অভিভাবকহীন রংপুর সিটি

.
স্বপন চৌধুরী, রংপুর
প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৩:৫৬
রোববার সকাল ১০টা। রংপুর সিটি করপোরেশনের দপ্তরপ্রধানরা অনেকে অফিসে আসেননি তখনও। ছুটিতে থাকা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার চেম্বারে চেয়ারে হেলান দিয়ে এসির বাতাস খাচ্ছিলেন অফিস সহায়ক। ততক্ষণে ভিড় বেড়ে যায় সেবা নিতে আসা মানুষের। পরে একে একে কর্মকর্তারা এলেও কাউন্সিলরদের উপস্থিতি নেই। তাছাড়া সিটির প্রশাসক না থাকায় নানা জটিলতায় সেবা না পেয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে অনেককে। নাগরিক ভোগান্তির এমন চিত্র প্রতিদিনের।
করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আদেশে সিটি করপোরেশনগুলোর মেয়রদের অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকে অপসারণ করে বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেনকে প্রশাসকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। গত ১৯ আগস্ট প্রশাসক হিসেবে তিনি যোগ দিলেও নগর ভবনে খুব একটা সময় দেননি। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়। শেষ পর্যন্ত তাঁকেও বদলি করে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ায় অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে রংপুর সিটি। এ ছাড়া কয়েকজন কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। অনেকে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকেই পলাতক। ৪৪ কাউন্সিলরের ২২ জনই অনুপস্থিত। এ অবস্থায় বিভিন্ন বিভাগে কাজের গতি থেমে গেছে। স্থবির হয়ে পড়েছে সিটি করপোরেশনের দাপ্তরিক কার্যক্রম। ব্যাঘাত ঘটছে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডেও।
করপোরেশন সচিব জয়শ্রী রানী রায় জানালেন, ‘অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারকে প্রশাসকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’ তবে আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি এখনও যোগদান না করায় বিষয়টি অনেকটাই গোপন রয়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, সিটি করপোরেশনের জন্মমৃত্যু নিবন্ধকের কার্যালয়ে সেবাগ্রহীতাদের উপচে পড়া ভিড়। অনেকে অনলাইনে আবেদন করে কাগজপত্র জমা দিতে আসেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলরের প্রত্যয়ন না থাকায় জন্মমৃত্যু সনদ না পেয়ে ফেরত যেতে হচ্ছে নাগরিকদের।
২৬ নম্বর ওয়ার্ডের মহাদেবপুর এলাকার উত্তম কুমার বলেন, কাউন্সিলর না থাকায় শিশুর জন্মসনদ মিলল না। ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহজাদা আরমান আত্মগোপনে আছেন। ২০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বিলকিস বেগম সাত দিন ধরে মৃত্যুসনদ নিতে কাউন্সিলরের অফিসে ঘুরছেন। তিনি জানান, কাউন্সিলর তৌহিদুল ইসলামকে পাওয়া যায় না। একই অভিযোগ করেন ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আলতাব হোসেন। তিনি জানান, কাউন্সিলর রফিকুল ইসলামের অফিস বন্ধ। জন্মমৃত্যু নিবন্ধক মোহাম্মদ আলী বলেন, কাউন্সিলরের প্রত্যয়ন না থাকায় সনদ দিতে সমস্যা হচ্ছে। প্রতিদিন অন্তত ২০০ সনদ দেওয়ার কথা থাকলেও এখন তা অর্ধেকে নেমেছে।
সিটি করপোরেশনের সচিব জয়শ্রী রানী রায় চেম্বারে নেই। জানা গেল, তিনি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সভায় আছেন। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতেমার চেম্বারে দেখা গেল, এসি ও ফ্যান ছেড়ে আরাম করছেন অফিস সহায়ক রিপন মিয়া।
প্যানেল মেয়র মাহাবুবার রহমান মঞ্জু জানান, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরদের ওই ওয়ার্ডগুলোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, প্রশাসক না থাকায় ঠিকাদাররা বিল পাচ্ছেন না। বেদখল জমি উদ্ধারে বিলম্ব হচ্ছে। ঠিকাদার খায়রুল কবির রানা জানান, কাজ করেও বিল পাওয়া যাচ্ছে না। বিল তুলতে না পারায় বাকি কাজে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
করপোরেশন সচিব বলেন, কাউন্সিলররা টানা তিন মাসিক সভায় অনুপস্থিত থাকলে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে। জবাব সন্তোষজনক না হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে।
- বিষয় :
- সিটি কর্পোরেশন