ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

কাবিনের পরদিন জাহাজে উঠেন নাবিক সাজ্জাদ, দুশ্চিন্তায় নুপুর 

কাবিনের পরদিন জাহাজে উঠেন নাবিক সাজ্জাদ, দুশ্চিন্তায় নুপুর 

বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ’ (ফাইল ফটো)

সারোয়ার সুমন ও নেজাম উদ্দিন, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ১৩ মার্চ ২০২৪ | ১৯:৫৫ | আপডেট: ১৩ মার্চ ২০২৪ | ২০:৩৬

গত বছরের ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে খালাতো বোন নাজমিন আকতার নুপুরের সঙ্গে কাবিননামা হয় সাজ্জাদ হোসেনের। পরদিন জাহাজে উঠেন নাবিক সাজ্জাদ হোসেন। ফিরে এসে জাঁকজমক আয়োজনে তাদের বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ’র নাবিক সাজ্জাদ হোসেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা ৪৮ মিনিটে বড় ভাই মো. মোস্তাকের হোয়াটসঅ্যাপে সর্বশেষ অডিও বার্তা পাঠান সাজ্জাদ। 

সাজ্জাদ হোসেন জানান, সোমালিয়ান জলদস্যুরা ভারী বন্দুক হাতে এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজে আক্রমণ করেছে। জাহাজে থাকা সবাইকে একটি ক্যাবিনে জিম্মি করে রেখেছে। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন, যেন আপনাদের মাঝে আবারও ফিরে আসতে পারি। মা-বাবা আর নুপুরকে দুশ্চিন্তা করতে নিষেধ করবেন। সবাই ভালো থাকবেন।

ছেলে সাজ্জাদকে উদ্ধারের আকুতি জানিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন বাবা মোহাম্মদ গাজু মিয়া

এ খবর পেয়ে বাবা গাজু মিয়া ও মা শমশেদ বেগম হাউমাউ করে কাঁদছেন। কাবিননামায় আবদ্ধ হওয়া নাজমিন আকতার নুপুর দুশ্চিন্তায় ভেঙে পড়েছেন।

নাবিক সাজ্জাদ হোসেন চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়নের উত্তর বন্দর গ্রামের মো. গাজু মিয়ার ছেলে। ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউটের ৫০তম ব্যাচের ক্যাডেট তিনি।

বড় ভাই মোস্তাক হোসেন বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে সাজ্জাদের জিম্মি হওয়ার খবর জানতে পারি। হঠাৎ তার জিম্মি হওয়ার খবরে পরিবারের সবাই দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। জিম্মি সবাইকে দ্রুত উদ্ধার করে দেশে ফেরত আনার দাবি জানাচ্ছি। 

মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে ভারত মহাসাগরে ‘এমভি আবদুল্লাহ’ জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নেয় অর্ধশত সশস্ত্র জলদস্যু। জাহাজের ২৩ বাংলাদেশি নাবিক ও ক্রুদের জিম্মি করে রেখেছে তারা। তার মধ্যে রয়েছেন চট্টগ্রামের আনোয়ারার তিন নাবিক। জলদস্যুদের হাতে জিম্মির খবরে দুশ্চিন্তা ভর করছে তাদের পরিবার ও আত্নীয় স্বজনদের মাঝে।  

অপর নাবিক শামসুদ্দিন শিমুল সর্বশেষ বার্তায় লিখেন, ২৩ নাবিকসহ আমাদের জাহাজ সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে আটকা পড়েছে। দোয়া করবেন আমাদের জন্য। তিনি বৈরাগ ইউনিয়নের দক্ষিণ বন্দর গ্রামের আইয়ুব আলীর ছেলে। তার দুই মেয়ে রয়েছে। 

নাবিক শামসুদ্দিন শিমুলের বাবা আইয়ুব আলী বলেন, ‘আমার কলিজার টুকরা ছেলে যেন সহিসালামতে থাকে। তাকে আমার বুকে ফিরিয়ে দাও মাবুদ।’

নাবিক আরিফুর রহমান হোয়াটসঅ্যাপে লেখেন, সোমালিয়ান জলদস্যুরা আমাদের জিম্মি করে একটি রুমে তালাবদ্ধ করে রেখেছে। হয়তো একটু পর মোবাইল নেবে। আপনারা কেএসআরএম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে আমাদের উদ্ধার করার ব্যবস্থা করবেন। তিনি বৈরাগ ইউনিয়নের বদলপুরা গ্রামের আকতার উদ্দিনের ছেলে।

বৈরাগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নোয়াব আলী বলেন, একই এলাকার তিনজন নাবিক জলদস্যুদের কবলে পড়ার খবরে এলাকার মানুষ আশঙ্কায় রয়েছেন। আমরা সরকারের কাছে আবেদন জানাই, তাদের যেন দ্রুত উদ্ধার করা হয়।

সম্পর্কিত

আরও পড়ুন

×