‘পোড়া কপালে কত দুঃখ সইতে হবে আমাগোর’

সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ০৬:১৩ | আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ০৬:১৩
কমলা বেওয়ার বয়স ৬৫ বছর ছুঁইছুঁই। মলিন চেহারা। দেখে মনে হলো শরীর যেন চলছে না। চারদিকে ছেলেমেয়েদের কোলাহল; অথচ প্রকৃতির কোনো কিছুই যেন ছুঁতে পারছে না তাঁকে। নির্বিকার বসে আছেন একটি বিদ্যালয়ের বারান্দায়। শুক্রবার বিকেলে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার রেলওয়ে উচ্চ বিদ্যালয়ের বারান্দায় বসে থাকতে দেখা গেছে তাঁকে। এর পাশেই রেলওয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। কমলা বেওয়ার মতো আরও অনেককে দেখা গেল প্রতিষ্ঠান দুটিতে। বাড়িঘরে বন্যার পানি ওঠায় সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন ৭০টি পরিবারের বাসিন্দারা।
পাঁচ বছর আগে মারা গেছেন কমলা বেওয়ার স্বামী হাসমত আলী। তাঁর এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। মেয়ের বিয়ে হয়েছে কয়েক বছর আগে। একমাত্র ছেলেও আলাদা সংসার পেতেছেন। অন্ন-বস্ত্রের জোগান দিতে অন্যের বাড়িতে কাজ করতে হয় কমলা বেওয়ার। বাস্তুভিটা নেই। চুকাইবাড়ী ইউনিয়নের বাদেশশারিয়াবাড়ী গুচ্ছগ্রামে বসবাস তাঁর। সেখানে বানের পানি ওঠায় আশ্রয় নিয়েছেন রেলওয়ে উচ্চ বিদ্যালয়ে। তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর বন্যায় বাড়িঘর প্লাবিত হয়। অচল হয়ে পড়ে জনজীবন। আশ্রয় নিতে হয় অন্যত্র। এ দুঃখ কইবারও নয়, সইবারও নয়। পোড়া কপালে আর কত দুঃখ সইতে হবে আমাগোর?’
বাদেশশারিয়াবাড়ী গুচ্ছগ্রামে বসবাস ৭০টি ভূমিহীন পরিবারের। এলাকাটি নিচু। অল্প বানেই পানি উঠেছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। বাঁচার তাগিদে রেলওয়ে উচ্চ বিদ্যালয় ও রেলওয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন পানিবন্দি গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দারা।
মগর আলী নামে একজন বলেন, প্রতিবছর বাদেশশারিয়াবাড়ী গুচ্ছগ্রাম পানিতে থই থই করে। ঘরে শোবার চৌকিও পানিতে তলিয়ে যায়। বসবাস করা যায় না। তখন বাধ্য হয়ে বাড়িঘর ছেড়ে রেলওয়ে উচ্চ বিদ্যালয় ও রেলওয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিতে হয়। বন্যার পানি বাড়িঘর থেকে না নামা পর্যন্ত সেখানেই পশু-পাখির সঙ্গে গাদাগাদি করে থাকতে হবে তাদের।
গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা সুরুজ্জামানের স্ত্রী মেহেরুন বলেন, ‘আমরা দিন আনি দিন খাই। কাজ না করলে উপোস করতে হয়। বন্যার সময় এমনিতেই কাজ নেই। অভাব-অনটনে জর্জরিত গুচ্ছগ্রামবাসী। তার ওপর প্রতিবছর বন্যায় বাড়িঘর প্লাবিত হওয়ায় দীর্ঘ মেয়াদে আশ্রয় নিতে হয় অন্যত্র। খেয়ে, না খেয়ে দিন যাপন করতে হয়। এ কষ্ট কাউকে বলে বোঝানো যায় না।’
মোজা মিয়া ও মহিজল হক জানান, বাড়িঘর ছেড়ে স্কুলে আশ্রয় নেওয়ার পর চুকাইবাড়ী ইউপি থেকে ১০ কেজি করে কয়েক দফা চাল দেওয়া হয়েছে। আয়-রোজগার বন্ধ। খরচ চালাতে হিমশিত খেতে হচ্ছে।
গুচ্ছগ্রামটির মাটি ফেলে উঁচু করা হলে বন্যার সময় এমন দুর্ভোগ পোহাতে হবে না বলে দাবি করেছেন সেখানকার বাসিন্দা শাহার আলী।
চুকাইবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান রাশেদুজ্জামান সেলিম খানের দাবি, বাদেশশারিয়াবাড়ী গুচ্ছগ্রামের মানুষকে কয়েক দফা চাল দেওয়া হয়েছে। বানভাসি মানুষকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে।
ইউএনও কামরুন্নাহার শেফা জানান, বন্যাদুর্গদের মাঝে এরই মধ্যে পাঁচ টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। প্রয়োজনে ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত থাকবে।
- বিষয় :
- বন্যা
- বন্যায় দুর্ভোগ
- দেওয়ানগঞ্জ