ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

ঝুঁকি জেনেও পরিত্যক্ত ভবনে বসবাস

ঝুঁকি জেনেও পরিত্যক্ত ভবনে বসবাস

কুমারখালী পৌরসভার কুণ্ডুপাড়া এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিটিশ আমলে নির্মিত চুন-সুরকির ভবন - সমকাল

মিজানুর রহমান নয়ন, কুমারখালী (কুষ্টিয়া)

প্রকাশ: ১৭ জুলাই ২০২৩ | ১৮:০০

হালকা বাতাসেই কেঁপে ওঠে ভবনগুলো। একাধিক স্থানে ফাটল। তা দিয়ে বৃষ্টির পানি চুইয়ে পড়ে। নষ্ট করে দেয় আসবাব। পরগাছাগুলো দেয়াল ভেদ করে ছড়িয়ে পড়েছে ভবনজুড়ে। দেয়াল, সিঁড়ি, ছাদ ধসে পড়ার উপক্রম। আট বছর আগে পরিত্যক্তও ঘোষণা করেছে ভূমি অফিস। বিকল্প না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেড়শ বছরের পুরোনো ভবনে বসবাস করছেন পাঁচ শতাধিক মানুষ।

এ চিত্র কুমারখালী পৌরসভার কুণ্ডুপাড়া এলাকার। এখানকার অর্ধশতাধিক জরাজীর্ণ ভবনে বসবাস করছেন বাসিন্দারা। যে কোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকলেও তা সংস্কারের পদক্ষেপ নেই। ২০১৫ সালে জেলা প্রশাসন থেকে পৌরসভার কাছে কুণ্ডুপাড়ার পুরোনো ভবনগুলোর হালচাল জানতে চাইলে ভূমি অফিস সরেজমিন তদন্ত করে ৪৬টি চুন-সুরকির ভবন চিহ্নিত করে। এর মধ্যে ২০টি অর্পিত সম্পত্তি, বাকিগুলো ব্যক্তিমালিকানার। সবক’টি ভবনই ঝুঁকিপূর্ণ। সেগুলো অপসারণের ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হলেও কাজ হয়নি। পৌরসভার এ হিসাবের বাইরেও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রয়েছে।

একটি ভবনের বাসিন্দা ৭৫-ঊর্ধ্ব নুরুল ইসলাম বলেন, ২৫ বছর আগে সরকারের কাছ থেকে ভবন লিজ নিয়েছি। এরও অনেক আগে ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এখন ঘরের রড বের হয়ে গেছে। বৃষ্টি হলে ঘরে পানি জমে। সামান্য বাতাস এলেই ভয় হয়; কখন ঘর ভেঙে পড়ে! কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। জীবন হাতে নিয়ে বসবাস করছি।

আছিয়া খাতুন জানান, পাকিস্তান আমল থেকে কুণ্ডুপাড়ায় বাস করছেন। দোতলা ভবনের জানালা-দরজা অনেক আগেই ভেঙে গেছে। প্রতিদিনই ইট-সুরকি খসে পড়ছে। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় দুই ছেলে, বউ, নাতিদের নিয়ে বাস করছেন তিনি।

জানা গেছে, দেড়শ বছর আগে কুমারখালী পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড কুণ্ডুপাড়ায় অর্ধশতাধিক ভবন নির্মাণ করে বিত্তশালী কুণ্ডু বংশধররা। স্বাধীন হওয়ার অনেক আগেই তারা দেশ ছেড়ে চলে যায়। এর মধ্যে কিছু বাড়ি সরকারের পক্ষ থেকে লিজ দেওয়া হয়েছে। অনেকেই দেশ ত্যাগের আগে বিক্রি করে গেছেন বলে জানিয়েছেন বসবাসকারীরা।

৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. ফরিদ খান বলেন, ভবনগুলো এখন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সরকারিভাবে সংস্কারের দাবি জানান তিনি।

কুমারখালী শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব আলী জানান, কুণ্ডুপাড়ায় দেড়শ থেকে তিনশ বছরের ভবন রয়েছে। এগুলো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। সেগুলো অপসারণ করা উচিত।

পৌরসভার মেয়র সামছুজ্জামান অরুণ বলেন, পৌরসভার পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার মাইকিং করে ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। নোটিশও দেওয়া হয়েছে। এর পরও বাসিন্দারা সরছেন না। প্রশাসনকেও জানানো হয়েছে। কেউ পদক্ষেপ না নিলে, পৌরসভার পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিতান কুমার মণ্ডল বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো পরিদর্শন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন

×