বসনিয়ায় আটকা বাংলাদেশি
উদ্ধার করুন, দেশে ফিরিয়ে আনুন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ছবি: এনডিটিভি
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২০ | ১২:০০ | আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২০ | ১৫:১৬
ভাগ্যোন্নয়নের লক্ষ্যে অবৈধ পথে বিদেশ যাত্রার মর্মন্তুদ পরিণতির চিত্র ইতোমধ্যে সংবাদমাধ্যমে কম উঠে আসেনি। সাগর-মরু-জঙ্গলপথে বিদেশে পাড়ি জমাতে গিয়ে প্রাণহানির মতো মর্মস্পর্শী যেমন অনেক ঘটনা ঘটেছে, তেমনি অনেকেই আটকা আছেন বিভিন্ন দেশের কারাগার, শরণার্থী শিবিরে। শনিবার সমকালে প্রকাশিত 'শীতের তীব্রতায় দুর্ভোগে বাংলাদেশিরা' শিরোনামযুক্ত প্রতিবেদনে ফের এরই সাক্ষ্য মিলেছে। শীতপ্রধান অঞ্চল বসনিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর ভেলিকা ক্লাদুসার শরণার্থী শিবিরে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের দুর্ভোগচিত্র যেকোনো সংবেদনশীল মানুষকে ব্যথিত না করে পারে না। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত কোনো দেশে প্রবেশের জন্য সেখানে তারা অবস্থান নিয়েছিলেন। তবে স্লোভেনিয়া ও ক্রোয়েশিয়ার পুলিশের কঠোরতায় ফের বসনিয়ায় ফিরে আসতে বাধ্য হন তারা। কিন্তু তাদের নির্দিষ্ট সংখ্যা আমাদের অজানা। আমরা জানি, ইউরোপের অন্য দেশের তুলনায় বসনিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থা দুর্বল। তাই সেখানে অবৈধ অভিবাসীদের টিকে থাকা খুব কঠিন। সেখানে বাংলাদেশের দূতাবাসও নেই। নেদারল্যান্ডসে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ রাখে। এমন একটি দেশের জঙ্গলে দলে দলে বাংলাদেশি আটকে পড়া নিঃসন্দেহে বাড়তি উদ্বেগের বিষয়। আমরা জানি, মানব পাচারের সাম্প্রতিক পথ হিসেবে আলোচনায় এসেছে বসনিয়া-হার্জেগোভিনা-স্লোভেনিয়া। মানব পাচারকারী চক্রগুলো অবৈধ পথে বিদেশগামীদের বিভিন্নভাবে প্রলুব্ধ করে নানা কৌশলে ক্রোয়েশিয়া হয়ে বসনিয়া বা স্লোভেনিয়া নিয়ে যায়।
দেশি-বিদেশি মিলে গড়ে ওঠা এই চক্রগুলো মানুষের জীবন নিয়ে জুয়া চালিয়েই যাচ্ছে। যারা বিপুল পরিমাণ টাকা ও জীবন পাচারকারীদের হাতে তুলে দিয়ে ভাগ্যান্বেষণের জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠেন, তাদের অসহায়ত্বের সুযোগ নেয় মানব পাচারকারী চক্র। 'সোনার হরিণ' ধরতে কত মানুষ সর্বস্বান্ত হয়েছেন, প্রাণ হারিয়েছেন কিংবা বিভিন্ন দেশে মানবেতর জীবনযাপন করছেন, এর হিসাব মেলানো ভার। অথচ এই টাকা দিয়ে দেশেই কোনো না কোনোভাবে জীবনমানের উন্নয়নের পথ বের করা সম্ভব। আমরা জানি, নিকট অতীতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ক্রোয়েশিয়া পুলিশের নিষ্ঠুর নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হবিগঞ্জের এক যুবকের ক্ষতবিক্ষত মুখমণ্ডলের ছবিটি ছিল মানবতার ওপর কশাঘাত। ওই যুবক অবৈধ পথে গ্রিস থেকে ইতালি যাচ্ছিলেন। অবৈধ পথে অভিবাসী হতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের এমন মর্মন্তুদতার মুখোমুখি হওয়ার নজির আরও অনেক আছে। মানব পাচার একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। কিন্তু এর দায় রাষ্ট্র এড়াতে পারে না। আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো এবং সরকার এ ব্যাপারে দৃষ্টান্তযোগ্য প্রতিকারও নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়নি। একজন সংসদ সদস্য ও তার স্ত্রী কুয়েতে মানব পাচারে জড়িত থাকায় সে দেশের আদালতে তাদের বিচার প্রক্রিয়াধীন। তাতে প্রমাণিত হয়, মানব পাচারকারীদের শিকড় কতটা গভীরে প্রোথিত।
মানব পাচারের প্রায় ছয় হাজার মামলার লক্ষণীয় অগ্রগতি নেই। আমরা মনে করি, এই অন্ধকার ঘোচাতে এ ধরনের মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি ও ন্যায়বিচার ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে বিশেষ ব্যবস্থা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে জরুরি রাজনৈতিক অঙ্গীকারও। একই সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ অভিবাসনের পথে কেউ যাতে পা না রাখেন, এ জন্য বাড়াতে হবে জনসচেনতাও। মানব পাচার ভয়াবহ অপরাধ। এমনটি কোনো সভ্য-মানবিক সমাজে চলতে পারে না। যারা বিভিন্ন দেশের শরণার্থী শিবির, কারাগার কিংবা অধিকতর বিপদাশঙ্কায় মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন, তাদের মুক্ত করে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ সরকারকে নিতে হবে। দুর্গম পথে আটকে পড়া নাগরিকদের প্রতি রাষ্ট্রের এই দায় ভুলে যাওয়ার অবকাশ নেই। এ ব্যাপারে আমাদের দূতাবাসগুলোরও সক্রিয়তা জরুরি। বসনিয়ায় আটকা পড়া বাংলাদেশিদের উদ্ধারের মধ্য দিয়েই সেই জরুরি দায়িত্বশীলতা সূচিত হোক।
- বিষয় :
- প্রবাসী
- বসনিয়া
- বাংলাদেশি
- আটকা বাংলাদেশি