মায়ের সঙ্গে...

ফাইল ছবি
তানজিনা আকতারী
প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৫ | ০০:৩৯ | আপডেট: ০৭ মে ২০২৫ | ০৩:২৩
প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার মা দিবস উদযাপন করা হয়। সে হিসেবে এ বছর ১১ মে উদযাপিত হবে মা দিবস। এ দিনটি মাকে বিশেষভাবে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জানানোর দিন। মায়ের সঙ্গে সন্তানের সম্পর্ক নিয়ে লিখেছেন তানজিনা আকতারী
মায়ের সঙ্গে সন্তানের সম্পর্ক শুধু রক্তের বন্ধনে গাঁথা নয়, এটি পুরোপুরি আত্মার বন্ধন। মা ও শিশুর সম্পর্ক পৃথিবীর সবচেয়ে কোমল, গভীর ও মূল্যবান সম্পর্কগুলোর একটি। মা মানেই স্নেহ ও আদরের অনুভূতি, নিরাপদ আশ্রয়, নির্ভরতার প্রতীক। এ সম্পর্ক নিঃস্বার্থ, গভীর এবং চিরন্তন। শিশু গর্ভাবস্থায় থাকতেই মায়ের সঙ্গে অদৃশ্য বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। বেড়ে ওঠার প্রতিটি ধাপে এ সম্পর্ক নতুন করে রচিত হয়। মায়ের ভালোবাসা, স্নেহ ও মমতা শিশুর জীবনের প্রথম ও সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়। মা শিশুর প্রথম ও সেরা শিক্ষক। শিশুর মুখে প্রথম বুলি ফোটে মায়ের ভাষায়।
সন্তানের সঙ্গে মায়ের সম্পর্ক বিষয়ে জানতে চেয়েছিলাম লিভিং উইথ ওয়েলনেসের মনোবিজ্ঞানী সোনিয়া জান্নাত বাঁশরীর কাছে। তিনি জানান, ‘জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও গভীর সম্পর্কগুলোর অন্যতম মা ও সন্তানের সম্পর্ক। মাতৃগর্ভ থেকে সন্তানের সঙ্গে শারীরিক ও মানসিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। জন্মের পর মায়ের বুকই সন্তানের সবচেয়ে শান্তির ও নিরাপদ স্থান। বুকের দুধ খাওয়ানোর মাধ্যমে সন্তানের সঙ্গে মায়ের সম্পর্ক গভীর থেকে গভীর হয়। সন্তানকে স্পর্শ, আদর, বুকের সংস্পর্শে থাকা, চোখে চোখে তাকানোর দ্বারা মায়ের সঙ্গে আন্তরিকতা, বিশ্বাস, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা তৈরি। মায়ের ভালোবাসায় সন্তান নিরাপত্তা বোধ করে ও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে।’
১২ থেকে ১৮ বছর ছেলেমেয়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ বয়সে সন্তান শিশু থেকে কৈশোরে পদার্পণ করে। তাদের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন হয় হরমোনের প্রভাবে। ছেলেদের স্বপ্নদোষ ও মেয়েদের মাসিক চক্র এ বয়সেই শুরু হয়; বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করে। নতুন এ শারীরিক পরিবর্তনের ফলে জীবনের সবচেয়ে জটিল সময়ে তারা পদার্পণ করে। তাই এ সময় মাকে আদরণীয়, স্নেহময়, বন্ধু, সংবেদনশীল ও কৌশলী হওয়া বিশেষ প্রয়োজন।
খুনসুটি, প্রশ্ন-উত্তর, ভালোবাসা ও যুক্তির মাধ্যমে সন্তানকে সঠিক ও ভুলের পার্থক্য শেখানো মায়ের দায়িত্ব। সেই শেখানোয় যেন কঠোরতা প্রকাশ না পায়, সেটি খেয়াল রাখতে হবে। কৈশোরেই তাদের শারীরিক, মানসিক ও ব্যক্তিত্ব তৈরি হয়। এ বয়সীদের সঙ্গে মাকে হতে হবে ভালো বন্ধু, শিক্ষক। সন্তানের যাতে কখনও মনে না হয় তার কথা বা চাওয়া মা বুঝতে পারছেন না। সন্তান এ বয়সে মায়ের কথা শুনতে চায় না, আমি নিজেই যথেষ্ট বড়, নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে পারি– এমন মনোভাব প্রকাশ করতে পারে। তাই বকাঝকা না করে সন্তানকে নির্ভয়ে ও অকপটে তার মনের কথা ও সিদ্ধান্ত জানানোর স্বাধীনতা দিতে হবে। এ বয়সীদের শরীরে হরমোনের পরিবর্তনের ফলে সন্তান আবেগপ্রবণ, জেদি বা একা থাকতে চাইতে পারে। কোনো তারকা, গায়ককে দেখে ওরা অনুপ্রাণিত হয়, বন্ধুদের দ্বারা প্রভাবিত হয়। ফলে মাকে পরিস্থিতি বুঝে পরিবর্তনগুলোকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করে ও ধৈর্য ধরে সন্তানের আচরণ সামলাতে হবে। মায়ের বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ ছেলেমেয়েকে আত্মবিশ্বাসী, সচেতন ও সুস্থ চিন্তাশীল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
যুবক ও তরুণ বয়সে সন্তানের সঙ্গে মায়ের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকলে সবচেয়ে ভালো। প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানকে নিজের সিদ্ধান্ত নিজেকে নেওয়ার স্বাধীনতা দেওয়া উচিত। মায়েদেরও সন্তানকে আমার ছেলে বা মেয়ে ছোটই আছে বলে আঁকড়ে রাখার মনোভাব থেকে বেরিয়ে আসা উচিত। তবে সন্তানকে যে কোনো
সময় বা প্রয়োজনে সুন্দর ও সঠিক পরামর্শ দেওয়া উচিত ও নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করা উচিত।
সন্তানের বিয়ের পর সুন্দরভাবে পরিবার গঠনের পরামর্শ দিতে হবে মাকে। মায়েদের এমন আচরণ বা ব্যবহার করা উচিত নয়, যা তাদের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে। সংসারে অযাচিত জোর খাটানো থেকে বিরত থেকে সন্তানকে ধীরে ধীরে পরিবারের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে হবে। বয়স্ক মায়েদের সেবাযত্ন, ভালোবাসা, মমতা দিয়ে আগলে রাখা দায়িত্ব তখন বর্তাবে সন্তানের কাঁধে।
- বিষয় :
- মা-ছেলে