ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে রোগী ও ময়লার স্তুপ একই ওয়ার্ডে

ছবি: সমকাল
ফরিদপুর অফিস
প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০২৩ | ০১:০৬ | আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২৩ | ০১:১৮
ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেঝেতে রোগীর পাশেই রয়েছে ময়লার স্তুপ। হাসপাতালটির মেডিসিন ওয়ার্ডে এখন আর রোগী সেবার দেওয়ার মত পরিস্থিতি নেই। ময়লা-আবর্জনায় ঠাসা রয়েছে টয়লেট। পাশেই ডাবের মালার (খোলা) স্তুপ। রয়েছে ডাস্টবিন ভরা পঁচাগলা আবর্জনা।
দুর্গন্ধটা প্রতিনিয়ত ভেসে ভেসে রোগীর নাকে প্রবেশ করছে। মাত্র তিন মিটার দূরেই রয়েছে পঁচাগলা দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা আবর্জনা। টয়লেটটিও অপরিষ্কার আর সেখানেও ডাবের খোলা। মুখে কাপড় চেপে ঢুকতে হয় টয়লেটে। গন্ধটা এত বেশি যে, বমি চলে আসার মতো অবস্থা। যেখানে সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে পড়ার উপক্রম।
গত কয়েক দিনে ডেঙ্গু রোগীর চাপ সামলাতে হিমিশিম খান মেডিকেলের চিকিৎসক ও নার্সেরা। তাদের ময়লা পরিষ্কার করার ফূরসত নেই যে। ওয়ার্ড বয় নার্সের সংখ্যা এত কম যে বেতাল অবস্থা কর্তৃপক্ষের। অন্যদিকে রোগী এত বেশি যে মেঝেতেও জায়গা সংকুলান করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।
রোগীদের অভিযোগ, তারা সঠিক সেবা পাচ্ছেন না। পাশাপাশি হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোর টয়লেটের অবস্থা খুবই খারাপ। নোংরা ও অপরিষ্কার থাকায় রোগী এবং তাদের স্বজনদের পড়তে হচ্ছে বিপাকে। অপরিষ্কার টয়লেটের পাশেই একটি জায়গায় রাখা হচ্ছে ময়লা আবর্জনা। টয়লেট এবং ওই ময়লার স্তুপের দুর্গন্ধে অসুস্থ হয়ে পড়ছে রোগীর স্বজনরা।
সরেজমিনে শনিবার হাসপাতালটির মেডিসিন ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, ওয়ার্ডের রোগী ও তাদের স্বজনদের ব্যবহারের জন্য যে টয়লেট রয়েছে, সেটি অপরিষ্কার ও নোংরা। টয়লেটের পাশেই রাখা হয়েছে ডাবের খোলা, তার পাশেই রয়েছে ময়লার স্তুপ। দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে ওয়ার্ডের মধ্যে।
মেডিসিন ওয়ার্ডে সাধারণ রোগীর পাশাপাশি ডেঙ্গু রোগীরাও ভর্তি রয়েছেন। মেঝেতে মশারি ছাড়াই রাখা হয়েছে ডেঙ্গু রোগীদের। সাধারণ রোগীরাও রয়েছে ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে।
মেডিসিন ওয়ার্ডের ডেঙ্গু রোগীর স্বজন হাসিনা খাতুন বলেন, ‘মেডিসিন ওয়ার্ডের টয়লেটের অবস্থা খুব খারাপ। যাওয়ার পরিবেশ নেই। নাকে রুমাল দিয়ে যেতে হয় টয়লেটে। এছাড়া পাশেই ময়লা আবর্জনার স্তুপ করে রাখা হয়েছে। সেখান থেকে দুর্গন্ধ আসে। এ পরিবেশে রোগীদের স্বজনরাও অসুস্থ হয়ে পড়ছে।’
চিকিৎসাধীন আরেক রোগীর স্বজন কলেজ ছাত্রী সূচনা সারথী বলেন, ‘টয়লেটের অবস্থা খুবই খারাপ। একাধিকবার হাসপাতালের লোকজনদের বললেও তারা এ ময়লা আবর্জনা সরাচ্ছে না। টয়লেটে গেলে দুর্গন্ধে বমি আসে। টয়লেটে গেলে রোগী আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছে।’
একাধিক চিকিৎসাধীন রোগী অভিযোগ করে বলেন, এ ওয়ার্ডে সাধারণ রোগীদের পাশাপাশি ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদেরও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। মশারি ব্যবহার না করায় আমরা সাধারণ রোগী ও স্বজনেরা ঝুঁকিতে রয়েছি। আবার এসব ময়লার স্তুপ থেকেও ডেঙ্গু উৎপন্ন হতে পারে। চিকিৎসা নিতে এসে সুস্থ হওয়ার বদলে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে জানান তারা।
মাগুরা থেকে চিকিৎসা নিতে আসা কাওসার আহমেদ নামে এক যুবক বলেন, ‘হাসপাতালটির সেবার মানও ভালো না। দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিন অসংখ্য রোগী আসেন এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে। হাসপাতালটির স্টাফদের সঙ্গে কথাই বলা যায় না। কিছু জানতে চাইলেই চটে ওঠেন।’
কাওসার আরও বলেন, ‘সরকারি চাকরি করেন বলে খেয়াল খুশি মতো চলেন স্টাফরা। অভিযোগ কার কাছে দেব, সবাই একই। তাই কিছু বলার নেই। আমার এক ভাই ভর্তি হয়েছে। চিকিৎসা চলছে, কোনোরকম সুস্থ হলেই এখান থেকে সরতে পারলে বাঁচি।’
ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মুহা. এনামুল হক বলেন, ‘প্রতিদিনই নতুন করে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছে। চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সদের।’
হাসপাতালের পরিচালক আরও বলেন, ‘আজ ছুটির দিন একারণে হয়তো ময়লা আবর্জনা সরায়নি। মেডিসিন ওয়ার্ডের যেখানে ময়লা আছে সেখানেই ময়লা রাখা হয় পরে সরিয়ে ফেলা হয়। আগামীকাল সরিয়ে ফেলবে। ময়লা যাতে জমে না থাকে বিষয়টি আমি খেয়াল রাখব।’