তিলকপুরের দুঃখ ঘুচল কি

আক্কেলপুরে রোববার ক্রিকেট টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়া মেয়েরা সমকাল
আক্কেলপুর (জয়পুরহাট) সংবাদদাতা
প্রকাশ: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ০০:৩৩
আক্কেলপুরের তিলকপুরে মেয়েদের এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয়ে দুই জেলার ক্রিকেট দলের খেলার আয়োজন করা হয়েছিল। প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়। এতে বাদ সাধেন স্থানীয় কিছু লোক। মাঠে ভাঙচুর চালালে খেলা বন্ধ হয়ে যায়। এ নিয়ে দেশব্যাপী প্রতিবাদের ঝড় উঠলে ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চান হামলাকারীরা। পরে একই উপজেলার আরেক মাঠে হয়ে গেল মেয়েদের ব্যাট-বলের জমজমাট লড়াই।
উপজেলায় তারুণ্যের উৎসবের অংশ হিসেবে নারী (প্রমীলা) ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়েছে। গতকাল রোববার এ আয়োজন করে উপজেলা প্রশাসন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর মূল উদ্দেশ্য নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নারীদের এগিয়ে নেওয়া। সরকারি ফজর উদ্দিন পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনূর্ধ্ব-১৭ বালিকা গ্রুপের এ খেলায় অংশ নেয় দুই দল।
গোপীনাথপুর ইউনিয়নের ভানুরকান্দা উচ্চ বিদ্যালয় ও পৌরসভার আক্কেলপুর সরকারি ফজর উদ্দিন পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় দলের মধ্যে খেলা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৯ উইকেটে ৯ বল হাতে রেখে ভানুরকান্দা উচ্চ বিদ্যালয় দল চাম্পিয়ন হয়েছে। তারুণ্যের উৎসব উপলক্ষে নারীদের বিভিন্ন প্রতিযোগিতা গত ৩০ নভেম্বর শুরু হয়েছে, চলবে ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
সরকারি ফজর উদ্দীন উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী রিমা তাসনিম মহিনীর ভাষ্য, ‘আমরা ক্রিকেট দলকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। আমরা চাই, আরও বড় পর্যায়ে খেলতে। নারীরা পেছনে থাকবে না, নারীরাও এগিয়ে যাবে।’ একই বিদ্যালয়ের জান্নাতুন ফেরদৌস বলছিল, ‘আমরা পড়াশোনার পাশাপাশি ক্রিকেট খেলে দেশকে এগিয়ে নিতে চাই।’
স্থানীয় বাসিন্দা শাহিনুর রহমানের মেয়ে প্রমীলা ক্রিকেট টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, খেলায় মেয়েরা আন্তর্জাতিকভাবে সাফল্য অর্জন করছে। স্থানীয়ভাবে প্রশাসনের সহযোগিতায় খেলাধুলা আয়োজনের কারণে তাদের মধ্যে আগ্রহ বাড়ছে।
জানা গেছে, গত ২৯ জানুয়ারি জয়পুরহাট ও রংপুর নারী দলের ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনের কথা ছিল। মাইকিং করে প্রচারও করেন আয়োজকরা। এতে স্থানীয় ‘আলেম সমাজ ও মুসল্লিরা’ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তারা আগের দিন ২৮ জানুয়ারি বিকেলে উপজেলার তিলকপুর রেলস্টেশনের সামনে স্বাধীনতা চত্বরে জড়ো হয়ে নারীদের খেলা নিয়ে আপত্তি তুলে বক্তব্য দেন। এর পর সেখান থেকে গিয়ে খেলার মাঠের টিনের বেড়া ভাঙচুর করেন।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ নিয়ে সংবাদ প্রচার হলে সরকার এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত দল গঠন করা হয়। এ নিয়ে গণশুনানি হলে অনুতপ্ত হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন তিলকপুরের বিভিন্ন মসজিদের ইমাম, স্থানীয় বাচ্চাহাজি মাদ্রাসার সহকারী পরিচালকসহ স্থানীয় আলেমরা।
গোপীনাথপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক ও টুর্নামেন্ট আয়োজক কমিটির সদস্য আব্দুল বাছেদ বলেন, মেয়েরা খেলাধুলায় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সম্মান বয়ে আনছে। লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা শরীর ও মন ভালো রাখে।
ইউএনও মনজুরুল আলম বলেন, উপজেলার নারী খেলোয়াড়রা বাধাহীনভাবে দেশের সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখবে। তিলকপুরে খেলার মাঠে নিছক ভুল বোঝাবুঝি থেকে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। তারা ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চাওয়ায় সেটি ইতোমধ্যে সমাধান হয়েছে।
- বিষয় :
- দুঃখ প্রকাশ