ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

স্বামীর অবৈধ আয়ে কোটিপতি স্ত্রী

স্বামীর অবৈধ আয়ে কোটিপতি স্ত্রী

.

 আহমেদ কুতুব, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ২২ নভেম্বর ২০২৪ | ২৩:২২

রেলের সাবেক কর্মকর্তা হাবিবুর রহমানের অবৈধ আয়ে কোটিপতি তাঁর স্ত্রী মালা রহমান। ঢাকায় তাঁর নামে কিনেছেন আলিশান ফ্ল্যাট। রেলওয়ে লুটের অর্থ বৈধ করতে গৃহিণী স্ত্রীকে বানিয়েছেন ব্যবসায়ী। এক বছরে ব্যবসা থেকে ৪৩ লাখ আয় দেখালেও কথিত ব্যবসায়ী এই গৃহবধূর নেই কোনো দৃশ্যমান ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ব্যবসায়িক লেনদেন কিংবা আয়-ব্যয়ের কোনো দলিলও নেই তাঁর কাছে। তবুও তিনি এখন কোটিপতি।
বাংলাদেশ রেলওয়ের এডিজি (অপারেশন) হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে কম দামে ট্রেন ইজারা, নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম ভাড়া আদায়সহ রেলওয়েতে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ নয়ছয় করে আত্মসাৎ করার অভিযোগ অনুসন্ধান করতে গিয়ে কোটিপতি স্ত্রীর অবৈধ সম্পদের সন্ধান পায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ দম্পতি এখন ঢাকার বনশ্রীর যে ফ্ল্যাটে থাকেন, তার দামও কোটি টাকার ওপরে। রেলওয়ের এ কর্মকর্তা দুর্নীতির মাধ্যমে স্ত্রীকে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক বানানোর চিত্র উঠে আসে দুদকের তদন্তে।
দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর উপপরিচালক মো. নাজমুজ্জাদায়াত বলেন, রেলওয়ের এডিজি হাবিবুর রহমানের কর্মক্ষেত্রে অনিয়ম ও দুর্নীতি খুঁজতে গিয়ে স্ত্রীর নামে বিপুল জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য-উপাত্ত পেয়েছি। তাঁর অবৈধ আয় বৈধ করতে স্ত্রীকে ব্যবসায়ী সাজালে দুদকের তদন্তে ব্যবসা-সংক্রান্ত কোনো নথিপত্র দেখাতে পারেননি।
রেলের সাবেক কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, আমি এখন অবসরে আছি। আমার বিরুদ্ধে কম দামে ট্রেন ইজারা, নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম ভাড়া আদায়সহ রেলওয়ের অর্থ আত্মসাৎ ও দুর্নীতির অভিযোগ সত্য নয়। আমি সৎভাবে চাকরি করেছি। আমার স্ত্রী বৈধভাবে ব্যবসা করে কোটিপতি হয়েছেন। আদালতে আমরা তা প্রমাণ করে দেব।
রেলওয়ের এ কর্মকর্তা আগে পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ে চট্টগ্রামের সিসিএম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি ঢাকার বনশ্রী আবাসিক এলাকার বাসিন্দা। তাঁর বাড়ি মাদারীপুরের হোগলাপাতিয়া এলাকায়। 
রেলের এডিজি হিসেবে চাকরিরত অবস্থায় কম দামে ট্রেন ইজারা দেওয়া এবং নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম ভাড়া আদায় দেখিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাৎসহ দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে। তার পর দুদক ২০২০ সালে তাঁর দুর্নীতির প্রাথমিক অনুসন্ধান শুরু করে। হাবিবুর রহমানসহ রেলের কয়েকজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-সংবলিত ২৭ পাতার অভিযোগ আমলে নেয় দুদক। এসব অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে তা তপশিলভুক্ত করার পর দুদকের কমিশন সভায় দুর্নীতিবিরোধী ‘রেলওয়ে সংক্রান্ত প্রাতিষ্ঠানিক টিমের’ মাধ্যমে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। ২০২০ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি হাবিবুর রহমানের সম্পদ বিবরণী দাখিলের আদেশ জারি হয়। তাঁর নিজ ও স্ত্রীর নামে অর্জিত যাবতীয় স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ আয়ের উৎস দুদকে দাখিল করতে বলা হয়। দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে স্ত্রী মালার নামে ৪৭ লাখ টাকার স্থাবর ও ২০ লাখ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ ৬৭ লাখ টাকার সম্পদের কথা উল্লেখ করেন।
দুদক সরেজমিন তদন্ত করে মালার নামে কোনো ঋণ ও দায়-দেনা থাকার তথ্য পায়নি। ওই গৃহবধূ ২০১৫-১৬ অর্থবছরে কর পরিশোধ করে ৪৩ লাখ টাকা আয় প্রদর্শন করেন। ২০১৪ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত আট বছরে ব্যবসা করে ১৪ লাখ ২৮ হাজার টাকা, ফ্ল্যাট ভাড়া বাদ ৭ লাখ ৫৬ হাজার টাকা এবং ফ্ল্যাট বিক্রয়ের বায়না বাবদ ১৫ লাখ টাকা আয় দেখান। কিন্তু দুদক তদন্ত করে তাঁর ৪৩ লাখ টাকা আয়ের সপক্ষে কোনো দালিলিক রেকর্ডপত্র পায়নি। দৃশ্যমান কোনো ব্যবসাও খোঁজে পাওয়া যায়নি। অসাধু উপায়ে অর্জিত অর্থ দিয়ে ফ্ল্যাটটি ক্রয় করেছেন বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করে দুদক। 
মালার ৬৭ লাখ ১৩ হাজার টাকার সম্পদের মধ্যে অতীত সঞ্চয় ৫ লাখ টাকা এবং ব্যাংক সুদ ৪৩ হাজার টাকার বৈধ আয়ের উৎস পাওয়া যায়। বিপরীতে তাঁর চাকরিজীবী স্বামী হাবিবুর অসাধু উপায়ে অর্জিত অর্থ দিয়ে নিজ নামে ৬১ লাখ ৫৬ হাজার টাকা জ্ঞাত আয় অর্জন করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়। ঢাকা ছাড়াও গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরে নামে-বেনামে বিপুল অবৈধ সম্পদের মালিক বনে গেছেন তারা।

আরও পড়ুন

×