘণ্টাখানেক পেসাররাও সুবিধা পেয়েছে, সেটাও পায়ে ঠেলেছে টিম ম্যানেজমেন্ট। অথচ শুরুর ওই সময়টা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের টপঅর্ডার ঠিকই গুঁড়িয়ে দেন ভারতীয় পেসাররা। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও গতি তারকা নাহিদ রানাকে বসিয়ে রাখার সিদ্ধান্তেও অবাক অনেকে। এর মধ্যে তরুণ পেসার নাহিদ রানাকে নিয়ে ভারতীয়রা ছিল সবচেয়ে বেশি চিন্তিত। তাঁকে বসে থাকতে দেখে ভারতীয়রা বাঁকা হাসি হেসেছেন।
৮.৩ ওভারে ৩৫ রানে ৫ উইকেট পড়ার পরও বাংলাদেশের রান ২২৮ হওয়ার পেছনে অন্যতম অবদান যাঁর, সেই তাওহিদ হৃদয় কিন্তু আশাবাদী। ষষ্ঠ উইকেটে তাওহিদ ও জাকের ২০৬ বলে রেকর্ড ১৫৪ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশের সংগ্রহকে একটা ভদ্রস্থ জায়গায় নিয়ে যান। হৃদয় সেঞ্চুরি পেলেও জাকের ৬৮ রানে আউট হন। বাংলাদেশের টপঅর্ডারের ব্যর্থতার জন্য দুবাইয়ের মন্থর উইকেটকে দায়ী করেছেন হৃদয়। এই মন্থর উইকেটে ব্যাট করা ভীষণ কঠিন ছিল বলে মনে করছেন তিনি। দলের রান ২৭০ হলে ম্যাচের চিত্র ভিন্ন হতে পারত বলেই মনে করছেন তিনি। আর টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্তও সঠিক ছিল বলে মনে করছেন তিনি। ভারত যে স্বাচ্ছন্দ্যে রান তাড়া করতে পারেনি, সেটাও উল্লেখ করেন হৃদয়। তবে রাওয়ালপিন্ডিতে তারা ঘুরে দাঁড়াবেন বলেই বিশ্বাস হৃদয়ের।
- বিষয় :
- খেলা-ক্রিকেট
- বাংলাদেশ
- ক্রিকেট