ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

'জীবনে ভালো কিছু করেছি, মনা সেই পুণ্যের ফল'

'জীবনে ভালো কিছু করেছি, মনা সেই পুণ্যের ফল'

বিনোদন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ আগস্ট ২০২১ | ০৬:৩৯ | আপডেট: ১০ আগস্ট ২০২১ | ০৭:৪১

গুণী অভিনেতা ও নির্মাতা আফজাল হোসেনের বিয়ের তিন দশক পূর্ণ হলো। স্ত্রীর তাজিন হালিম মনা ও দুই সন্তানকে নিয়ে সুখে কাটছে তার দিনকাল। দীর্ঘ পথচলায় স্ত্রী মনা নানাভাবে জড়িয়ে আছে তার জীবনে।

দীর্ঘদিন একসঙ্গে চলার পথে স্ত্রীর অবদান তুলে ধরে এই অভিনেতা ফেসবুকে লিখেছেন, ‘জীবনে ভালো কিছু করেছি, মনা সেই পুণ্যের ফল।’। সমকাল পাঠকদের জন্য আফজাল হোসেনের পুরো স্ট্যাটাস তুলে ধরা হলো।

তিনি লিখেছেন, ‘তিরিশ বছর হয়ে গেল একসাথে আছি। যথার্থ শোনায়, তার সংসারে তার সাথে বাস করি বললে। তিরিশ বছর কেটেছে। আমাদের সন্তানদের জন্মতারিখ বলতে পারবো-কার কত বয়স হলো বলতে গেলে হিসাবে বসতে হবে। তার চেয়ে সহজ মনাকে জিজ্ঞাসা করে জেনে নেয়া। আরাফ ও বউ দেশের বাইরে থাকে- মনা তাদের প্রায় রোজকার খবর বলতে পারবে। ঈমানের স্কুলের বেতন কতো, আমার জানা নেই। আমি জানি না মাসের বাজার খরচ, চালের দাম, লবণ কত টাকা কেজি। জানা নেই রান্নাঘরের চুলো জ্বলছে না, বেসিনে পানি আটকে গেছে বা ঘরে বৈদ্যুতিক কোনো সমস্যা হলে কোনটার জন্য কাকে ফোন করতে হবে।

এখন আমার ব্লাডপ্রেসার কত থাকে। সকালে কী কী ওষুধ খেতে হয় বা রাতে কী কী খাই, সবই জানে সে। আমি জানি না, আম্মাকেও এখন প্রতিদিন কতগুলো ওষুধ খেতে হয়, ডাক্তার কোনটা নতুন যোগ করেছে। কোন কোনটা শেষ হওয়ার পথে। মাসে গ্যাস, বিদ্যুৎ বিল কত আসে, গাড়ির সার্ভিসিং কবে, কবে আজিমপুর গোরস্থানে পাপা, মায়ের কবরের দেখভাল করার মানুষটাকে টাকা পাঠাতে হবে, সবই তার মনে-মাথায় সাজানো।

আব্বার মৃত্যুবার্ষিকী অমুক তারিখে, পারুলিয়ায় কিছু করা হবে নাকি মিরপুরের এতিমখানায়- মাথায় থাকে। শিশুকালে আরাফকে কোলে নিয়ে ঘুরতো বা তার সাথে খেলতো যে মেয়েটা, তার এখন দুটো বাচ্চা, থাকে সিলেটে। একদিন হয়তো তার সংসারের এক অসুবিধার কথা বলেছিল- মনার মাথায় আছে। সমস্যা আছে না গেছে খোঁজ নেয়। যা করতে পারে করে। অবাক হই, এত কিছু একটা মাথায় থাকে কীভাবে!

দুপুরে ঈমান খেতে চেয়েছে কাও পাট খাই, তার রেসিপি পড়তে পড়তে মনার মনে হয়ে যায় আরিমা, পরিবারের সবচেয়ে ছোটজন (বোনের মেয়ে) খানিক আগে একটা ছবি এঁকে পাঠিয়েছে- মামনা দিস ইজ ফর ইউ। কেমন হয়েছে বা খুশি হয়েছি, জানানো হয়নি তাকে।

নির্ভানা, আমাদের আম্মু (ছোটো ভাইয়ের মেয়ে) ইদানিং খুব আগ্রহে উৎসাহে কেক পেস্ট্রি বানায়, তার এক দুশ্চিন্তা- কেকের ভিতরটা কেন তত নরম থাকছে না। তা নিয়ে আম্মুর সঙ্গে কথা হওয়া দরকার। শীলা, ছোটো ভাইয়ের স্ত্রীর শরীর ভালো নেই। এটাও জানে, একজনও সাহায্যকারী নেই রুমার বাসায়। এ রকম অজস্র দুশ্চিন্তা, সমস্যা ও সমাধানের চেষ্টা মগজে বয়ে সে হাসিমুখে ঠাণ্ডা মাথায় চলতে ফিরতে পারে।

এমন বলেই সাহায্যকর্মী সরবরাহকারী, ইন্টারনেট ও পেস্টকন্ট্রোল কর্মী, ট্রেডমিল মেকানিক, দরজি, মাংস বিক্রেতা, মুদি দোকানি, সোফা মিস্ত্রি, রং মিস্ত্রি ইত্যাদি নানা পরিচয়ের মানুষেরা পছন্দ করে ম্যাডাম, আপাকে। এতকিছু বলার পর মনে হতেই পারে, আমি তাহলে একটা অযথা লোক। যুক্তি খাটালে অন্য মানেও পাওয়া যেতে পারে। জীবনে ভালো কিছু

করেছি। মনা, সেই পুণ্যেরই ফল।


অনেক বছর ছবি আঁকিনি। আঁকাআঁকিতে আবার ফিরতে পারবো, মনে হতো না। মনার বিশ্বাস অটুট ছিল, পারবো। বছরের পর বছর আমাদের পুরো বাড়ির সব ঘরের দেয়াল সে ফাঁকা রেখে দেয়। বলেছিল, ফাঁকাই থাকুক। নিজের আঁকা ছবি ঝোলানোর আগে কারও ছবি দিয়ে ঘর সাজানো যাবে না। সেই নিঃশব্দ জোর খাটানোর ফলাফল, এখন ঘরের দেয়াল ফাঁকা নেই।

জগৎ ও জীবন শেখার জন্য। রোজ আমি তার কাছ থেকে শিখি। ঘরের ধুলো পরিষ্কার আর জলরঙে ছবি আঁকা- দুটোতেই নিবেদন লাগে। একইরকম মনোযোগ, নিষ্ঠা লাগে। একশ রকম ঘটনার মধ্যে থেকেও নিজের জলরংয়ের ছবি কীভাবে আরও ভালো করা যায়- সে জন্য মনা যখন ইউটিউবে বিশ্বখ্যাত জলরং শিল্পীদের অনুশীলন দেখে, যেভাবে দেখে অবাক হই। ভাবি, নিজে শিল্পী হতে চেয়েছি, তবে এতটা মনোযোগী কি কখনো হতে পেরেছি?

সৃষ্টিকর্তা আমাদের ভালো রেখেছেন, রাখবেন- এই আশা। আরও আশা, আমরা উভয়ের জন্য উভয়েই যেন আরও কিছুকাল সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকতে পারি। শুভ বিবাহবার্ষিকী মনা।'

আরও পড়ুন

×