ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

সেলিম খানসহ তিনজনকে কোটি টাকা জরিমানার রায় প্রকাশ

সেলিম খানসহ তিনজনকে কোটি টাকা জরিমানার রায় প্রকাশ

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২২ | ০৪:৫২ | আপডেট: ২৫ আগস্ট ২০২২ | ০৪:৫২

ভিত্তিহীন রিট দায়ের করে আদালতের সময় নষ্ট করার দায়ে চাঁদপুরের বিতর্কিত ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানসহ তার দুই সহযোগীকে কোটি টাকা জরিমানা করে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়েছে।

বিচারপতি আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবির সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার ২১ পৃষ্ঠার রায় স্বাক্ষরের পর সুপ্রিম কোর্ট থেকে প্রকাশ করা হয়।

রায়ে বলা হয়েছে, সরকারের জমি অধিগ্রহণের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অনৈতিকভাবে অর্থ আদায়ের অপচেষ্টা হিসেবে সেলিম চেয়ারম্যান জনপ্রতিনিধি হওয়া সত্ত্বেও ঘৃণিত কাজ করেছেন। তিনি ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয় ব্যবহার করে অবৈধ, অনৈতিক ও জনস্বার্থবিরোধী কাজ করেছেন।

রায়ে সেলিম খানকে ৫০ লাখ টাকা এবং অপর দুই রিটকারী আব্দুল কাদের ও জুয়েলকে ২৫ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে তাদের জরিমানার টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়েছে।

এর আগে গত ৯ জুন প্রস্তাবিত চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণে অধিগ্রহণের জন্য জমির মূল্যহার পরীক্ষায় কমিটি গঠন এবং ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রায় ১৯৪ কোটি টাকার প্রাক্কলনের বৈধতা নিয়ে করা রিটের শুনানি শেষ হয়। পরে ওইদিনই সেলিমসহ তিন জনকে কোটি টাকা জরিমানা করে রায় দেন হাইকোর্ট।

২০১৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের খসড়া আইন মন্ত্রিসভা চূড়ান্তভাবে অনুমোদন করে। জাতীয় সংসদে ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বিল পাস হয়। জমি অধিগ্রহণের জন্য প্রশাসনিক অনুমোদন দেওয়া হয় ২০২১ সালের ৬ এপ্রিল।

প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণের জন্য চাঁদপুর জেলা প্রশাসন ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রায় ১৯৪ কোটি টাকার প্রাক্কলন প্রস্তুত করে অর্থ ছাড়ের জন্য উপাচার্য বরাবরে চিঠি দেয়। ওই বছরের ১৪ অক্টোবর জমির মূল্যহার পরীক্ষা ও সংগ্রহের জন্য ১৩ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করে জেলা প্রশাসন।

এদিকে প্রায় ১৯৪ কোটি টাকার প্রাক্কলন প্রস্তুত নিয়ে আপত্তি জানিয়ে জেলা প্রশাসনের প্রাক্কলন সংশোধন চেয়ে নভেম্বরে ভূমি মন্ত্রণালয়ে আবেদন দেন চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০ নম্বর লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সেলিম খান ও অন্যরা। পরে মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের কাছে ব্যাখ্যা জানতে চায়। চাঁদপুর জেলা প্রশাসন ব্যাখ্যা দিয়ে প্রতিবেদন পাঠায়।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, মৌজা দর ধরে জমি অধিগ্রহণের দাম নির্ধারণ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাড়ে ৬২ একর জমির জন্য (মূল দামের তিন গুণ ধরে) সরকারের ব্যয় হবে প্রায় ১৯৪ কোটি টাকা। কিন্তু হঠাৎ উচ্চ মূল্য দেখিয়ে যেসব দলিল করা হয়েছে, সেটা আমলে নিলে সরকারকে ৫৫৩ কোটি টাকা দিতে হবে। অর্থাৎ সরকারকে অতিরিক্ত দিতে হবে ৩৫৯ কোটি টাকা।

এ অবস্থায় চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের ১৪ অক্টোবরের (মূল্যহার পরীক্ষায় কমিটি গঠন) এবং ৪ নভেম্বরের (১৯৪ কোটা টাকা প্রাক্কলন) স্মারকের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সেলিম খান ও তার ঘনিষ্ঠ দুই ব্যক্তি হাইকোর্টে পৃথক পৃথক রিট দায়ের করেন। 

রিটে স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল আইনের ৯(১) (ক) ধারা অনুযায়ী প্রাক্কলন নির্ধারণের নির্দেশনাও চাওয়া হয়। পরে হাইকোর্ট পৃথক রুল জারি করেন, যার ধারাবাহিকতায় রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ৯ জুন রায় দেন হাইকোর্ট। গতকাল রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়।

আরও পড়ুন

×