‘আমি কি আপনার কামলা দেই’, পরামর্শ চাইতে আসা কৃষককে কর্মকর্তা

ছবি: সংগৃহীত
মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৩ এপ্রিল ২০২৪ | ০৫:১৮ | আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১৪:৩০
বোরো ধানে পোকার আক্রমণের প্রতিকার পেতে এক কৃষক একগুচ্ছ ধান নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন কৃষি অফিসে। তাঁকে গালাগাল করে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার দুপুরে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। এ খবর সংগ্রহে গেলে সাংবাদিকের সঙ্গেও অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন জেলা কৃষি কর্মকর্তা।
ভুক্তভোগী কৃষক শিবালয় উপজেলার উথলী ইউনিয়নের গহেরপুর গ্রামের ফজলুর রহমান জানান, এ বছর ৬০ শতাংশ জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছেন। কিন্তু কিছুদিন ধরে পোকার আক্রমণে তাঁর কচি ধান মরে যাচ্ছে। এতে তিনি খুবই দুশ্চিতায় পড়েন। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাঠ থেকে কৃষি ও কৃষকদের সুবিধা-অসুবিধা দেখার কথা থাকলেও তারা মাঠে যান না ও তাদের পাওয়া যায় না। তাই বাধ্য হয়ে একগুচ্ছ ধান হাতে নিয়ে পরামর্শের জন্য তিনি উপজেলা কৃষি অফিসে যান। অফিসে দেখা হয় ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সালাউদ্দিন সুজনের সঙ্গে। এ সময় তাঁকে ধানগুলোর ছবি তুলে রাখার কথা বলেন এবং জেলার কৃষি অধিদপ্তরের উপপরিচালকের মোবাইল নম্বর চান। এতেই রেগে যান ওই কৃষি কর্মকর্তা। তিনি তাঁর (ফজলুর) সঙ্গে খারাপ আচরণ করে বলেন, ‘আমি কি আপনার কামলা দেই। আপনি কি দেশের প্রেসিডেন্ট হয়ে গেছেন। আপনি বললেই মাঠে যেতে হবে, যা পারেন করেন গা। আপনি বেরিয়ে যান। যদি বয়স্ক লোক না হতেন তাহলে আপনাকে দেখে নিতাম।’ এ সময় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে যোগ দেন অফিসের অন্য স্টাফরাও। এক পর্যায়ে তাঁকে অফিস থেকে বের করে দেওয়া হয়। চোখের পানি মুছতে মুছতে অফিস থেকে বের হয়ে যান তিনি।
কৃষি অফিস থেকে বের হয়ে উপজেলা পরিষদ চত্বরে কৃষক ফজলুর এ ঘটনা দুই সাংবাদিককে জানান। সাংবাদিকরা ফজলুরকে সঙ্গে নিয়ে ফের কৃষি অফিসে যান। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাজিয়া তরফদারের কক্ষে গিয়ে সাংবাদিকরা কৃষকের অভিযোগের বিষয়টি জানান। এ সময় সাংবাদিকদের সামনেই রাজিয়া কৃষকের সঙ্গে ধমকের সুরে কথা বলেন এবং তাঁর আচরণ ঠিক হয়নি বলে ফজলুরকেই অভিযুক্ত করেন। সাংবাদিকরা এর প্রতিবাদ করলে তিনি তাদের ওপর চড়াও হন এবং অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন।
কৃষকের অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাজিয়া তরফদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কৃষকের অভিযোগ শুনেছেন। যদি উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার কোনো দোষ থেকে থাকে, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে সাংবাদিকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সালাহউদ্দিন সুজন বলেন, ওই কৃষক কয়েক গাছি ধান নিয়ে অফিসে আসেন। ধান মাজরাপোকা কাটায় তাঁকে ওষুধ দিতে বলেন। কিন্তু তিনি ডিডি স্যারের নম্বর চান ও বলেন, আপনাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেব। এর পর ওই কৃষক তাদের সম্পর্কে আজেবাজে কথা বলেন। এ ঘটনায় অফিসের অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারী প্রতিবাদ করেন। তাঁকে অফিস থেকে বের দেওয়া হয়নি। তিনি নিজেই চলে গেছেন বলে দাবি করেন এই কর্মকর্তা।
এ ঘটনা জানার পর দুঃখ প্রকাশ করেন শিবালয়ের ইউএনও বেলাল হোসেন। তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন।
মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. রবিআহ নূর আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, কৃষি অফিসের দায়িত্বই হচ্ছে কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে কাজ করা। সেখানে কৃষকের অভিযোগের প্রতিকার না করে অফিসের বাইরে বের করে দেওয়ার ঘটনা খুবই দুঃখজনক। বিষয়টি তদন্ত করে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি জানান, ওই কৃষকের বোরো ক্ষেত দেখতে বুধবার ঘটনাস্থলে জেলা থেকে একজন কর্মকর্তা পাঠানো হবে।
- বিষয় :
- মানিকগঞ্জ
- উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা
- শিবালয়