ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

বেশিরভাগ কোম্পানির নিট মুনাফা কমেছে

বেশিরভাগ কোম্পানির নিট মুনাফা কমেছে

প্রতীকী ছবি

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২২ | ২১:০৪ | আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২২ | ২১:০৪

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত অর্ধেকের বেশি কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) কমেছে। টাকার অঙ্কে নিট মুনাফাও কমেছে বেশিরভাগের। গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের ইপিএস ও নিট মুনাফার সঙ্গে চলতি বছরের একই প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত প্রান্তিক প্রতিবেদনের তথ্য পর্যালোচনায় এমন চিত্র পাওয়া গেছে।

প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সর্বশেষ প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ২৯৪ কোম্পানি। এর মধ্যে ২৩২ কোম্পানি মুনাফায় ছিল। বাকি ৬২টি লোকসান করেছে। মুনাফায় থাকা কোম্পানির মধ্যে ১২৩টির ইপিএস আগের হিসাব বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় বেড়েছে। বিপরীতে কমেছে ১০৭টির। অর্থাৎ ১৬৯টি কোম্পানির মুনাফা ছিল নেতিবাচক ধারায়।

বর্তমানে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ৩৫৩টি। এর মধ্যে ২৯৪টি এখন পর্যন্ত সর্বশেষ প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এর বাইরে আরও ১৭টি কোম্পানি গত প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন এখনও প্রকাশ করেনি।

শেয়ারবাজার সংশ্নিষ্টরা মনে করছেন, গত ফেব্রুয়ারি শেষে শুরু হওয়া ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক পর্যায়ে সব ধরনের কাঁচামালের সঙ্গে জ্বালানির দামও বেড়েছে। এতে উৎপাদন খরচ অনেক বেড়েছে, যা মুনাফা কমার অন্যতম প্রধান কারণ। এর বাইরে আলোচ্য প্রান্তিকে গ্যাস, বিদ্যুতের ঘাটতি এবং ডলার সংকটে কাঁচামাল আমদানি ব্যাহত হওয়ায় উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। একদিকে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি, অন্যদিকে সক্ষমতা অনুযায়ী উৎপাদন চালাতে না পারলেও বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য খরচ থেমে থাকেনি, যা সার্বিকভাবে কোম্পানির মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত প্রান্তিকের আর্থিক হিসাব প্রকাশ করা ২৯৪ কোম্পানির সার্বিক হিসাবে (লোকসানিসহ) নিট মুনাফা ছিল ৬ হাজার ১৯২ কোটি টাকা, যা আগের হিসাব বছরের একই প্রান্তিকে ছিল ৭ হাজার ২৪৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় নিট মুনাফা কমেছে ৭৫০ কোটি টাকা বা সোয়া ১০ শতাংশ।

এ ছাড়া ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বীমা এবং কয়েকটি বহুজাতিক কোম্পানির চলতি বছরের প্রথম ৯ মাস এবং উৎপাদন ও সেবা খাত সংশ্নিষ্ট কোম্পানিগুলোর (মোট ৩১১ কোম্পানি) জুন সমাপ্ত সর্বশেষ হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এসব কোম্পানি নিট মুনাফা করেছে ২৪ হাজার ১২০ কোটি টাকা। যা গত বছর বা গত হিসাব বছরের একই সময়ে ছিল ২৪ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা। নিট মুনাফা কমেছে ৪৫৯ কোটি টাকা।

ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং বীমা কোম্পানির তালিকাভুক্ত ১১২ কোম্পানির মধ্যে এখন পর্যন্ত ৯৩টি জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে ৪১টির ইপিএস বেড়েছে এবং কমেছে ৫১টির। সেবা ও উৎপাদন খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানি ২৪১টি। এর মধ্যে ২০১টি আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এসব কোম্পানির মধ্যে ১০১টির ইপিএস বেড়েছে, কমেছে ৯৮টির।

গত প্রান্তিকে যে ৬২ কোম্পানি লোকসান করেছে বলে জানিয়েছে, তার মধ্যে বাটা সু, ওয়ালটন হাইটেক, এসিআই লিমিটেড, সিঙ্গার বাংলাদেশ, ইফাদ অটোস, রানার অটোমোবাইলস, এটলাস বাংলাদেশ, হেইডেলবার্গ সিমেন্টের মতো কোম্পানি রয়েছে। ওয়ালটন হাইটেক গত বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর সময়কালে যেখানে ২৮১ কোটি টাকা নিট মুনাফা বা শেয়ারপ্রতি ৯ টাকা ২৮ পয়সা মুনাফা করেছিল, চলতি বছরের একই সময়ে এসে লোকসান করেছে ৪৬ কোটি টাকার বেশি। এতে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ১ টাকা ৫২ পয়সা। এসিআই লিমিটেড গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরের যেখানে শেয়ারপ্রতি ৩ টাকা ৪২ পয়সা মুনাফা করেছিল, এ বছরের এসে সেখানে ৩ টাকা ৯৪ পয়সা লোকসান করেছে। রানার অটোর শেয়ারপ্রতি ৫৩ পয়সা মুনাফা ছিল, এ বছর একই সময়ে ৮১ পয়সা লোকসানের তথ্য দিয়েছে কোম্পানিটি।

কিছু কোম্পানির ক্ষেত্রে ভালো চিত্রও মিলেছে। বহুজাতিক কোম্পানি মারিকো বাংলাদেশ, বিএটি বাংলাদেশ, ইউনিলিভার কনজুমার কেয়ারের ইপিএস বেড়েছে। দেশীয় স্কয়ার ফার্মা, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, যুমনা অয়েল, ইস্টার্ন কেবলস, বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলস আর কিছু কোম্পানি মুনাফা বৃদ্ধির তথ্য দিয়েছে।

বিএটি বাংলাদেশ জানিয়েছে, একই প্রান্তিকে কোম্পানিটির ইপিএস ৫ টাকা ৪৫ পয়সা থেকে বেড়ে ৭ টাকা ৫৯ পয়সায় উন্নীত হয়েছে।

আরও পড়ুন

×