ঝুঁকিপূর্ণ ১৭ বাঁধ, আতঙ্ক অর্ধলক্ষাধিক মানুষের

দাকোপের পানখালী ফেরিঘাটের পাশে বিলীন হওয়া বেড়িবাঁধ সমকাল
দাকোপ (খুলনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২৪ | ২৩:২৯ | আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২৪ | ১৮:০২
দাকোপের গড়খালী গ্রামের কৃষক খোকন সরদার ও গুনারী গ্রামের শহিদুল মীর কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। ভাঙনের কারণে খরস্রোতা শিবসা নদীতে চলে গেছে তাদের কৃষি জমি ও স্থাপনা। তাদের মতো আরও অনেকের ফসলি জমি, বসতঘর নদীতে বিলীন হয়েছে। তারা বলছিলেন, ভাঙনের শিকার হয়ে জীবিকার সন্ধানে অনেকে চলে গেছেন দেশের বিভিন্ন স্থানে। এখন তারা দুর্যোগ মোকাবিলায় যুগোপযোগী টেকসই বাঁধ চান।
নদীভাঙনের শিকার হয়ে প্রতি বছর বসতঘর, বাড়ি, কৃষি জমি, স্থাপনা, গাছপালা, ভিটেমাটিসহ সহায়-সম্বল হারাচ্ছেন উপজেলার পশুর, শিবসা, ঢাকী ও মাদুর ছড়া নদীপারের মানুষ। দীর্ঘদিনেও ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধগুলো সংস্কার বা বিকল্প বাঁধ নির্মাণ করেনি পাউবো। এতে ১৭টি বাঁধ জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় এলাকার অর্ধলক্ষাধিক মানুষের আতঙ্ক কাটছে না। ঘূর্ণিঝড় আইলা, মহাসেন, ফণি ও রিমালের ক্ষত মুছতে না মুছতেই এবারও স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ থেকে ৬ ফুট উচ্চতায় পানি বেড়েছে নদীতে। এতে জোয়ারের তোড়ে ভাঙন তীব্র হয়েছে।
ভিটেমাটি হারিয়ে সর্বস্বান্ত হওয়া পানখালী গ্রামের প্রীতিষ রায় অশ্রুশিক্ত কণ্ঠে বলছিলেন, ভাঙনের কারণে মানচিত্রে ছোট হয়ে আসছে উপজেলাটি। তাঁর মতো সব হারিয়েছেন খোকন, শ্যামল, গোবিন্দ, জিতেন্দ্র নাথ, দীপক, নিখিলসহ অনেকে। তারা বাঁধের পাশে ঝুপরি ঘর বেঁধে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
সরেজমিন স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ষাটের দশকে নির্মিত ওয়াপদা বেড়িবাঁধগুলো সংস্কার না হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। উপজেলার পাউবোর ৩১ নম্বর পোল্ডারে বেড়িবাঁধের অনেক এলাকা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। পাউবো কর্তৃপক্ষ ৩২ ও ৩৩ নম্বর পোল্ডারে তিন বছর আগে বাঁধ নির্মাণকাজ সম্পন্ন করলেও নদীভাঙনের কারণে অনেক স্থান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলোর বিষয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। না হলে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় যে কোনো বাঁধ নদীতে বিলীন হয়ে প্লাবিত হতে পারে অর্ধশতাধিক গ্রাম।
এরই মধ্যে কয়েকটি স্থানে পাউবো কর্তৃপক্ষ ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ সংস্কার শুরু করেছে। স্থানীয় তিলডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান গাজী জালাল উদ্দিনের ভাষ্য, জোয়ার-ভাটার তোড়ে তাঁর ইউনিয়নের পাঁচ থেকে ছয়টি স্থানের বেড়িবাঁধ অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। এগুলো সংস্কার করা না হলে আবারও আইলার মতো দুর্যোগ নেমে আসতে পারে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম বলেন, ভাঙনের স্থানগুলোতে তদারকির পাশাপাশি সংস্কার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ সব বাঁধে শিগগির কাজ শুরু হবে। ৩১ নম্বর পোল্ডারের বাঁধ নির্মাণে মন্ত্রণালয়ে নকশা ও পরিকল্পনা পাঠানো হয়েছে। শীত মৌসুমে এ কাজ শুরু হতে পারে।
ইউএনও জয়দেব চক্রবর্তী বলেন, উপজেলার বাসিন্দাদের রক্ষায় ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলো দ্রুত সংস্কারের জন্য পাউবোর সঙ্গে কথা হয়েছে। শিগগির যুগোপযোগী ও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণকাজ শুরু হবে।
- বিষয় :
- পানি
- দাকোপ
- ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ