‘আপাতত কিছু টাকা দিয়ে দোকান চালান এরপর আবার দিয়েন’
ছাত্রলীগ নেতার চাঁদাবাজির অডিও রেকর্ড

ফাইল ফটো
রাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৩ মার্চ ২০২৪ | ২২:০৬
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। তাদের চাঁদাবাজির সময়কার কথোপকথনের একটি অডিও রেকর্ড সমকালের হাতে এসেছে। রেকর্ডটিতে ওই দুই ছাত্রলীগ নেতাকে এক খাবারের দোকানির কাছে দশ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করতে শোনা গেছে। এ সময় তাদের বলতে শোনা যায়, বিষয়টি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ‘কনসার্নে’ আছে।” চাঁদা না দিলে দোকান বন্ধের হুমকিও দেন তারা।
চাঁদা দাবি করা ওই দুই ছাত্রলীগ নেতা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদ হাসান সোহাগ এবং শহীদ হবিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও ওই হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা মিনহাজুল ইসলাম। তাদের মধ্যে সোহাগ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিবের অনুসারী এবং মিনহাজ ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর অনুসারী।
মঙ্গলবার ইফতারের পর ক্যাম্পাসের এক খাবারের দোকানে গিয়ে চাঁদা দাবি করেন ওই দুই ছাত্রলীগ নেতা। একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী দোকানি সমকালকে চাঁদা দাবির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অডিও রেকর্ডে ছাত্রলীগ নেতা সোহাগ দোকানিকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘‘ভাইয়ের নাম মিনহাজ। আমার নাম সোহাগ। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংগঠনিক সম্পাদক। এই বিষয়টা প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারির কনসার্নে আছে। যেহেতু দুই দিক থেকে আইছি, এখন বুঝতে হবে কনসার্নে আছে।’
সোহাগ আরও বলেন, ‘এর আগেও আমি আর সাদিক ভাই (শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক) একদিন এসেছিলাম। আপনি বললেন, সমস্যা নাই মিনহাজ ভাইয়ের সঙ্গে আপনার কথা হয়েছে। আপনি যেহেতু কুলাইতে পারবেন না, তো ডেট নিয়েছেন ১২ তারিখ পর্যন্ত।’ এরপর দোকানিকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি দিতে পারব না। আমার যেখান থেকে টাকা পাওয়ার কথা ছিল, সেখান থেকে পাইনি। এখন সেই টাকাটা পেলে দিতে পারতাম।’
পরে মিনহাজ দোকানিকে বলেন, ‘ভাই আপনার মনের কথাটা খুলে বলেন তো।’ দোকানি উত্তর দেন, ‘আমি আসলেই দিতে পারছি না। দিলে দেনায় (ঋণ) পড়ে যাব।’
তারপর মিনহাজকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনি একটা কাজ করেন, আপাতত কিছু টাকা দেন। দিয়ে দোকান চালান। এরপর আবার দিয়েন। এটাই করেন। আপনার ওপর চাপ দিলাম না। আস্তে ধীরে দেন। আপনাকে আর কেউ ডিস্টার্ব করবে না। কারও সাহস নাই। আপনি যদি মনে করেন, এই সাংবাদিক-মাংবাদিকদের বলবেন, এটা আপনার ভুল সিদ্ধান্ত।’
সঙ্গে সোহাগ যোগ করেন, ‘যে কোনো জায়গা থেকে যা সাপোর্ট লাগে আমরা দেব। আমাদের একটা সম্পর্ক তৈরি হবে। আমরা ভাই-ব্রাদার হয়ে যাব। আপনি আমাদের দেখবেন, আমরা আপনাকে দেখব। এটাই স্বাভাবিক। আপনি আজকে কিছু দেন।’
এক পর্যায়ে দোকানিকে ভয় দেখিয়ে মিনহাজকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি চাইলে ছেলেপেলে নিয়ে এসে ব্যবসা নষ্ট করে দিতে পারতাম।’ মিনহাজের কথার সঙ্গে যোগ করে সোহাগ দোকানিকে বলেন, ‘আপনার সাথে আমার খারাপ সম্পর্ক হবে, এর বাইরে কিন্তু কিছুই না। দিন শেষে ক্ষতি হবে আপনারই। এই যে চাঁদাবাজির নিউজ-টিউজ হলো, আপনি দেখলেন। কী হইল? আমারও কিছুই হবে না।’
দোকানি তাদের বলেন, ‘‘আমার কি লাখ টাকার ব্যবসা ভাই? পাঁচ টাকার ব্যবসা করতে এসে দশ হাজার টাকা দেওয়া লাগবে। আমি দোকানই বন্ধ করে দেব। ডাইনিংয়ে কাজ করি, ওই কাজই করব।’
চাঁদাবাজির বিষয়টি অস্বীকার করে শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদ হাসান সোহাগ বলেন, ‘রোজা-রমজানের মাসে আমি কেন চাঁদা চাইতে যাব। সন্ধ্যায় তো ইফতারির সময়। গতকাল সন্ধ্যায় আমি ইবলিশ মাঠে ইফতারি করছিলাম। আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট।’
মিনহাজুলও অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘এ ধরনের কোনো কাজের সাথে আমার সম্পৃক্ততা নেই। আমার নামে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ রটানো হচ্ছে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানি না। তবে অভিযোগ প্রমাণিত হলে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জায়গা আছে।’
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণ সাপেক্ষে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
- বিষয় :
- ছাত্রলীগ
- রাবি ছাত্রলীগ
- চাঁদাবাজি
- হুমকি
- চাঁদা দাবি