ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

সাত বছর পর দেশে ফের বার্ড ফ্লু শনাক্ত

সাত বছর পর দেশে ফের বার্ড ফ্লু শনাক্ত

ফাইল ফটো

 সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ মার্চ ২০২৫ | ০৪:৪৫ | আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২৫ | ০৯:২১

যশোরের সরকারি একটি মুরগির খামারে শনাক্ত হয়েছে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লু। ২০১৮ সালের পর গত ১২ মার্চ বাংলাদেশে আবার এই ফ্লু শনাক্ত হলো; যা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে খামারিদের মধ্যে। শনাক্তের পর পরই বার্ড ফ্লু প্রতিরোধ এবং জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। পোলট্রি খামারিদের বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে নির্দেশনা দিয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। সীমান্ত এলাকায় নেওয়া হয়েছে সতর্কতা। কোনো মৃত বা সন্দেহজনক অসুস্থ হাঁস-মুরগি বা পাখি পাওয়া গেলে নমুনা সংগ্রহ করে দ্রুত নিকটবর্তী ল্যাবে পরীক্ষা করে ফলাফল অনুযায়ী পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবু সুফিয়ান জানান, গত ১২ মার্চ যশোরের সরকারি খামারে বার্ড ফ্লু শনাক্ত হয়েছে। আমরা যে নমুনা পেয়েছি, তা পরীক্ষার জন্য দেশের বাইরে পাঠাব। তবে মৃদু আকারের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। আমরা সঙ্গে সঙ্গে সব সরকারি পোলট্রি খামারকে নির্দেশনা দিয়েছি। একই সঙ্গে খামারিদের সংগঠনকেও আমরা সতর্ক থাকতে বলেছি; যাতে তারা পর্যাপ্ত নিরাপত্তা, টিকা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, ‘স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় সীমান্ত এলাকায় আমাদের কার্যালয়গুলোকে সতর্ক করতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বার্ড ফ্লুর জন্য বিশেষায়িত টিকা পর্যাপ্ত আছে। বাংলাদেশে খামারে ২০০৭ সালে প্রথম এবং ২০১৮ সালে সর্বশেষ বার্ড ফ্লু শনাক্ত হয়। এবার আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ এবারের পরিস্থিতি অন্যবারের মতো না। বার্ড ফ্লু নিয়ে যেন অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল বোঝাবুঝি বা প্রচারণা না ছড়ায়, সেদিকে আমরা সতর্ক থাকি। খামারি বা ক্রেতার আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ক্রেতাসাধারণকে অনুরোধ করব, আতঙ্কিত হয়ে আপনারা হাঁস-মুরগি বা ডিম খাওয়া বন্ধ করবেন না।’ 

বুধবার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, ‘আমাকে মার্চের শুরুতে বার্ড ফ্লু শনাক্তের বিষয়টি জানানো হয়েছে। ফ্লুর বিস্তার যাতে বাড়তে না পারে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন এবং ফ্লুর বিস্তার নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা যশোরের খামারটি পরিদর্শন করেছেন এবং ফ্লুটি কীভাবে বাংলাদেশে এসেছে, তার বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করেছেন। ফ্লুর পরীক্ষাবিষয়ক টেকনিক্যাল দিক প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলতে পারবেন।’

বার্ড ফ্লুর প্রাদুর্ভাবে যশোরের খামারে ৩ হাজার ৯৭৮টি মুরগির মধ্যে ২ হাজার ১১৭টি মারা গেছে। ফ্লু যেন ছড়িয়ে না পড়ে, সে জন্য ১ হাজার ৮১১টি ডিম ধ্বংস করা হয়। ২০০৭ সালের মার্চে বাংলাদেশে প্রথম বার্ড ফ্লু দেখা দেয়। সে বছর ১০ লাখেরও বেশি মুরগি এই ফ্লুর কারণে মেরে ফেলা হয়েছিল। ২০০৮ সালের মে মাসে বাংলাদেশে মানুষের শরীরে বার্ড ফ্লু সংক্রমণ ধরা পড়ে।

যশোরের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের উপপরিচালক রাশেদুল হক বলেন, ১৪ মার্চ সরকারি খামারের একটি শেডে ১ হাজার ২৩৭টি মুরগি ও ১৪৫টি ডিম এবং ১৬ ও ১৭ মার্চ একটি শেডের ৯৪১টি মুরগি ও ১ হাজার ৬৬৬ ডিম ধ্বংস করা হয়েছে। এটি লো প্যাথোজেনিক। মানুষে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা খুবই কম। ফলে ভয়ের কারণ নেই।
দেশে মাংসের মোট চাহিদার অর্ধেকের বেশি জোগান দেয় পোলট্রি খাত। বার্ড ফ্লু সংক্রমণের পর গভীর চিন্তার মধ্যে পড়েছেন খামারিরা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গতকাল খামারিরা সমকালকে ফোন করে তাদের খামারে মুরগি মারা যাওয়ার তথ্য দিয়েছেন। বড় ধরনের দুর্যোগপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হওয়ার আগেই এর নিয়ন্ত্রণে সরকারকে কঠোর ও সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

এ খাতের উদ্যোক্তারা বলেন, দেশে ৯৫ হাজার ৫২৩টি খামার আছে। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ ও ডলার সংকটে বেড়ে গেছে প্রাণিজ খাদ্যের দাম। করোনার পর থেকে খরচ সামলাতে না পেরে বন্ধ হয়ে গেছে ৬২ হাজার ৬৫৬টি খামার। এবার বার্ড ফ্লু যেন দেশের খামারিদের আরেকটি মহামারিতে না ফেলে, এ জন্য ফ্লু বিস্তার রোধে সরকারকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।

বুধবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) জানিয়েছে, অতীতে বার্ড ফ্লু প্রাদুর্ভাবের কারণে বহু খামার বন্ধ হয়ে গেছে। লাখ লাখ মুরগি নিধন করতে হয়েছে এবং হাজার হাজার খামারি তাদের জীবিকা হারিয়েছেন। যদি এই পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে না আনা যায়, তবে বর্তমান সংকট আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। যার প্রভাব শুধু পোলট্রি শিল্পেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। বরং এটি দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনীতির ওপরও গভীর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এখনই সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। সংগঠনটি দাবি করেছে, বার্ড ফ্লু নিয়ে সরকারকে একটি বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে। যাতে আক্রান্ত এলাকাগুলোতে দ্রুত তদারকি করা যায় এবং রোগ প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যায়।

আরও পড়ুন

×