দেশে লাখে ১১৪ জন ক্যান্সারে আক্রান্ত

.
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৭ জুলাই ২০২৪ | ০১:০৫
দেশে প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে ১১৪ জন বিভিন্ন ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন। বর্তমানে দেশে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা আনুমানিক দুই লাখ। নারীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের হার সর্বোচ্চ, ৩৫ দশমিক ৪ শতাংশ। পুরুষের মধ্যে স্বরনালির ক্যান্সারের হার সবচেয়ে বেশি।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে ‘ডিস্ট্রিবিউশন অব ক্যান্সার’স ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়। হাসপাতালের সম্মেলনে কক্ষে এ অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন বিএসএমএমইউর পাবলিক হেলথ ও ইনফরমেটিক্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. খালেকুজ্জামান। বিএসএমএমইউর উদ্যোগে কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার পুমদি, শাহেদল, আড়াইবাড়িয়া ও গোবিন্দপুর ইউনিয়নে এ গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। প্রতিবেদনটি তৈরি করতে জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার নিবন্ধন থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর মধ্যে ক্যান্সারের পরিস্থিতি নির্ণয় করা।
গত বছরের ১ জুলাই থেকে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত পরিচালিত এই গবেষণায় ইন্টারনেটভিত্তিক বিশেষভাবে তৈরি করা ক্যান্সার নিবন্ধন সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিটি বাড়ি পরিদর্শন করে সাক্ষাৎকার নেওয়ার মাধ্যমে গবেষণার তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। গবেষণায় ২৭ হাজার ৭৮৭টি বাড়িতে থাকা সর্বমোট ১১৬ হাজার ৪৭৫ জনকে নিবন্ধনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ ৪৮ দশমিক ৪ শতাংশ, নারী ৫১ দশমিক ৬ শতাংশ। নিবন্ধনকারীদের মধ্যে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা ১৩৩ জন। হার হিসাবে তা প্রতি এক লাখে ১১৪ জন। ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী নারী ও পুরুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্যান্সার রোগী পাওয়া গেছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, পুরুষের মধ্যে স্বরনালির ক্যান্সারের হার সবচেয়ে বেশি, ১৩ দশমিক ২ শতাংশ। আধিক্যের দিক থেকে শীর্ষ অন্যান্য ক্যান্সার হচ্ছে পাকস্থলি ১০ দশমিক ২ শতাংশ। নারী ও পুরুষ উভয়ের মধ্যে ঠোঁট ও মুখগহ্বর ক্যান্সারের হার ৮ দশমিক ৮ শতাংশ, ফুসফুস ৭ দশমিক ৪ শতাংশ এবং খাদ্যনালির ক্যান্সার ৭ দশমিক ৪ শতাংশ।
নারীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের হার সর্বোচ্চ, ৩৫ দশমিক ৪ শতাংশ। শীর্ষ অন্যগুলোর মধ্যে রয়েছে– জরায়ুমুখ ১২ দশমিক ৩ শতাংশ, থাইরয়েড ৭ দশমিক ৪ শতাংশ এবং ওভারির ক্যান্সার ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। রোগীদের মধ্যে ২৮ দশমিক ৬ শতাংশ উচ্চ রক্তচাপ, ১১ দশমিক ৩ শতাংশ ডায়াবেটিস, ৮ দশমিক ৩ শতাংশ হার্টের রোগ এবং ৩ শতাংশ হারে কিডনি জটিলতা এবং স্ট্রোকের রোগী।
প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ক্যান্সার আক্রান্ত ৭৩ দশমিক ৫ শতাংশ পুরুষের মধ্যে নিয়মিত ধূমপান, ৪১ দশমিক ২ শতাংশ পুরুষ ও ৬১ দশমিক ৫ শতাংশ নারীর ধোঁয়াবিহীন তামাক সেবন এবং ৬৪ দশমিক ৭ শতাংশ পুরুষ ও ৭৫ দশমিক ৪ শতাংশ নারীর মধ্যে নিয়মিত পান-সুপারি খাওয়ার ইতিহাস রয়েছে। রোগীদের মধ্যে ১৩ শতাংশ শুধু কেমোথেরাপি, ১১ দশমিক ৩ শতাংশ শুধু সার্জারি, ২ দশমিক ৩ শতাংশ শুধু রেডিওথেরাপি, ৯ দশমিক ৭ শতাংশ শুধু প্যালিয়েটিভ সেবা এবং ৫৯ দশমিক ৫ শতাংশ উল্লিখিত সবগুলোর একের অধিক সেবা নিয়েছেন। নিবন্ধন করা ক্যান্সার রোগীর ৪ দশমিক ৫ শতাংশ কোনো ধরনের চিকিৎসাসেবা নেননি।
গবেষণা প্রতিবেদনে করা সুপারিশগুলো হলো– ক্যান্সার নিবন্ধন সক্রিয় করতে হবে। ক্যান্সার রোগীদের জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রয়োজনীয় সেবা নিশ্চিত করতে হবে। ক্যান্সারের ঝুঁকির কারণ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় কর্মসূচির ওপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। এই নিবন্ধন ব্যবহার করে ভবিষ্যতে ক্যান্সার গবেষণা পরিচালনা করতে গবেষকদের উৎসাহিত করতে হবে।
- বিষয় :
- ক্যান্সার আক্রান্ত