উৎপাদিত ধানের ৩০ শতাংশ ইঁদুরের পেটে

ঈশ্বরদীর মুলাডুলি গ্রামে ইঁদুরের হাত থেকে ফসল রক্ষায় খুঁটিতে কাগজ বেঁধে রাখা হয়েছে সমকাল
সেলিম সরদার, ঈশ্বরদী (পাবনা)
প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ২২:৫৪
‘কৃষি অফিসের পরামর্শে গ্যাস ও বিষ ট্যাবলেট দিয়েও ইঁদুরের কবল থেকে ধান রক্ষা করতে পারছি না। এসব মারতে যখন যে যা বলছে, তাই করছি– তবুও রেহাই পাচ্ছি না। জানি না চার বিঘা জমি থেকে কতটুকু ধান ঘরে তুলতে পারব।’ কথাগুলো ঈশ্বরদীর সাঁড়াগোপালপুরের ধান চাষি তানজিরুল আলমের। ক্ষেতে ইঁদুরের গর্তে কলাগাছ পুঁতে দিচ্ছিলেন মুলাডুলির আরেক কৃষক আব্দুল জব্বার। তিনি বলেন, ‘সব ধরনের কীটনাশক দিয়েও কোনো সুফল পাইনি। একজনের পরামর্শে গর্তে কলাগাছ পুঁতে দিচ্ছি। আমরা ইঁদুরের কাছে হেরে যাচ্ছি।’
ঈশ্বরদীতে এভাবে ধানক্ষেতে ইঁদুরের আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক। চলতি আমন মৌসুমে মাঠে অন্তত ৫ হাজার ৫৬৮ টন ধান ইঁদুরের পেটে চলে গেছে বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, যা উপজেলায় উৎপাদিত ধানের ২০ শতাংশ। যদিও কৃষকরা বলছেন, ইঁদুরের পেটে ২০ নয়, অন্তত ৩০ শতাংশ ধান চলে গেছে। উপজেলার আমন ধান আবাদের প্রধান এলাকা মুলাডুলি, পতিরাজপুর, বাঘহাছলা, অরণকোলা, সাঁড়াগোপালপুরসহ বিভিন্ন স্থান ঘুরে এবং কৃষকদের সঙ্গে আলাপ করলে তারা ইঁদুরের উপদ্রবে এমন ক্ষতির কথা জানান।
কৃষকরা বলছেন, ধানের জমি থেকে ইঁদুর তাড়ানোর নানা কৌশল প্রয়োগ করেও কোনো সুফল পাচ্ছেন না। গত মাসে টানা বৃষ্টিতে অধিকাংশ আমন ধানের ক্ষেত তলিয়ে যায়। তবে দ্রুত পানি নেমে যাওয়ায় ধান ফের দৃশ্যমান হয়েছে। কৃষকের অক্লান্ত পরিশ্রম আর পরিচর্যায় মাঠের সবুজ ক্ষেত সোনালি রং ধারণ করেছে। তবে কষ্টের ফসল ঘরে তোলার আগেই হানা দিয়েছে ইঁদুর।
কৃষি বিভাগের হিসাব মতে, বছরে মোট ফসলের ১৫ শতাংশ প্রতিবছর ইঁদুরের পেটে যায়। যদিও সাধারণ কৃষকরা বলেছেন, এ তথ্য সঠিক নয়। মোট ফসলের ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ নষ্ট করছে এ প্রাণী। মুলাডুলি গ্রামের কৃষক মো. মিনাজ আলী বলেন, ‘আমি সাড়ে সাত বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। এবার অসময়ে অতিবৃষ্টি থেকে ধান রক্ষা করতে পারলেও ইঁদুরের কবল থেকে রক্ষা করতে পারছি না। আমার একাধিক জমির প্রায় অর্ধেক ধান ইঁদুর কেটে সাবাড় করেছে। কাটার উপযোগী না হওয়ায় কাটতেও পারছি না।’
ইঁদুরের আক্রমণের ক্ষোভ থেকে আধাপাকা ধান কাটা শুরু করেছেন বাঘহাছলার কৃষক নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, দোকান থেকে নানা ধরনের ইঁদুর মারা বিষ থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপায়ও অবলম্বন করেছেন। তবুও এর হাত থেকে ফসল রক্ষা করা যাচ্ছে না। জমিতে কলা পাতা পেতে দিয়েছেন, পলিথিন দিয়ে ঢেকেছেন, তবুও জমির প্রায় অর্ধেক ধান কেটে নষ্ট করেছে ইঁদুর। বাধ্য হয়ে আধাপাকা ধান কেটে নিচ্ছেন। তাঁর ভাষ্য, ভাগ্যে যা আছে তাই হবে।
উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি আমন মৌসুমে এ অঞ্চলের প্রায় ২০ শতাংশ ধান কেটে নষ্ট করছে ইঁদুর, যার পরিমাণ ৫ হাজার ৫৬৮ টন। এ মৌসুমে আমন ধানের চাষ হয়েছে ৩ হাজার ৬৬৩ হেক্টর জমিতে। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৭ হাজার ৮৩৯ টন। এর মেধ্য ২০ শতাংশ নষ্ট করেছে ইঁদুর।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার বলেন, এই এলাকায় ইঁদুরের অত্যাচার তুলনামূলক বেশি। এ বছর ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ধান কেটে নষ্ট করছে, যা কৃষকদের বড় ক্ষতি। এর হাত থেকে ফসল রক্ষায় নানান পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, এ অঞ্চলের কৃষকদের ইঁদুর মারার জন্য পুরস্কৃতও করা হয়। এ প্রাণী মারতে বিষ ট্যাবলেট, বিষ টোপসহ নানান উপকরণ ও পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।
- বিষয় :
- ফসল