এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিলেন বাবা-মেয়ে

মেয়ে হালিমা খাতুনের সঙ্গে আবদুল হান্নান
লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৫ | ২৩:০০
পড়াশোনায় বয়স কোনো বাধা নয়, চেষ্টা করলে সবই সম্ভব। এটি আবারও প্রমাণ করলেন নাটোরের লালপুর উপজেলার আবদুল হান্নান। ৪২ বছর বয়সী হান্নান তাঁর মেয়ে হালিমা খাতুনের সঙ্গে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন।
হান্নান বাঘা কাকড়ামারী কলেজ থেকে এবং হালিমা খাতুন (১৭) গোপালপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন।
হান্নান গোপালপুর পৌরসভার নারায়ণপুর মহল্লার মৃত লাল মিয়ার ছেলে। তাঁর এক মেয়ে ও দুই ছেলে। বড় ছেলে আবু হানিফ নিরব (১৩) নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস হাই স্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। ছোট ছেলে রমজান মিয়ার বয়স মাত্র ছয় বছর।
১৯৯৮ সালে তিনি নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস হাই স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে অকৃতকার্য হন হান্নান। তখনই লেখাপড়া ছেড়েছেন তিনি। এর পর পৈতৃক সূত্রে গোপালপুর রেলগেট এলাকায় পাওয়া একটা দোকানে চায়ের ব্যবসা শুরু করেন। পরে বিয়ে করে সংসার জীবনে থিতু হন। এক পর্যায়ে লেখাপড়ার প্রতি আবারও ঝোঁক তৈরি হয় তাঁর। ২০২১ সালে কাউকে না জানিয়ে উপজেলার রুইগাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম (ভোকেশনাল) শ্রেণিতে ভর্তি হন। দুই বছর পর মেয়ে হালিমার সঙ্গে পরীক্ষা দিয়ে এসএসসি পাস করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকাজুড়ে প্রশংসা কুড়ান তিনি।
আবদুল হান্নান বলেন, লেখাপড়ার কোনো বয়স নেই। চেষ্টা করলে সবই সম্ভব। মেয়ের সঙ্গে এসএসসি পাসের পর এবার এইচএসসি পরীক্ষাও দিচ্ছি। শুধু এইচএসসি নয়, মাস্টার্স ডিগ্রিও অর্জন করার ইচ্ছে তাঁর।
মেয়ে হালিমা খাতুন জানান, বাবার মেধা আছে এবং ইচ্ছাশক্তি আছে। লেখাপড়া করার প্রবল ইচ্ছার কারণেই তিনি এসএসসি পাস করে আবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন। পরস্পরের মধ্যে লেখাপড়া নিয়ে প্রতিযোগিতাও রয়েছে বলে জানান তিনি। হালিমা জানান, বাবার জন্য তিনি গর্ববোধ করেন। তাঁর বাবাকে দেখে অন্যরা পড়াশোনায় অনুপ্রাণিত হবে বলে মনে করেন তিনি।
আবদুল হান্নানের প্রতিবেশী মাসুদ রানা বলেন, শিক্ষার জন্য বয়স কোনো বাধা নয়, মনের ইচ্ছাটাই বড়– আবদুল হান্নান তা প্রমাণ করেছেন। সবার জন্য একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি।
লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, বাবা ও মেয়ের একসঙ্গে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের বিষয়টি শুনেছি। উচ্চশিক্ষা অর্জনে উপজেলা পরিষদ থেকে তাদের সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে।
- বিষয় :
- লালপুর