ফিলিস্তিনিদের সংগ্রামে সংহতি জানালেন রাবি শিক্ষার্থীরা

ফিলিস্তিনিদের প্রতিবাদী ও স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেন। ছবি: শরিফুল ইসলাম তোতা
রাবি সংবাদদাতা
প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২৩ | ০৯:৪৬ | আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২৩ | ১০:০১
ইসরায়েলী অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে মুক্তিকামী ফিলিস্তিনিদের প্রতিবাদী ও স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দের’ ব্যানারে বুধবার সকাল ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ সিনেট ভবনের সামনে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে তারা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবার একই স্থানে এসে মিলিত হয়।
সমাবেশে শিক্ষার্থীরা ‘ইসরাইল আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সংসদে নিন্দা প্রস্তাব পাশ করতে হবে’, ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকরব’, ‘বাংলাদেশে ইসরাইল সংশ্লিষ্ট সকল পণ্য ও ব্র্যান্ডকে অবৈধ ঘোষণা করতে হবে’, ‘ইন্তিফাদা ইন্তিফাদা জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’, ‘ইসরাইল নিপাত যাক, ফিলিস্তিন মুক্ত পাক’ ইত্যাদি লেখা সম্বলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন ও মিছিলে স্লোগান দেন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, বায়তুল মোকাদ্দাস মুসলমানদের স্মৃতি বিজড়িত স্থান। আমরা শুধু ফিলিস্তিনিদের পক্ষে না, আমরা সকল নির্যাতিত মানুষের পক্ষে। ফিলিস্তিনের মানুষের দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার পর যখন প্রতিবাদ করেছে, তখন পশ্চিমা বিশ্ব তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী আখ্যা দিচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে দখলদার ইসরায়েল ফিলিস্তিনের ওপর আগ্রাসন চালিয়ে আসছে। ইসরায়েলি আগ্রাসন থেকে ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দিতে হবে।
বক্তারা আরও বলেন, আজকের এই লড়াই কোনো জাতি বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নয়, এটি মানবতার পক্ষে লড়াই। যারা মানবাধিকার বা মৌলিক অধিকারের কথা বলে তারা আজ চেয়ে চেয়ে দেখছে। পশ্চিমারা আমাদের অনেক উপদেশ দেয়, কিন্তু ফিলিস্তিনিদের কথা আসলে তারা চুপ করে থাকে। যুদ্ধাপরাধ সবচেয়ে নিকৃষ্ট অপরাধ। মানবিকতা ও নৈতিকতার প্রশ্নে আর আপোষ নয়। সেইসঙ্গে আরব লীগ এবং মুসলিম বিশ্বকে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে সমর্থন এবং অস্ত্রসস্ত্র সরবারাহের আহ্বান জানান তারা।
এ সময় অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, মজলুমের সঙ্গে জালেমের সংঘাত হচ্ছে ইসরায়েল আর ফিলিস্তিনের মধ্যে সংঘাত। এর পেছনে ভূ-রাজনীতি, ধর্মীয় বিষয় এবং আন্তর্জাতিক স্বার্থ জড়িত। ইহুদিরা ফিলিস্তিনের মধ্যে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি নিপীড়কের ভূমিকা পালন করছে। ইহুদিদের এখন যে ইউরোপিয়ানরা মদদ দিচ্ছে, একসময় তাদের কাছেই তারা সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছে। প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইহুদিদের আশ্রয়স্থল ছিল এই আরব বিশ্ব। আমরা তখন তাদের তাড়িয়ে দেইনি বা জার্মানদের হাতে তুলে দেইনি। এখন সেই পরিণতি পাচ্ছি আমরা।
সালেহ হাসান নকীব আরও বলেন, আবেগ এবং ধর্মীয় অনুভূতি দিয়ে এই সমস্যার সমাধান হবে না। বর্তমান পৃথিবী একটি স্বার্থনির্ভর পৃথিবী। পশ্চিমারা অন্য বিষয় নিয়ে সবসময় ওয়াজ নসিহত করে। কিন্তু ইসরায়েল বিষয়ে তারা একদম চুপ। মানুষ হিসেবে এই বিষয়ে তারা অত্যন্ত নিচু মানুষিকতার পরিচয় দেয়। এইসব বিষয়ে পশ্চিমকে পরোয়া করার দরকার নেই। তাদের তুলনায় আমাদের অবস্থান শতগুণে ন্যায্য এবং ন্যায়সঙ্গত। আমাদের পক্ষে যতটুকু সম্ভব ফিলিস্তিনের পাশে থাকবো।
অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ বাংলাদেশ সরকার ও অন্যান্য দেশের প্রতি আহ্বান জানা ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী ও স্বাধীনতাকামী মানুষের পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য। তিনি বলেন, ফিলিস্তিনিদের মৃত্যুতে মানবাধিকারকর্মীরা চেয়ে চেয়ে দেখছে। মুসলিমরা তাদের অধিকার নিয়ে কথা বললেই তথাকথিত মানবাধিকার কর্মীরা মুসলিম বাহিনীদের সন্ত্রাসী আখ্যা দেন। সেখানে এমন কোনো ঘর পাওয়া যাবে না, যে কোনো শহীদ নেই। গাজাবাসীর হারানোর কিছু নেই। ইহুদিরা প্রতিবার সিয়াম (রোজা) সাধনার সময় একবার হলেও হামলা করে। আজকের এই লড়াই কোনো জাতি বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নয়, এটি মানবতার পক্ষে লড়াই।
আরবি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী জাহিদ হাসানের সঞ্চালনায় এ সময় বিভিন্ন বিভাগের প্রায় ২০ জন শিক্ষার্থী বক্তব্য দেন। সমাবেশে প্রায় চার শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।