গুলি ছুঁড়ে ব্রহ্মপুত্রে আবারও নৌ ডাকাতি

ছবি-সমকাল
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ০১:৪০
কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ১০ দিনের ব্যবধানে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ও গুলি ছুঁড়ে ব্রহ্মপুত্র নদে আবারও নৌ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে টানা তৃতীয় বারের মতো নৌ ডাকাতির ঘটনা ঘটল।
রোববার দুপুর ৩টার দিকে উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের কড়াইবরিশাল নৌ-ঘাটে এ ঘটনা ঘটে।
এতে দুটি নৌকার যাত্রী ও ৬ থেকে ৭ জন গরু ব্যবসায়ীর প্রায় ৪ লাখ টাকা ছিনতাই করে নিয়েছেন ডাকাতরা। এ সময় মো. মোসলেম ও আমিনুল ইসলাম নামে দুই জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
ডাকাতির শিকার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কড়াই বরিশাল খেয়া ঘাটের কাছে দুটি যাত্রীবাহী নৌকায় ডাকাতরা হামলা করে। নৌকা দুটি রাজিবপুরের কোদালকাটি ও পাখিউড়া থেকে চিলমারীর উদ্দেশে আসছিল। মাঝপথে যাত্রী নেওয়ার জন্য কড়াইবরিশাল খেয়া ঘাটে ভিড়লে সেখানেই আক্রমণ করে ডাকাতদল। তারা গুলি ছুঁড়ে নৌকায় থাকা যাত্রী ও গরু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কয়েক লক্ষ টাকা ডাকাতি করে চলে যায়।
নৌকার মাঝি মোসলেম উদ্দিন বলেন, ‘খেয়া ঘাটে গরু ব্যবসায়ীদের নৌকা ছিল। ওদের নৌকায় ডাকাতি করতে আইসা আমার নৌকাতেও ডাকাতি করে। ১০ থেকে ১৫ জন ছিল। দুই নৌকা থাইকা টাকা লুট কইরা ডাকাতরা চইলা যায়। আমরা কিছু করতে পারি নাই।’
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মাঝি মোসলেম আরও বলেন, ‘ডাকাতরা একটা গুলি করছে। ওদের হাতে বেকিও ছিল। আমার কাছে তিন যাত্রীর ৫৭ হাজার টাকা আছিল। আমাক বারি (আঘাত) দিয়া সেটা কাইরা নিছে। কয়েকজন যাত্রীর কাছেও টাকা নিছে। গরুর ব্যাপারিগো টাকাও কাইরা নিছে। ওগো অনেকে পানিত লাফ দিছে। পাশে পোশাক পড়া তিনজন পুলিশ আছিল। কিন্তু তারা আগায় আহে নাই।’
কড়াইবরিশাল এলাকার ইসহাক নামে এক নৌকা যাত্রী বলেন, ‘দুইটি নৌকায় যাত্রী ও গরু ব্যবসায়ীদের থেকে ৪-৫ লাখ টাকা ছিনতাই করে নিয়ে গেছে। পরে কাছে গিয়ে দেখি অনেকে পানিতে লাফ দিছে। সাথে থাকা টাকা পানিতে ভিজে গেছে।’
কড়াইবরিশাল এলাকার বাসিন্দা আজম মিয়া জানান, ‘গুলির শব্দ ও যাত্রীদের চিৎকারে ঘাটের কাছে থাকা স্থানীয় লোকজন এগিয়ে যান। তারা নৌকা নিয়ে ডাকাতদের ধাওয়া করেন। কিন্তু ততক্ষণে ডাকাতরা পালিয়ে যায়।’
ভুক্তভোগী গরু ব্যবসায়ীদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ‘ডাকাতরা গরু ব্যবসায়ীদের কয়েক লাখ টাকা লুট করেছে। আমরা ধাওয়া করলেও পুলিশ কোনো ভূমিকা নেয়নি। তারা অন্তত ফাঁকা গুলি করলেও ডাকাতদের ধরা যেত।’
আহত গরু ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলামের স্ত্রীর ছোট বোন সাবিনা খাতুন বলেন, ‘ডাকাতের রাম দায়ের আঘাতে আমার বোন জামাই গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুড়িগ্রাম হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
ডাকাতির ঘটনায় চিলমারী নৌ পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সেলিম সরকারকে একাধিকবার ফোন করেও কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
চিলমারী থানার অফিসার ইনচার্জ মোশাহেদ খান জানান, নৌ পথ নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশের ৩ সদস্য পাঠানো হয়েছিল। ডাকাতির ঘটনাস্থল থেকে তারা দূরে ছিলেন। স্থানীয়রা ভুলবুঝে পুলিশ সদস্যদের আটকে রাখে। পরে চিলমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলামের সহযোগীতায় তাদের ছাড়িয়ে আনা হয়েছে।
এর আগে, গত ২৯ জানুয়ারি কড়াইবরিশাল এলাকার পশ্চিমে ব্রহ্মপুত্র নদে যাত্রীবাহী নৌকায় ডাকাতির ঘটনা ঘটে। তারও আগে গত বছর ২১ ডিসেম্বর চিলমারীর অষ্টমীরচর ইউনিয়নের দুইশ বিঘার চরের কাছে নৌ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ১৬-১৭ জনের ডাকাত দল ‘পিস্তল’ ও দেশি অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের জিম্মি করে যাত্রীদের সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে চলে যায়। একের পর এক ডাকাতির ঘটনায় যাত্রীদের কাছে এই নৌ পথ যাত্রা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে।
- বিষয় :
- ডাকাতি
- ব্রহ্মপুত্র নদ
- পুলিশ
- রংপুর
- কুড়িগ্রাম