ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

সিলেটে কাদের গনি চৌধুরী

সংবাদপত্র হচ্ছে গণতন্ত্রের চোখ

সংবাদপত্র হচ্ছে গণতন্ত্রের চোখ

বক্তব্য দিচ্ছেন বিএফইউজের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

সিলেট ব্যুরো

প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০২৪ | ১৮:৫৩

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন, সংবাদপত্র দৈনন্দিন জীবনের তৃতীয় নয়ন। এর মাধ্যমে আমাদের সামনে ভেসে ওঠে সমগ্র পৃথিবী। সংবাদপত্রের প্রধান কাজ সমাজ জীবনের নানা ত্রুটি-বিচ্যুতি পর্যালোচনা করে পথ নির্দেশ করা। এ জন্য সংবাদপত্রকে ফোর্থ স্টেট বা চতুর্থ রাষ্ট্র বলা হয়। আসলে সংবাদপত্র হচ্ছে- গণতন্ত্রের চোখ। এ চোখ দিয়েই সরকার সমাজের অনেক ভেতর পর্যন্ত দেখতে পায়।

শনিবার বিকেল ৩টায় সিলেট প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে বিএফইউজের সভাপতি সদ্যপ্রয়াত রুহুল আমিন গাজী স্মরণে আয়োজিত শোকসভা ও দোয়া মাহফিলে তিনি এসব বলেন। এর আয়োজন করে সিলেট মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের (এসএমইউজে)। 

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, সংবাদপত্রকে বলা হয় চলমান ইতিহাস। সংবাদপত্রের সাহায্যে চলমান পৃথিবীর বিচিত্র ঘটনার সঙ্গে আমরা সহজে পরিচিত হতে পারি। তাই চলন্ত ইতিহাসের শিক্ষা নিয়ে আমাদের প্রস্তুত হতে হবে সুন্দর আগামীর জন্য। 

তিনি বলেন, বিশ্বায়ন ও অবাধ তথ্য-প্রযুক্তির যুগে মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই গণমাধ্যমের কোনো না কোনো ভূমিকা রয়েছে। মানবসভ্যতার অগ্রগতিতে প্রযুক্তি এবং সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিভিন্ন বিকাশ মিডিয়ার মাধ্যম হয়েছে। জনগণকে সচেতন করার দায়িত্ব মিডিয়ার। জনগণের বাকস্বাধীনতা বিকাশে মিডিয়ার ভূমিকা অপরিসীম। মিডিয়া সরকারসহ বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর সমালোচনা করে তাদের আরও সংশোধনের সুযোগ তৈরি করে দেয়। মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব বিকাশে গণমাধ্যমকে আরও শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে হবে। রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে গণমাধ্যমই পারে নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে। রাষ্ট্রের সবগুলো প্রতিষ্ঠান ব্যর্থ বা নিষ্ক্রিয় হয়ে গেলেও মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে যে প্রদীপ শিখাটি জ্বলতে থাকে, তা হলো গণমাধ্যম।

বিএফইউজের মহাসচিব বলেন, সংবাদপত্র হলো একটা দেশ, সমাজ ও জাতির মুখপাত্র। একটা দেশের জাতি কতটা বাকস্বাধীনতা ভোগ করে তা গণমাধ্যমকে দেখলেই বোঝা যায়। এর জন্য একজন স্বাধীন ও মুক্তমনা সাংবাদিককে তথ্যের জন্য কঠিন ও কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। দুরন্ত ও সাহসী হতে হয়। অনেক সময় সাহসিকতার বা ভয়ের কারণে সত্য নিউজ করতে চায় না। অন্যায়, নিপীড়ন ও দুর্নীতি দেখেও চুপ থাকে। পরিবারের কথা ভেবে অনেকে চুপসে যায়। ফলে সত্য থেকে যায় আড়ালে। প্রকৃতপক্ষে একজন সৎ ও সাহসী সাংবাদিক কখনো সত্যকে আড়াল করতে পারে না। তারা কখনো লোকভয় ও রাজভয় করে না। সব সময় তারা অনুসন্ধানী হয়। দেশ-বিদেশে এমন অনেক সাংবাদিক রয়েছে, যারা সত্য চাপিয়ে যেমন আলোড়ন তৈরি করেছিল, তেমনি জীবনও দিতে হয়েছিল। বব অ্যাডওয়ার্ড, সেন্ড লুইস পেস্ট ডিসপ্যাচ, উইল ফ্রেড ব্রুচেট, পিটার আর্নেস্ট, জন পিটার, এলিজা প্যারিস লডজয়, মার্গারেট ব্রুক হোয়াইটসহ প্রমুখ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকর্মীরা বিখ্যাত হয়ে আছেন সত্য, প্রকাশের জন্য। 

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশেও অনেক দুরন্ত সাহসী সাংবাদিক ছিলেন, যারা ৫২-এর ভাষা আন্দোলন থেকে ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধেও ভূমিকা রেখেছিল। তাদের মধ্যে জহুর হোসেন চৌধুরী, মাওলানা মুহাম্মদ আকরাম খাঁ, আব্দুস সালাম, আবু জাফর, রিয়াজুদ্দিন আহমদ, গিয়াস কামাল চৌধুরীসহ প্রমুখ প্রবীণ ও নবীন গণমাধ্যমের সাহসিকতা হিসেবে অমর হয়ে আছেন। মাহমুদুর রহমান, শফিক রেহমান, রুহুল আমিন গাজী জেল, হামলা-মামলার স্বীকার হয়েছেন, তবুও তারা পিছ পা হননি।

কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. আলিমুল ইসলাম বলেছেন, রুহুল আমিন গাজী ছিলেন একজন আপসহীন সাংবাদিক নেতা। সাংবাদিকদের রুটি-রুজির আন্দোলনে তিনি সব সময় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার মতো এমন সাহসী নেতৃত্ব সাংবাদিক জগতে বিরল। দেশের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব যখনই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে তখনই তিনি বুক চিতিয়ে প্রতিবাদ করেছেন। সর্বশেষ ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সময় অসুস্থ থাকার পরও তিনি রাজপথে নেমে সাংবাদিকদের সাহস জুগিয়েছেন। তার মৃত্যু সাংবাদিকতা জগতে একটি শূন্যতা সৃষ্টি করেছে। 

বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন বলেন, সাংবাদিকদের অন্যতম সর্বোচ্চ এই নেতার মারাত্মক কিডনির সমস্যা ছিল। এরপরও ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকার তাকে গ্রেপ্তার করে ১৭ মাস জেলে রাখে। সেখানে তাকে উপযুক্ত চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হয়নি। চিকিৎসায় অবহেলা করে তাকে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এ জন্য স্বৈরাচার আওয়ামী সরকার এবং ওই সময় দায়িত্বপালন করা কারাগারের জেলার ও চিকিৎসকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা উচিত। তাদের গ্রেপ্তার করে বিচার করতে হবে। 

সিনিয়র সাংবাদিক এনামুল হক জুবেরের সভাপতিত্বে ও এসএমইউজের সাধারণ সম্পাদক খালেদ আহমদের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন  বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, ডিইউজের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির মো. ফখরুল ইসলাম, ইবনে সিনা হাসপাতাল সিলেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান মাওলানা হাবিবুর রহমান ও বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক ডা. শামীমুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য দেন এসএমইউজের  সভাপতি মোহাম্মদ বদরুদ্দোজা বদর। দোয়া পরিচালনা করবেন মাওলানা শাহ মো. নজরুল ইসলাম।

আরও পড়ুন

×