ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

কালের যাত্রা ২০২৫

স্থানীয় সরকার কাঠামো ও আগামীর নির্বাচনব্যবস্থা

স্থানীয় সরকার কাঠামো ও আগামীর নির্বাচনব্যবস্থা

তোফায়েল আহমেদ

তোফায়েল আহমেদ

প্রকাশ: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২৩:০১ | আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২৫ | ১৭:৪০

নির্বাচনের বিষয়ে বাংলাদেশের মানুষ অনেক হতাশ ছিল। বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারেনি এবং নির্বাচনী ব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস করা হয়েছে। এমন এক প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। এর পর মানুষের মনে অনেক প্রত্যাশা জেগেছে। আমরা একটা সুস্থ, সুন্দর, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন পেতে পারি– এ রকম বিশ্বাস মানুষের মনে জেগেছে। একে কার্যকরি রূপ দিতে কিছু পূর্বপ্রস্তুতি দরকার। সে প্রস্তুতির অংশ হিসেবে অনেক ক্ষেত্রেই সংস্কার হচ্ছে। নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কারের জন্যও একটি কমিশন গঠিত হয়েছে। সে কমিশনও কিছু কিছু বিষয় রিভিউ করেছে, নির্বাচন কেন হলো না, কী কী সমস্যা আছে– এগুলো চিহ্নিত করে চলমান বিধিবিধান যা আছে, তা সংস্কার সাধনের জন্য কিছু প্রস্তাব তৈরি করেছে। আবার নতুন করে কিছু চালু করার বিষয়ও আছে; যেমন– ‘না ভোট’ চালু করা যাবে কিনা। জনমত হচ্ছে, ‘না’ ভোট থাকতে হবে। কারণ, সবাইকে সবার পছন্দ নাও হতে পারে। তারও একটা মতামতের প্রতিফলন দরকার। এমন পরিস্থিতিতে তিনি ‘না’ ভোট দিতে পারবেন।

‘না’ ভোটের জন্য আমরা বিভিন্ন মহল থেকে প্রস্তাব পেয়েছি। এই পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন একটি সিদ্ধান্ত নেবে। ‘না’ ভোটের ক্ষেত্রে আমরা ভারতের অভিজ্ঞতা রিভিউ করলাম। সেখানে ব্যালটে ‘না’ ভোটের সুবিধা রাখা হয়েছে। যার ফলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ থাকবে না, যা আগে সম্ভব হয়েছে। আমরা ভারতে দেখেছি ৩ শতাংশের বেশি ‘না’ ভোট পড়েনি; কিন্তু অনেক বিবেচনা করে তারা এটি বাদ দেয়নি। বিগত কয়েকটি নির্বাচনে এটি রয়েছে। আমরাও এটি চালু করতে চাই। 

দেশের বাইরে প্রায় দেড় কোটি মানুষ অবস্থান করে। তারা দেশের নাগরিক, ভোটার। যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র আছে তারা যাতে ভোট দিতে পারেন, সে ব্যবস্থা করা হবে। ‘পোস্টাল ব্যালট সিস্টেম’ হলে দেশি-বিদেশি সবাই ভোট দিতে পারবেন। কেউ ভোটার এলাকা থেকে দূরে থাকলে ভোট দিতে পারেন না। তাদের জন্য এই পদ্ধতিতে আগাম ভোট নেওয়ার একটা বিধান থাকা দরকার। তাহলে যারা অসুস্থ, যারা দেশে থেকেও নানা কারণে ভোট দিতে পারেন না, বৃদ্ধ, বা ভোটকেন্দ্রে যেতে অক্ষম, তারা সবাই নিবন্ধন করলে সেই আলোকে নির্বাচন কমিশন দেশে এবং বিদেশের জন্য আলাদা পোস্টাল ব্যালট দেবে। তারা নিবন্ধনের মাধ্যমে আগাম ভোট দিতে পারবেন। এটা অনেকভাবেই হতে পারে। পোস্টাল ব্যালট নিকটস্থ নির্বাচন অফিস থেকে গ্রহণ করে সেখানেই দিতে পারেন। রিটার্নিং অফিসার ওইদিন এটা ট্রেজারিতে রেখে দেবেন এবং ভোট গণনার দিন সেটি নেওয়া হবে। এ ছাড়া যারা বিদেশে থাকেন তাদের পোস্টাল ব্যালট সরাসরি ইলেকশন কমিশনের কাছে পাঠাতে হবে নির্দিষ্ট খামসহ। অনলাইনেও প্রতিটি নির্বাচনী এলাকা অনুযায়ী ব্যালট দেওয়া যেতে পারে। অনলাইন কতটুকু মানুষ বিশ্বাস করবে, সেটা আমি জানি না। তবে সবগুলো অপশনই উন্মুক্ত থাকবে। যে পদ্ধতি নির্বাচন কমিশন সঠিক মনে করবে, সেটা প্রয়োগ করবে। আরও কিছু পদ্ধতি আছে। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে তা কতটুকু সম্ভব বা মানুষ গ্রহণ করবে, এটা বুঝতে পারছি না। কারণ, বেশি সময় নেই। এক বছর পর যে কোনো দিন নির্বাচন হতে পারে। 

এ ছাড়া রিপ্রেজেন্টেটিভ পিপলস অর্ডারের (আরপিও) মধ্যে কতগুলো সংশোধনীর প্রস্তাব করা হবে। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের কার কত সদস্য আছে, তাদের আয় কী, তা আমরা জানি না। এগুলো নির্বাচনী শর্ত হিসেবে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে– এসব দলের কী কী তথ্য তারা পাবলিক করবে। করলে এসব সদস্যের তথ্য মানুষ জানতে পারবে। রাজনৈতিক দলে যেসব ধারা আছে, এগুলোর মধ্যে কিছু সংযোজন-বিয়োজন করা হচ্ছে। রাজনৈতিক দলে ফান্ডের বিষয়ে পার্টি কত পাচ্ছে আর প্রার্থী কত পাচ্ছেন– সে ব্যাপারে একটি ডিসক্লোজার থাকতে হবে। খরচেরও একটি সীমা থাকবে। খরচের বিবরণ দাখিল করতে হবে। প্রতিদিনের খরচ মনিটর করতে হবে। গোপন খরচগুলো হিসাবে আসে না। ফলে কেউ জানতে পারে না। এগুলো জানারও কোনো বিধিবিধান নেই। আগে হলফনামায় বিদেশে বিনিয়োগের বিষয়ে কোনো বিধান ছিল না। এবার বিদেশে বিনিয়োগের হিসাবও দিতে হবে। দ্বৈত নাগরিক যারা তারা ভোট দিতে পারবেন; কিন্তু প্রার্থী হতে পারবেন না। নির্বাচন করতে চাইলে দ্বৈত নাগরিকত্ব ত্যাগের প্রমাণ দিতে হবে। 

নারী আসন, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদসহ আরও কিছু বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। অনেক বিষয় আবার সংবিধান সংশোধন কমিটির ওপর নির্ভরশীল। তাদের পরামর্শ কী, তাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেমন– আমরা স্থানীয় সরকার নির্বাচন সম্পর্কে বলতে চেয়েছি যে, নির্বাচন কমিশন স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দায়িত্ব পাক; যা এখন সাংবিধানিকভাবে নির্বাচন কমিশনের মূল দায়িত্বে নেই। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পরিবর্তে তারা নিজেরাই নির্বাচন ও তপশিল ঘোষণা করুক। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হবে না। রাজনৈতিক দলের লোক নির্বাচন করতে পারেন; কিন্তু তিনি দলীয় প্রতীক পাবেন না, এমন একটি ধারা আমরা স্থানীয় সরকার কমিশনে যুক্ত করেছি। 

স্থানীয় সরকার নির্বাচন সংসদীয় পদ্ধতিতে হওয়ার বিষয়ে আমরা বেশি জনমত পেয়েছি। কাউন্সিলর বা মেম্বার নির্বাচন হবে। তারাই পরিষদে গিয়ে চেয়ারম্যান বা মেয়র নির্বাচন করবেন। তাদের নেতৃত্বে ৩ থেকে ১০ সদস্যের একটি কাউন্সিল হতে পারে। তারা পূর্ণকালীন কাজ করবেন। বাকিরা স্থায়ী কমিটির মিটিংয়ে অংশ নেবেন এবং ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারবেন। একটা পরিকল্পনা, স্বচ্ছতা অনুযায়ী খরচ বরাদ্দ করা হবে। পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে। ব্যক্তি মেম্বার টাকা খরচ, ঠিকাদারি করতে পারবেন না। অনেকে বলছেন, সৎ মানুষ মেম্বার হতে পারছেন না। এ ক্ষেত্রে আমরা সরকারি চাকরিজীবী কিংবা অন্য পেশায় আছেন, যারা এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা, তাদের মেম্বার হওয়ার সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব করছি। এতে মেম্বারদের গুণগত মান বৃদ্ধি পাবে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে সংসদীয় ব্যবস্থা আকারে করতে পারলে বা মানুষ গ্রহণ করলে আমরা আরেকটা সুবিধা পাব। সেটা হলো, একই শিডিউলে সব নির্বাচন করতে পারব। এতে খরচ ও সময় দুটোই কমে আসবে। নির্বাচন হবে সরকার মেয়াদের শুরুতে কিংবা শেষে, একবার একসঙ্গে। সরকার চাইলে জাতীয় নির্বাচনের আগে সুবিধাজনক সময়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করে ফেলতে পারে একটি নির্দিষ্ট শিডিউলে। যেমন– ইউনিয়ন পরিষদের ভোটার তিনটি ভোট দেবেন– ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার, উপজেলা মেম্বার ও জেলা মেম্বারকে। একইভাবে পৌরসভায় তিনটি ভোট দেওয়া যাবে– পৌরসভা মেম্বার, উপজেলা মেম্বার ও জেলা মেম্বারকে। এবং শুধু সিটি করপোরেশনে দুটি ভোট দেওয়া যাবে জেলা ও সিটি মেম্বারকে। তাদের মধ্য থেকে চেয়ারম্যান ও মেয়র নির্বাচিত হবেন। এ পদ্ধতিতে এক শিডিউলে কয়েক ভাগে একই নির্বাচন করা যেতে পারে। এতে খরচ অনেকটা কমে আসবে। আগে এই নির্বাচনে প্রায় ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে; যা ৬০০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা সম্ভব হবে। রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব কমে যাবে। 

এখন যে তৎপরতা দেখা যাচ্ছে তাতে কিছু দলের আগে নির্বাচন করার আগ্রহ। আবার কিছু দল চায় সংস্কার হোক, তারপর নির্বাচন। সময়ের কথা কেউ বলছেন না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ২০২৫ সালের শেষে অথবা ২০২৬ সালের শুরুতে যে নির্বাচনি সময়ের কথা বলেছে, আমার মনে হয় না যেসব দল দ্রুত নির্বাচনের কথা বলছে, তাদের এই সময়কে মেনে নিয়েই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে। এর আগে সেনাপ্রধান ১৮ মাসের কথা বলেছিলেন। আমরা বলতে পারি নির্বাচনের একটি টাইমলাইন আমরা পেয়েছি। নির্বাচন হচ্ছে এটাও নিশ্চিত করা হয়েছে। রাজনৈতিক দল গঠন, দল নিয়ে আশা-আকাঙ্ক্ষা এগুলো তাদের নিজস্ব ব্যাপার। জনগণ হয়তো সংস্কার এবং নির্বাচন দুটোই চায়। শিগগিরই ছয়টি কমিশনের রিপোর্ট জমা পড়বে। ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান ছয় কমিশন প্রধানের সঙ্গে একটা কমিটি করে সংলাপ ও সচেতনতার কাজটি করবেন। এটি যত তাড়াতাড়ি হবে ততই ভালো। 

সব সংস্কার এই সরকার করতে পারবে না, এটা সরকারও জানে; দেশবাসীও জানে। সংবিধান সংশোধনের রূপরেখা পাবেন এবং এর ভিত্তিতে নির্বাচনের পরে সংশোধন করতে হবে। এখানে একটি বিষয় ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে, অনেকে মনে করছেন তারা সংবিধান লিখে ফেলছেন। তারা সংবিধান লিখছেন না; কিন্তু এই সংবিধানকে গণতান্ত্রিক, কার্যকর একটি দলিল কীভাবে করবেন, এ নিয়ে কাজ করছেন– ফলে এখানে কিছু সংস্কার দরকার। কমিশন থেকে যে রূপরেখা আসবে, এতে শতভাগ সহমত থাকবে, এমন কোনো কথা নেই। কিছুটা হলেও তো আপনি সহমত পোষণ করবেন। সেটাই নির্বাচিত সংসদ করবে। 

আগে সব দলই বলেছে স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করুন। ফলে শুধু কতগুলো কমিশন হয়েছে; অনেক সুপারিশ এসেছে; এগুলোর কতগুলো বাস্তবায়ন হয়েছে? এখন একটা কমিশন হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হবে কিনা, এটারও একটা জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে। দেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেল একসময়। এখনও দুর্নীতি আছে। দুর্নীতি দমন কমিশন আছে। এই কমিশনও কিছু সুপারিশ করছে। এর ব্যবহারিক প্রয়োগ কতটা হবে, তা নির্ভর করবে ঐকমত্য বা জনসচেতনতার ওপর। কিছু জিনিস এ সরকারই বাস্তবায়ন করতে পারবে। যেমন– স্থানীয় সরকারের পুরো বিষয়টা। কারণ, এখানে সংবিধান সংশোধনের বিষয় নেই, শুধু আইন সংশোধনের বিষয় আছে। বিচার বিভাগের সংস্কারের ক্ষেত্রে আছে সংবিধানের প্রশ্ন, কিছু বিষয় প্রধান বিচারপতির আদেশে হতে পারে। আমাদের কমিশন থেকে বলেছি, প্রশাসনের সব স্তরে গিয়েছেন কিন্তু উপজেলা পর্যায়ে কেন যান না। দেশে কি আইনের অভাব, প্রশিক্ষণ দিয়ে বিচারক নেন, উপজেলা পর্যন্ত দেওয়ানি আদালত সম্প্রসারণ করেন, তাহলে বিচারব্যবস্থায় মানুষের অভিগমন বাড়বে। সরকার সহমত পোষণ করলে প্রধান বিচারপতির একটি আদেশই যথেষ্ট। এটাসহ এমন অনেক বিষয় আছে, যা বাস্তবায়ন করতে সংবিধান সংশোধন করতে হবে না।

আমার দৃষ্টিতে আগামী এক বছর দু্টো জিনিসই বিরাজমান থাকবে। একটি হচ্ছে, সংস্কার; বিষয়টি ঐকমত্যে এসে ঠিক করা, কোনটা দ্রুত করা যায় আর কোনটা সরকার পরিবর্তন হলে করবে এবং সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর কত দিনের মধ্যে করবে, এমন একটা সময় দিতে হবে। স্থানীয় সরকারেরও অনেক বিষয় আছে, যেগুলো সময় নিয়ে করতে হবে। আমরা করে যেতে পারব না। যেমন– দেশ খুব দ্রুত নগরায়ণ হচ্ছে। ফলে নগর ও গ্রামের পার্থক্য কমিয়ে খরচ ও সেবা বাড়িয়ে নতুন ফর্মুলা দিতে হবে। একটি কমিশন গঠন করা যেতে পারে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় এমন একটি কমিশন গঠন করা হয়েছিল; যা আওয়ামী লীগ সরকার বাতিল করেছিল। এই সরকারের আমলেই একটি কমিশন গঠন করা যেতে পারে। কমিশন আস্তে আস্তে প্রস্তাব করবে, স্থানীয় সরকারের আইনকানুন কীভাবে সংস্কার হবে এবং নিয়মিতভাবে সরকারকে সহায়তা করবে। 

এ বছরের আরেকটা আলোচিত বিষয় হলো, নির্বাচনের প্রস্তুতি। রাজনৈতিক দলগুলোকে মানুষের সঙ্গে আলোচনা, রূপরেখা প্রণয়ন করতে হবে। শুধু নির্বাচন চাই বললেই হবে না, নির্বাচিত হলে কী করবেন, তার একটা রূপরেখা দিতে হবে। অনেক দলই এই রূপরেখা দিয়েছেন, জাতীয় সরকার গঠনের কথা বলেছেন, এসব খুবই ইতিবাচক। এগুলো আরও পরিষ্কার করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলো যেসব আলোচনা করে, তা তাদের নিজের দলের লোকজনের সঙ্গেই করে। দলের বাইরে, নিরপেক্ষ লোকদের নিয়ে তেমন কোনো কথা বলেন না, তাদের কথাও শোনেন না। এটা নির্মম হলেও সত্য। এ কথা আমরা কেউ বলি না। শুধু নিজের দলের কর্মীদের নিয়ে একটা বিবৃতি দিলেন, তা ইতিবাচক হতে পারে; তবে এর বাইরেও অন্য দল, নাগরিক সমাজ, সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলতে হবে। আগামী এক বছর এ বিষয়গুলো প্রাধান্য পাবে। নিজের দলে, গ্রুপে; আজকাল ফেসবুকে, ইউটিউবেও আলোচনা হচ্ছে। এগুলো ফেলনা নয়।

আরেকটা জিনিস আমি মনে করি, আমরা ভারত, মিয়ানমার বা রাখাইন অঞ্চলে সৈন্যবাহিনীর মুখোমুখি আছি কৌশলগতভাবে। এ ক্ষেত্রে আমরা কী করব ভবিষ্যতে। আমাদের বন্ধু-শত্রু এসবের মূল্যায়ন করেই আমাদের জাতীয় ঐকমত্যে আসতে হবে। শুধু সংস্কার না, অনেক প্রশ্ন আছে, যেগুলো নিয়ে আমাদের কথা বলতে হবে। এ ছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টি বড় হয়ে দেখা দেবে আগামী সংবিধানে। বদিউল আলম মজুমদারের নেতৃত্বে আমরা পাঁচজন যে মামলটি করেছিলাম, সেই মামলার রায়ের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে গেছে। সংবিধানের ৫৫টি জায়গায় যে সংশোধন হয়েছিল, সেগুলো বাতিল হয়ে যাবে বা হওয়ার আশঙ্কা আছে। সব বাতিল করা হয়নি কিন্তু এটি সুপ্রিম কোর্টে যাবে, শুনানি-রায়ের মাধ্যমে হবে। আগামী নির্বাচিত সংসদের ওপর বড় বিষয় আসবে– তারা কীভাবে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে পুনর্গঠন করবে। এটা একটা স্থায়ী বিষয় হয়ে যাবে। ফলে পরবর্তী নির্বাচনগুলো নির্বিঘ্নে হবে বলে আমার বিশ্বাস। 

লেখক: অধ্যাপক, গবেষক
স্থানীয় সরকার বিষয়ক কমিশনের প্রধান

আরও পড়ুন

×