বরগুনার পাথরঘাটা
২০ ঘণ্টা অবরুদ্ধ কোস্টগার্ড স্টেশন

ছবি: সংগৃহীত
বরিশাল ব্যুরো ও পাথরঘাটা (বরগুনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৯ জুন ২০২৫ | ০৪:২৬
ট্রলিং ট্রলার আটকের জেরে বরগুনার পাথরঘাটায় অবস্থিত কোস্টগার্ড স্টেশনে কর্মকর্তাদের ২০ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন জেলে, মাছ ব্যবসায়ী ও স্থানীয় লোকজন। গতকাল বুধবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) আয়োজনে দু’পক্ষের মধ্যে দিনভর বৈঠক হয়। এতে তারা সমঝোতায় পৌঁছানোর পর বিকেল ৫টার দিকে অবরোধকারীরা কোস্টগার্ড স্টেশন এলাকা ছেড়ে যান। মঙ্গলবার রাত ৯টা থেকে সেখানে অবস্থান করছিলেন তারা।
এ ঘটনায় দুই পক্ষ পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তুলেছে। কোস্টগার্ড কর্মকর্তাদের দাবি, অবৈধ ট্রলিং ট্রলার আটক করায় মাছ ব্যবসায়ী ও ট্রলার মালিকদের উস্কানিতে জেলেরা হামলা করেন। অপরদিকে মাছ ব্যবসায়ীরা চাহিদা অনুযায়ী চাঁদা না দেওয়ায় ট্রলার আটক করে হয়রানির অভিযোগ তোলেন কোস্টগার্ড কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। জেলেদের ভাষ্য, ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞার সময়ে সাগরে যাওয়ার সুযোগ দিতে ট্রলারপতি দুই লাখ টাকা চাঁদা নিয়েছেন কোস্টগার্ড কর্মকর্তারা। যদিও এটি অস্বীকার করেন এসব কর্মকর্তা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, মঙ্গলবার বিকেলে অবৈধ দুটি ট্রলিং ট্রলার জব্দ করে কোস্টগার্ড। এর প্রতিবাদে পাঁচ শতাধিক জেলে সন্ধ্যা থেকে কোস্টগার্ড স্টেশনের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। রাত ৯টার দিকে তারা কোস্টগার্ডের দুটি যানবাহন ভাঙচুর করেন। এ সময়ে কোস্টগার্ড সদস্যরা লাঠিচার্জ করেন। তখন যোগ দেন মাছ ব্যবসায়ী ও স্থানীয় লোকজন। তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি ছোড়ে কোস্টগার্ড। একপর্যায়ে ভবনের মধ্যে কোস্টগার্ড সদস্যদের অবরুদ্ধ করে ফেলেন বিক্ষোভকারীরা।
নৌবাহিনী ও পুলিশ রাতে সেখানে গিয়েও জেলেদের সরাতে পারেনি। তারা অর্ধশত ট্রলার দিয়ে কোস্টগার্ড স্টেশনের বোটকুল (যেখানে কোস্টগার্ডের নৌযান রাখা হয়) ঘিরে রাখে।
যে ট্রলার দুটি কোস্টগার্ড আটক করে, সেগুলোর মালিক জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাসুম কোম্পানি। তাঁর ভাষ্য, ১১ জুন সাগরে মাছ ধরার ওপর ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার মধ্যে সাগরগামী প্রতি ট্রলার থেকে ২ লাখ টাকা নিয়েছে কোস্টগার্ড। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ার পর আবারও তারা টাকা দাবি করছেন।
মাসুম কোম্পানি বলেন, ‘যেসব ট্রলার মালিক টাকা দেননি, তাদের তালিকা আমার কাছে চেয়েছেন কোস্টগার্ড কর্মকর্তারা। তা দিতে রাজি না হওয়ায় আমার বৈধ ট্রলারকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে জব্দ করা হয়েছে।’
তাঁর ভাষ্য, জেলেসহ মাছ ব্যবসায়ীরা এ সময় কোস্টগার্ড অফিসের পাশে স্টিল ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়েছিলেন। এ সময় তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। এরপর সবাই বিক্ষোভ শুরু করেন। কোস্টগার্ড সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে এভাবে নির্যাতন ও হয়রানি করছেন বলেও অভিযোগ করেন মাসুম।
দুই পক্ষের বিরোধ মেটাতে ইউএনওর সভাকক্ষে বুধবার বেলা ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বৈঠক হয়। সেখানে কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের অপারেশন অফিসার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার রিফাত আহম্মেদ জানান, ইঞ্জিন ট্রলারে ট্রলিং স্থাপন করে মাছ আহরণ নিষিদ্ধ। এমন ট্রলার সাগরমুখী হলে জব্দ করা হবে। মঙ্গলবার রাতে স্টেশনে হামলার ঘটনায় মামলা হবে।
জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানান, কোস্টগার্ড ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে। মামলা না করার শর্তে মালিকরা ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয়েছেন।
লেফটেন্যান্ট কমান্ডার রিফাত আহম্মেদ চাঁদা আদায় বিষয়ে বলেন, উপযুক্ত প্রমাণ দিতে পারলে ব্যবস্থা নেবেন। তবে কোস্টগার্ড কর্মকর্তাদের নাম ব্যবহার করে তথ্যদাতারাও (সোর্স) এ কাজ করতে পারেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
- বিষয় :
- বরগুনা