ঢাকা মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫

আসামি হাজিরায় জরাজীর্ণ নিরাপত্তা

ঢাকার আদালত

আসামি হাজিরায় জরাজীর্ণ নিরাপত্তা

ফাইল ছবি

 ইমরান হুসাইন 

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৫ | ০১:৫৫

পুলিশ সদস্যকে আঘাত করে গত ১৯ জুন ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণ থেকে পালিয়ে যান স্কুলছাত্র জিসান হোসেন হত্যা মামলার আসামি শরীফুল ইসলাম। তিনি গত ছয় বছর কারাগারে ছিলেন। এদিন তাঁকে আদালত থেকে হাজতে নেওয়ার সময় সুযোগ বুঝে তিনি পালিয়ে যান। দৌড়ে পালানোর দৃশ্য সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ে। তাতে দেখা যায়, তাঁর হাতে হাতকড়া, পায়ে ডান্ডাবেড়ি, কোমরে কোনো 
দড়ি নেই। ছিল না পুলিশের বাড়তি নিরাপত্তা। শরীফুলের হাতে পুরোনো হাতকড়া থাকলেও সেটি ছিন্ন করে পালিয়ে যান।

ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণ থেকে আসামি পালানো বা আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনা নতুন নয়। এর আগেও একাধিকবার এমন ঘটেছে। ২০২২ সালের ২০ নভেম্বর ঢাকার জনাকীর্ণ আদালত এলাকা থেকে দুই জঙ্গি পালিয়ে যায়। একই বছরের ২৮ এপ্রিল মানিকগঞ্জের কলেজশিক্ষার্থী মনির হোসেন হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বাদশা মিয়াকে আরেক মামলার সাক্ষ্যগ্রহণে আনা হলে আদালত থেকে পালিয়ে যান। ২৩ মার্চ ঢাকার সিএমএম আদালতের হাজতখানা থেকে পালিয়ে যান মাদক মামলার আসামি সাইফুল ইসলাম। এর আগে ২০২১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের হাজতখানায় নেওয়ার সময় ডাকাতি মামলার আসামি হারুনুর রশিদ পালিয়ে যান।

এভাবে আসামি পালানোর ঘটনায় আদালত চত্বরে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নানা অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়েই শত শত আসামিকে ঢাকার আদালতে হাজির করা হয়। প্রতিটি ক্ষেত্রে ঝুঁকি নিয়েই আসামি হাজিরার কাজ চলে। এসব ক্ষেত্রে অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। তবে প্রচলিত নিয়মও মানছেন না আদালত পুলিশের সদস্যরা। বিশেষ সুবিধা নিয়ে হাজতখানায় গিয়ে আসামিদের সঙ্গে স্বজনের সাক্ষাৎ করতে দেওয়া, আসামি কাঠগড়া থেকে হাজতখানা বা প্রিজন ভ্যানে আনা-নেওয়ার সময়েও অনায়াসেই আলাপ চালানোর সুযোগ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ আছে। এ ছাড়া আদালতের সিঁড়িতে বা হাঁটতে হাঁটতে প্রকাশ্যেই মোবাইল ফোনে কথা বলতে পারেন আসামিরা। দিনের পর দিন এমন অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়েই চলছে ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রধান ফটক ও তার আশপাশ এলাকায় সিসি ক্যামেরার সংখ্যা নগণ্য। চার বছর আগে বিশেষ মনিটরিংয়ের জন্য ১৩০টি সিসি ক্যামেরা বসানোর আবেদন এলেও বাস্তবায়ন হয় খুব কম। যে ক্যামেরাগুলো বসানো হয়েছিল তার বেশির ভাগই এখন অকার্যকর। 

সূত্র জানায়, প্রসিকিউশনের নিয়ন্ত্রণে আদালত প্রাঙ্গণে সিসি ক্যামেরা আছে ৩৫ থেকে ৩৮টি, যা বিশাল এই অঞ্চলের জন্য খুবই অপ্রতুল। এ ছাড়া জজ কোর্ট ও চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট মিলিয়ে প্রতিদিন প্রায় ছয় শতাধিক আসামি হাজির করা হয় আদালতে। এর জন্য প্রতিদিন বরাদ্দ থাকেন  মাত্র ৫১০ পুলিশ সদস্য। এর মধ্যে ৪০ থেকে ৫০ জন ছুটিতে থাকেন। এ ছাড়া বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজে নিয়োজিত থাকেন অন্যরা। ফলে ‘ভিআইপি’ আসামি ব্যতীত খুন ডাকাতি বা দাগি আসামির ক্ষেত্রে বিশেষ ফোর্স ব্যবহারের সুযোগ থাকে না বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। 
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী সমকালকে বলেন, ‘এখনকার বেশির ভাগ পুলিশ ছোট ছোট শহর থেকে আসা। এদের অভিজ্ঞতাও কম। প্রতি সপ্তাহে এদের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। নিরাপত্তাবলয়ে আরও বেশি তৎপরতা প্রয়োজন।’

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) প্রসিকিউশন বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মাঈন উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের স্বল্পসংখ্যক ক্যামেরা আছে, কিন্তু আরও প্রয়োজন। এ ছাড়া আরও বেশি ফোর্স দরকার। অনেক কনস্টেবলের বিরুদ্ধে আমাদের বিভাগীয় মামলা চলমান। অনেকের বিরুদ্ধে ঘুষের ও অন্যান্য অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ এসেছে। সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দাগি আসামির ক্ষেত্রে বিশেষ নিরাপত্তায় কারাগার থেকে পাঠানোর জন্য জেল সুপারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’
ডিএমপির প্রসিকিউশন বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার তারেক জুবায়ের বলেন, ‘আসামি শরীফুল পালোনার ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। দু’জন দায়িত্বরত পুলিশকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা হাজতখানায় আরও বেশি নিরাপত্তা জোরদার করছি। নিরাপত্তার জন্য আলাদা সেল গঠন করেছি। তবে আমাদের প্রধান সমস্যা জনবল সংকট।’

আরও পড়ুন

×