ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

ভোটের রাতে দলবদ্ধ ধর্ষণের সেই ঘটনার রায় পিছিয়েছে

ভোটের রাতে দলবদ্ধ ধর্ষণের সেই ঘটনার রায় পিছিয়েছে

আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়। ছবি: সমকাল

নোয়াখালী প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারি ২০২৪ | ১৭:৩৪ | আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২৪ | ১৭:৩৫

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের রাতে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের করা মামলার রায় পিছিয়েছে। রায় ঘোষণা করা হবে আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি। আজ মঙ্গলবার সকাল সোয়া ১১টার দিকে নোয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক (জেলা জজ) ফাতেমা ফেরদৌস শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। এর আগে গত ২৯ নভেম্বর অধিকতর যুক্তিতর্ক শেষে রায়ের তারিখ আজ মঙ্গলবার ধার্য করেন বিচারক। 

বাদী পক্ষের আইনজীবী মোল্লা হাবিবুর রসুল মামুন তারিখ পেছানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মামলাটি ‘চাঞ্চল্যকর’। এ কারণে মামলার রায় লেখা ও কাজে সময় লাগছে। রায়ের কাজ এখনও শেষ হয়নি। তাই মামলার রায় আজ ঘোষণা করা সম্ভব হয়নি। আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি এ রায় ঘোষণা করা হবে। 

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রাতে স্থানীয় রুহুল আমিন মেম্বারের নেতৃত্বে স্বামী-সন্তানদের বেঁধে ওই গৃহবধূকে (৪০) মারধর ও গণধর্ষণ করা হয়। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রাতে ঘটনাটি ঘটায় তখন দেশে-বিদেশে ব্যাপক আলোচনায় আসে। নির্যাতনের শিকার নারী চার সন্তানের জননী। তার অভিযোগ ছিল, ভোটকেন্দ্রে থাকা ব্যক্তিদের পছন্দের প্রতীকে ভোট না দেওয়ার জেরে এ ঘটনা ঘটে।

ঘটনার পরদিন ৩১ ডিসেম্বর ভুক্তভোগী গৃহবধূর স্বামী বাদী হয়ে চর জব্বর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন। পরে মামলার তদন্ত শেষে সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত প্রচার সম্পাদক রুহুল আমিন মেম্বারসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ পরিদর্শক জাকির হোসেন।  

মঙ্গলবার দিন সকালে এ নিয়ে কথা হয় নির্যাতিত গৃহবধূর স্বামীর সঙ্গে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, তারা বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। কয়েকটি মোটরসাইকেল নিয়ে কতিপয় ব্যক্তি তাদের সামনে মহড়া দিচ্ছে। বিষয়টি তারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও চরজব্বর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবহিত করেছেন। ওসি বলেছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেলে নিরাপত্তা দেওয়া হবে।  

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর ছালেহ আহম্মদ সোহেল খান বলেন, এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ ২৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। আসামি পক্ষের পাঁচজন সাফাই সাক্ষী প্রদান করে। কোনো সাক্ষীই ভোটকেন্দ্রে পছন্দের প্রতীকে ভোট না দেওয়ায় জেরে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে তাদের বক্তব্যে উল্লেখ করেননি। 

মামলায় রুহুল আমিন মেম্বারসহ ১৬ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। ১৫ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে ৮ জন নিজেদের দোষ শিকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। ঘটনার পর থেকে আসামি মো. মিন্টু ওরফে হেলাল (২৮) নামে একজন আসামি পলাতক রয়েছে। মঙ্গলবার রায় ঘোষণা উপলক্ষে আসামিদের জেলখানা থেকে আদালতে হাজির করা হয়। ওই সময় উপস্থিত ছিলেন নির্যাতনের শিকার ওই নারী ও তার স্বামী। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন বাদী ও বিবাদী পক্ষের আইনজীবীরা। 
রায় ঘোষণার নতুন তারিখের বিষয়ে নির্যাতনের শিকার নারীর স্বামী বলেন, ‘আমরা আদালতের কাছে ন্যায় বিচার চাই। আর কিছুই চাই না। তবে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’ 

আদালতে বাদীপক্ষের আইনজীবী ও জেলা বারের সভাপতি মোল্লা হাবিবুর রছুল মামুন বলেন, সুবর্ণচরে নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের সেই আলোচিত ঘটনায় কারাগারে রয়েছে ১৫ আসামি। তাদের মধ্যে ৮ জন আসামি নিজেদের দোষ স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।  

চরজব্বর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম অভিযোগ নাকচ করে বলেন, ‘বিষয়টি কেউ আমাকে জানায়নি।’

আরও পড়ুন

×