ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত কিশোরের মরদেহ হস্তান্তর

সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত কিশোরের মরদেহ হস্তান্তর

ছবি-সমকাল

কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২৪ | ০৪:১৬

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার শিকড়িয়া সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নিহত বাংলাদেশি কিশোর পারভেজ হোসেন সাদ্দামের (১৫) মরদেহ হস্তান্তর করেছে বিএসএফ।

সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে উপজেলার চাতলাপুর চেকপোস্ট জিরো পয়েন্ট দিয়ে ভারতের ত্রিপুরা পুলিশ কুলাউড়া থানা-পুলিশের কাছে লাশ হস্তান্তর করে। নিহত কিশোর পারভেজ হোসেন উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের মুড়ইছড়া বস্তির দশটেকি এলাকার আছকির আলীর ছেলে।

এসময় উপস্থিত ছিলেন কৈলাসহর মহকুমা পুলিশ আধিকারিক জয়ন্ত কর্মকার, কুলাউড়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) কৈশ্যনু, কৈলাসহর ইরানী থানার ওসি যতীন্দ্র দাস, ভারতীয় বিএসএফের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমান্ডেন্ট অমিত কুমার, শরীফপুর আমতলা বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডার আব্দুল মান্নান, কুলাউড়া থানার এসআই বিদ্যুৎ পুরকায়স্থ, কর্মধা ইউনিয়নের মেম্বার সিলভেস্টার পাঠাং ও নিহত কিশোর সাদ্দামের পিতা আছকির আলী।

জানা যায়, রোববার দুপুরের দিকে নিহত পারভেজ হোসেন সাদ্দাম তার পরিবারের গরু চড়াতে পৃথিমপাশা ইউনিয়নের শিকড়িয়া সীমান্তে যান। এসময় ভারতের গৌরনগর ব্লকের মাগুরউলি সীমান্তে ৪৭ নম্বর গেইটের সামনে দিয়ে উভয় দেশের পাচারকারীরা বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী পাচার করছিল। এ সময় বিএসএফ এর ১৯৯ নম্বর ব্যাটেলিয়ানের মাগুরউলি বিওপির সদস্যরা বাঁধা প্রদান করেন। কিন্তু বিএসএফ সংখ্যায় কম থাকায় পাচারকারী প্রায় ২০-২৫ জনের একটি দল তাদের পাচার কাজ চালিয়ে যায়। এসময় বিএসএফের সাথে পাচারকারীদের সংঘাত বাঁধে। সংঘর্ষে মোহন লাল নামে এক বিএসএফ সদস্য আহত হন। এসময় বিএসএফের ধাওয়ায় পাচারকারীরা পালিয়ে যায়। পাচারকারীর অধিকাংশ লোক পালিয়ে গেলেও কিশোর সাদ্দাম সীমান্ত এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়। গুলিবিদ্ধ হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে মৃত্যু হয় কিশোর সাদ্দামের। পরে বিএসএফ তার লাশ সঙ্গে করে নিয়ে যায়। এসময় ছিদ্দিক মিয়া নামে আরেক যুবক গুলিবিদ্ধ হন। স্থানীয় লোকজন ছুটে গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে আনেন। পরে স্বজনরা তাঁকে সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। এদিকে ভারত সীমান্ত থেকে নিহত সাদ্দামের লাশ উদ্ধার করে ঊনকোটি জেলা হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যায় বিএসএফ। 

বাংলাদেশের বিজিবি ও ভারতের বিএসএফ এর মধ্যে সোমবার দুপুর ১২টায় চাতলাপুর চেকপোস্টে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পরে বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটে ভারতের ইরানী থানা পুলিশ বাংলাদেশের কুলাউড়া থানা পুলিশ ও বিজিবির কাছে নিহত সাদ্দামের মরদেহ হস্তান্তর করে। মরদেহ গ্রহণ করেন কুলাউড়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ক্যশৈনু ও এসআই বিদ্যুৎ পুরকায়স্থ। 

নিহত কিশোর সাদ্দামের বাবা আছকির আলীর বলেন, আমার ছেলে সাদ্দাম স্থানীয় হায়দরগঞ্জ স্কুলে সপ্তম শ্রেণীতে পড়াশোনা করে। বর্তমানে স্কুল বন্ধ থাকায় সে মাঝেমধ্যে কৃষিকাজ করে এবং স্থানীয় এলাকায় গরু চড়ায়। ঘটনার দিন দুপুরে আমার ছেলে গরু চড়ানোর সময় সীমান্ত এলাকায় বিএসএফ স্থানীয় কিছু চোরাকারবারীদের ধাওয়া করে গুলি ছুঁড়ে। এসময় আমার ছেলে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর বিএসএফ তাকে ভারতে নিয়ে যায়। 

কুলাউড়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ক্যশৈনু বলেন, দুই দেশের মধ্যে আলোচনার পর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নিহত কিশোর সাদ্দামের লাশ শনাক্ত করা হয়। তারপরে কৈলাসহর পুলিশ কুলাউড়া পুলিশের হাতে মরদেহ তুলে দেয়। পরে কুলাউড়া পুলিশ মরদেহ গ্রহণ করে নিহতের সুরতহাল তৈরি করে তার পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করে। 

আরও পড়ুন

×