সুনামগঞ্জে বাঁশের সাঁকোয় ঝুঁকিপূর্ণ পারাপার

ছাতক (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২২ | ০৭:২৩ | আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২২ | ০৭:২৩
বর্ষায় নদী পারাপারে ব্যবহার হয় নৌকা। শুকনো মৌসুমে পানি কমলে বাঁশের সাঁকোই একমাত্র ভরসা। প্রতিবছর স্থানীয় লোকজন চাঁদা তুলে এখানে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করেন। দেশ স্বাধীনের পর থেকে এ অঞ্চলের জনসাধারণ এভাবেই শত দুর্ভোগ সয়ে যাতায়াত করছেন। ডিজিটাল বাংলাদেশের হতভাগ্য জনগোষ্ঠী সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার খুরমা দক্ষিণ ইউনিয়নের হরিস্মরণ গ্রামের এই বাসিন্দারা।
‘নির্বাচন ঘনিয়ে এলেই এই ঘানোউরা নদীতে সেতু নির্মাণের আশ্বাস মেলে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সেতু তৈরির ওয়াদা করেন, কিন্তু নির্বাচন শেষ হলেই তা ভুলে যান। নির্বাচনের পর কোনো নেতাই খোঁজখবর রাখেন না।’ মনে ক্ষোভ আর কষ্ট নিয়েই কথাগুলো বললেন হরিস্মরণ গ্রামের ৮৫ বছরের বৃদ্ধ শরিয়ত উল্লা। জানালেন, এই নদীতে সেতু নির্মাণের জন্য সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষ একাধিকবার জরিপ ও মাপজোখ করলেও এখানে সেতু নির্মিত হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার খুরমা দক্ষিণ ইউনিয়নের চৌকা থেকে চরমহল্লা ইউনিয়নের নোয়াগাঁও পর্যন্ত সড়কের একটি অংশে ঘানোউরা নদীর অবস্থান। ছাতকের সুরমা নদী থেকে এর একটি শাখা বের হয়ে মহাসিং নদীতে মিলিত হয়েছে। চৌকা- নোয়াগাঁও সড়কে হরিস্মরণ, রামচন্দ্রপুর, হাধনলানী, খরিদিরচর, টেটিয়ারচর, বিহাই, কালিয়ারচর, চৌলারচর, কেজাউরা, গারুচোরা, পুরাকাটি, চেচান, হলদিউরা, জাতুয়া, বাউর, পরেশপুরসহ ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার অন্তত ২০টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন সড়কটি দিয়ে যাতায়াত করে থাকেন।
নদীতে সেতু না থাকায় এই এলাকার চেচান সিপিবি উচ্চবিদ্যালয়, নতুন বাজার বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, সালেহ আহমদ স্কুুল অ্যান্ড কলেজ, মোহাম্মদিয়া ভুইগাঁও মাদ্রাসা, চৌকা প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অসংখ্য ছাত্রছাত্রী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করছে।
ঘানোউরা নদীতীরবর্তী একাধিক লোকজন জানান, নদীতে পানিভর্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত এখানে সাঁকো দিয়ে জনসাধারণ যাতায়াত করেন। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিবাদলের দিনে নদীর দুই তীর ওঠানামা করতে গিয়ে পা পিছলে গিয়ে অনেকেই দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। নদীর পানি বেড়ে গেলে অনেক অভিভাবকই দুর্ঘটনার ভয়ে বিদ্যালয়ে ছেলেমেয়েদের পাঠানো বন্ধ করে দেন। এ ছাড়া সেতু না থাকায় এই অঞ্চলের অসুস্থ রোগী নিয়ে সিলেটে যাতায়াত করতে গেলে চরম ভোগান্তি পেতে হয়।
খুরমা দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কর ছিদ্দিক বলেন, এই এলাকার সাধারণ মানুষের ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে ঘানোউরা নদীতে সেতু নির্মাণ করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। একটি সেতু নির্মিত হলে এলাকার আর্থসামাজিক অবস্থা বদলে যাবে দ্রুত।
উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবু সাদাত মোহাম্মদ লাহিন বলেন, জনসাধারণের ভোগান্তি কমাতে ঘানোউরা নদীতে সেতু নির্মাণে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ কাজ করছে। আশা করছি, এখানে দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতু নির্মাণ করা হবে।
উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল মুনসুর মিয়া বলেন, ঘানোউরা নদীতে একটি সেতু নির্মাণের জন্য সয়েল টেস্ট ও জরিপের কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এটি সিলেট বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত। সেতু তৈরির প্রশাসনিক অনুমোদন পেলেই দরপত্র আহ্বান করা হবে।