আওয়ামী লীগের অর্ধশত কর্মীর বাড়িতে হামলা

হরিণাকুণ্ডুর লক্ষ্মীপুর গ্রামে ভাঙচুর করা আওয়ামী লীগের এক সমর্থকের বাড়ি সমকাল
হরিণাকুণ্ডু (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৩:৩৪
ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুতে বিএনপি সমর্থকদের হাতে ছাত্রলীগ নেতাকে মারধরের পর কোপানো হয় এক বিএনপি নেতাকে। এর জের ধরে শতাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সমর্থকের বাড়িঘরে লুটপাট চালিয়েছে বিএনপির নেতাকর্মী। গতকাল রোববার ভোরে উপজেলার ভায়না ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর ও বাঁকচুয়া গ্রামে চলে এ লুটপাট। এ সময় অর্ধশতাধিক বাড়িঘরে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। আতঙ্কিত শত শত গ্রামবাসী বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, শনিবার বিকেলে ঘটনার সূত্রপাত ঘটে বাঁকচুয়া লক্ষ্মীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে। সেখানে ভায়না ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক শিখনের ওপর ইউনিয়নের স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি নাসিরুল ইসলাম ও ছাত্রদল সভাপতি রিপনের নেতৃত্বে হামলা হয়। তাঁকে পেটানোর সংবাদে ক্ষিপ্ত আওয়ামী লীগ সমর্থকরা কয়েক ঘণ্টা পর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিন্টু মালিথাকে কোপায়। এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। গতকাল রোববার ভোরে ওই ইউনিয়নের তৈলটুপি, ভায়না, বাগআচড়া, দোবিলা, মালিপাড়াসহ বিভিন্ন গ্রামের কয়েকশ বিএনপি নেতাকর্মী সংঘবদ্ধ হয়ে লক্ষ্মীপুর গ্রামে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের বাড়িঘরে হামলা করে। তারা ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়ে লুটপাট করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বিএনপি নেতাকর্মী শতাধিক আওয়ামী লীগ সমর্থকের ঘরবাড়ি থেকে আসবাব, নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুটে নেয়। অনেকের বাড়ি থেকে গরু-ছাগল পর্যন্ত টেনে নিয়ে যায় বিএনপি সমর্থকরা।
যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন ভায়না ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম। তাঁর ভাষ্য, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর দলের নেতাদের নামে মিথ্যা প্রচারণা নিয়ে কয়েকজন কর্মীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের সমর্থকদের বাগ্বিতণ্ডা হয়। এর জেরে বিএনপি নেতা মিন্টু মালিথাকে কুপিয়ে আহত করা হয়। তাঁর চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত আছেন। কে বা কারা এসব (হামলা) করেছে, সেটি জানেন না।
উপজেলা কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিপুল হোসেনের অভিযোগ, ভোরে বিএনপি সমর্থকরা দেশি অস্ত্র নিয়ে যখন আওয়ামী লীগ সমর্থকদের বাড়িতে হামলা করে, তখন সবাই ঘুমাচ্ছিলেন। নিরীহ আওয়ামী লীগ সমর্থকদের অন্তত অর্ধশত বাড়িতে তাণ্ডব চালানো হয়। শতাধিক বাড়িঘরে লুটপাট করেছে বিএনপি নেতাকর্মীরা।
ভায়না ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা তুষারের ভাষ্য, আওয়ামী লীগ সমর্থকদের বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাটের পরিকল্পনা শনিবার রাত থেকেই চলছিল বলে জানতে পারেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে অনেকবার সেনাবাহিনী, পুলিশ ও প্রশাসনকে জানান। তবে কেউ সেখানে যায়নি।
চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা আরও বলেন, ‘ভোর ৫টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত লক্ষ্মীপুর ও বাঁকচুয়া গ্রামে বাড়িঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট চলে। যদি আগে থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আমাদের কথাকে গুরুত্ব দিত, তাহলে এই তাণ্ডব হতো না।’ আতঙ্কিত শত শত মানুষ বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছেন বলেও জানান তিনি।
স্থানীয় সূত্র জানায়, তাণ্ডবের সংবাদ পেয়ে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সেনাবাহিনীর একটি দল গ্রাম দুটি পরিদর্শন করে। তারা গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে উভয় পক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
হরিণাকুণ্ডু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিয়াউর রহমান বলেন, সংবাদ পেয়ে সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এখন পরিস্থিতি শান্ত। কোনো পক্ষই থানায় মামলা বা অভিযোগ দেয়নি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
- বিষয় :
- ভাংচুর