মিষ্টিকুমড়ার ভালো ফলনেও হতাশা

চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটে এবার মিষ্টিকুমড়ার রেকর্ড পরিমাণ আবাদ হয়েছে। চাহিদা না থাকায় ও দাম না পেয়ে হতাশ চাষিরা সমকাল
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২৫ | ০০:৪৭
চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলায় কয়েক বছর ধরে মিষ্টিকুমড়া ফলিয়ে লাভবান হচ্ছিলেন কৃষক। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও হয়েছে ভালো। বাজারে শীতকালীন সবজির প্রাচুর্য থাকায় লোকসানের মুখে পড়েছেন মিষ্টিকুমড়া চাষিরা। বিক্রি করতে না পারায় অনেকে খেতেই ফেলে রাখছেন ফসল।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় মিষ্টি কুমড়ার চাষ হয়েছে ১ হাজার ৬শ হেক্টর জমিতে। গত বছরের থেকে এবার ৭শ হেক্টর বেশি জমিতে মিষ্টিকুমড়ার আবাদ করেছেন কৃষকরা।
সরেজমিন দেখা যায়, ভোলাহাটের তালপল্লি থেকে ফলিমারি রাস্তার দুই পাশে মিষ্টিকুমড়া স্তূপ করে রেখেছেন চাষিরা। আগে জমি থেকে বিক্রি হয়ে গেলেও এখন আর বিক্রি হচ্ছে না। অনেককে রাস্তার পাশে অস্থায়ী বাজার করে মিষ্টিকুমড়া বিক্রি করতে দেখা গেছে। কয়েকজন কৃষক জানালেন, মৌসুমের শুরুতে মিষ্টিকুমড়া ১২-১৪শ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে ৪-৫শ টাকা মণ দরেও বিক্রি করতে বেগ পেতে হচ্ছে চাষিকে।
মিষ্টিকুমড়া চাষি মো. শরিফুল ইসলামের ভাষ্য, তিনি গত বছর এক বিঘা জমির মিষ্টিকুমড়া বিক্রি করে ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা লাভ
করেছিলেন। এবার এক বিঘা জমিতে প্রায় ২৫ হাজার টাকা খরচ করে মিষ্টিকুমড়া চাষ করেছেন। সময়মতো বীজ না পাওয়ার কারণে আবাদ
করতে দেরি হয়েছে। দেরিতে ফলন পাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন তিনি। বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন সবজি বাজারে আসার কারণে মিষ্টিকুমড়ার দাম পড়ে গেছে।
৪৫ বিঘা জমিতে মিষ্টিকুমড়া চাষ করেছিলেন জানিয়ে আব্দুস সামাদ নামে এক চাষি বলেন, মৌসুমের শুরুতে ১৪শ টাকা মণ দরে মিষ্টিকুমড়া বিক্রি করেছেন। এখন ৫শ টাকা মণ দরেও বিক্রি করতে পারছেন না।
আরেক কৃষক মো. হুসেন আলী বলেন, তিনি এবার ৫৫ বিঘা জমিতে মিষ্টিকুমড়া চাষ করেছেন। প্রথম দিকে জমিতেই পাইকাররা ১ হাজার টাকা মণ দরে কিনে নিয়েছেন। এখন কেউ কিনতে আসছেন না। জমিতে বোরো ধান আবাদ করতে শ্রমিক দিয়ে খেত পরিষ্কার করেছেন। এখন রাস্তার পাশে মিষ্টিকুমড়া পড়ে আছে, পাইকার নেই।
কয়েকজন সবজি পাইকারের ভাষ্য, এলাকা থেকে মিষ্টিকুমড়া কিনে তারা ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করেন। টাকা খরচ করে ঢাকায় নিয়েও বিক্রি করতে পারছেন না। শীতের সবজির দাম কমে যাওয়ায় বর্তমানে তারা কুমড়া আর কিনছেন না।
সবজির পাইকার মো. মাসুদ বলেন, তিনি আগে ১৫শ টাকা মণ দরে মিষ্টিকুমড়া কিনেছেন। এখন কৃষকের কাছ থেকে ৪০০ টাকা মণ কিনতে পারলেও বাজারে চাহিদা না থাকায় কেনা বন্ধ রেখেছেন। বাম্পার ফলনের কারণে ফুলকপি চাষিদের মতোই লোকসানে মিষ্টিকুমড়া চাষিরা।
ভোলাহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সুলতান আলী বলেন, বাজারে জোগান বেশি হওয়াতে স্বাভাবিকভাবে সব ধরনের শীতকালীন সবজির দাম কমে গেছে। ভোলাহাটে মিষ্টিকুমড়ার উৎপাদন ভালো হওয়ায় দাম কমেছে। পরিপক্ব মিষ্টিকুমড়া আগামী ছয় মাস পর্যন্ত ভালো থাকবে। এটি সংরক্ষণ করে রেখে কয়েক মাস পরে বিক্রি করলে কৃষক ভালো দাম পাবেন।
- বিষয় :
- সবজি