ঢাকা বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

ধারদেনায় ডুবতে বসেছেন সমুদ্রগামী জেলেরা

নিষেধাজ্ঞার ৩৭ দিনেও সহায়তার চাল মেলেনি লক্ষ্মীপুরে

ধারদেনায় ডুবতে বসেছেন সমুদ্রগামী জেলেরা

নিষেধাজ্ঞার কারণে অফুরন্ত অবসর। তাই জাল মেরামত করছেন জেলেরা। বুধবার সকালে কমলনগরের উপজেলার নাসিরগঞ্জ এলাকায়

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২১ মে ২০২৫ | ২২:৪৭

সাগরে মাছ ধরার ওপর ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলছে। এর এক মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও সরকারি খাদ্য সহায়তার চাল পাননি লক্ষ্মীপুরের জেলেরা। জেলার পাঁচটি উপজেলার মধ্যে চার উপজেলায় সমুদ্রগামী নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ২০ হাজার ১৫ জন। তাদের জন্য ১ হাজার ১২০ টন চাল বরাদ্দ হয়েছে। প্রশাসনিক জটিলতায় তা হাতে না পৌঁছায় চরম অনিশ্চয়তা ও কষ্টে দিন পার করছেন এসব জেলে। 

বুধবার জেলার রায়পুর উপজেলার চরবংশী, সদর উপজেলার চর রমণীমোহন, কমলনগরের চর লরেন্স, পাটোয়ারিরহাট, মাতাব্বরহাট ও নাসিরগঞ্জ; রামগতির চর আলেকজান্ডার ও বিবিরহাট ঘুরে দেখা গেছে, সাগরে নামতে না পারায় অলস বসে আছেন শত শত জেলে।

কেউ কেউ ফিশিং বোট থেকে জালসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন। আবার কেউ বোট মেরামত করছেন। সাগরে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা মেনেই তীরে ফিরে এসেছেন। এখন মাছ ধরতে না পারায় তাদের ঘরে চালও নেই। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। প্রতি বছরই নিষেধাজ্ঞার সময় তারা খাদ্য সহায়তা পান। এ বছর নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে ১৫ এপ্রিল। এর এক মাস সাত দিন হলেও তাদের ঘরে পৌঁছায়নি সরকারি চাল।

এমন অবস্থায় তিন ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে সংসার চালাতে ধারদেনায় ডুবতে বসেছেন চর লরেন্সের আবু সাঈদ (৪৫)। তিনি বলেন, ‘জেলে কার্ড আছে, নামও আছে তালিকায়; কিন্তু চাল পাই না। সরকার যে সহায়তার কথা বলে, তা কবে আসবে আমরা জানি না। ধারদেনা করে সংসার চালাই। তাও আর কত?’

‘সরকারের কাছ থেকে এখনও কিছুই পাইনি। ধারদেনা করে চলতে হচ্ছে। বাচ্চাদের মুখে খাবার তুলে দিতে পারছি না।’ বলতে বলতে একই এলাকার জেলে মো. জহিরের স্ত্রী বিবি লাইজুর কণ্ঠে অসহায়ত্ব ধরা পড়ে। তাঁর ছেলে রাব্বি (১৮) ও নাহিদ (১৫) দু’জনই বাবার সঙ্গে মাছ ধরার পেশায় আছে ছোটবেলা থেকে। এক মাস পরও চাল না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বিবি লাইজু বলেন, ‘কীভাবে সংসার চালাব বুঝে উঠতে পারছি না। পানি বাদে সব কিছুই কিনে খেতে হয়। কাজ না করলে টাকাও মেলে না, এদিকে মাছ ধরা বন্ধ। 

নিষেধাজ্ঞার ৫৮ দিনের মধ্যে ৩৫ দিনের বেশি পার হয়েছে; কিন্তু কিছুই জুটল না।’

হারুন মাঝি নামের আরেক জেলে বলেন, আগে বন্ধের কয়েক দিনের মধ্যেই চাল পেতেন। এখন ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞার অর্ধেকের বেশি কেটে গেছে। এখনও কিছুই পাননি। খুব কষ্টে জীবন কাটাচ্ছেন। সঙ্গে জেলে আজগর মাঝি যোগ করেন, ঈদ আসছে সামনে। হাতেও কোনো টাকা নেই।

সরকার যদি দ্রুত চাল না দেয়, তাহলে না খেয়ে মরতে হবে– বলেন কমলনগরের জেলে সিরাজ মাঝি। কিন্তু কবে সে চাল পাবেন, সে খবরও নেই কারও কাছে। সব জেলেকেই তাঁর মতো সংসার চালাতে বেগ পেতে হচ্ছে বলেও জানান। 

জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্যমতে, রায়পুর, রামগতি, কমলনগর ও সদরে সমুদ্রগামী নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ২০ হাজার ১৫ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৭ হাজার ৮৬০ জনের বাড়িই রামগতিতে। এ ছাড়া কমলনগরের ১ হাজার ৮১৫ জন, রায়পুরে ২২০ জন ও সদরে ১২০ জন আছেন তালিকায়। 

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, জেলেদের জন্য এবার ১ হাজার ১২০ টন খাদ্য সহায়তা বরাদ্দ হয়েছে। কিছু প্রশাসনিক কারণে পৌঁছাতে দেরি হচ্ছে। ঈদুল আজহার আগেই বিতরণের আশা করছেন। 

আরও পড়ুন

×