অতিরিক্ত সেচ খরচ আদায়, বিপাকে বোরো চাষিরা

ছবি: ফাইল
হালুয়াঘাট (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা
প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২৪ | ০৬:২২ | আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৪ | ১৪:০৭
সেচপাম্প মালিকদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। একরপ্রতি দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছেন বোরো চাষিরা। বাড়তি টাকা দিতে রাজি না হলে ক্ষেতে সেচ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। হালুয়াঘাট উপজেলার কৈচাপুর ও বিলডোরা ইউনিয়নে এমন ঘটনা ঘটেছে। প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।
উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, হালুয়াঘাটে চলতি মৌসুমে ২২ হাজার ৮৪৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে কৈচাপুর ইউনিয়নে প্রায় ২ হাজার হেক্টর বিলডোরা ইউনিয়নে ১ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ করা হয়েছে। কৈচাপুর ইউনিয়নে ৩০-৪০টি, বিলডোরা ইউনিয়নে ৪০-৪৫টি গভীর ও অগভীর নলকূপ রয়েছে। যার কয়েকটি বিএডিসি ও অধিকাংশ ব্যক্তিমালিকাধীন। এসব নলকূপের মাধ্যমে বোরো ক্ষেতে সেচ দিচ্ছেন চাষিরা।
গত ১ জানুয়ারি উপজেলা সেচ কমিটি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভুবনকুড়া, জুগলী, কৈচাপুর, হালুয়াঘাট, গাজিরভিটা ইউনিয়নে একরপ্রতি সেচমূল্য সাড়ে ৪ হাজার টাকা নির্ধারণ করে। বিলডোরাসহ বাকি ছয়টি ইউনিয়নে একরপ্রতি সেচমূল্য ৪ হাজার টাকা নির্ধারণ করে। নির্ধারিত টাকার বেশি সেচমূল্য নেওয়া হলে নলকূপ মালিকের লাইসেন্স বাতিলসহ আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু কৈচাপুর ইউনিয়নে একরপ্রতি সেচ দিতে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা, বিলডোরা ইউনিয়নে ৬ হাজার টাকা নির্ধারণ করেছেন সেচপাম্প মালিকরা। এতে বিপাকে পড়েছেন বোরো চাষিরা। বাড়তি টাকা দিতে রাজি না হলে সেচ বন্ধ করার হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে চাষিদের অভিযোগ। নিরূপায় হয়ে নলকূপ মালিকদের সিদ্ধান্ত মুখ বুঝে মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। এতে খরচের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। যে কারণে ফসল ঘরে তুলেও লাভের মুখ দেখবেন কিনা, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন চাষিরা।
কড়ইকুড়া গ্রামের একজন কৃষক জানান, ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা খরচ করে ছয় একর জমিতে বোরো চাষ করেছেন। একরপ্রতি সেচ খরচ ৭ হাজার টাকা দাবি করছেন সেচপাম্প মালিকরা। এরই মধ্যে ২০ হাজার টাকা দিয়েছেন। তিনি বলেন, এত টাকা যদি আবাদ খরচ হয়, তাহলে ফসল কেটে বিক্রি করেও তো কোনো লাভ হবে না। তাহলে চাষাবাদ করে লাভ কী?
বিলডোরা গ্রামের আরেক কৃষক বলেন, ‘নাম প্রকাশ করলে হয়তো সেচ বন্ধ কইরা দিবো। তখন তো ক্ষেত শুকাইয়া মইরা যাবো। একরপ্রতি সেচ খরচ ৬ হাজার টাকা দাবি করছেন নলকূপ মালিকরা। কিছু কম দিতে চাইলে নিতে চান না।’
ফকিরপাড়া গ্রামের কৃষক বলেন, ‘দুই একর জমিতে সেচ দিতে ১২ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। আরও ২ হাজার টাকা দাবি করছেন। প্রায়ই ফোনে তাগাদা দেওয়া হইতাছে। না পারতাছি কাওরে বলতে, না পারতাছি মাইনা লইতে। সরকারিভাবে এর একটা সুরাহ করলে কৃষকগর বিরাট উপকার অইতো।’
অভিযোগের বিষয়ে কথা হয় কড়ইকুড়া গ্রামের অগভীর নলকূপ মালিক রিয়াজ উদ্দিনের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, এখানে বিদ্যুতের খরচ বেশি হয়। তাই একরপ্রতি ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা সেচ খরচ নেওয়া হয়। সরকারের নির্ধারিত মূল্য সম্পর্কে কিছু জানেন না বলে দাবি তাঁর।
তবে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কড়ইকুড়া গ্রামের গভীর নলকূপের মালিক মোকাম্মেল হক। তাঁর দাবি, এক একর জমিতে সেচ খরচ ৫ হাজার টাকা নেওয়া হয়। অধিকাংশ কৃষক ঠিকমতো টাকাই দেন না। যদি কৃষকরা বলে থাকেন, তাহলে মিথ্যা বলেছেন। সেচ কমিটির মূল্য নির্ধারণের বিষয়ে জানেন না তিনি।
বিলডোরা ইউপি চেয়ারম্যান সাবজাল হোসেন খান জানান, তাঁর কাছে এখনও কেউ অভিযোগ দেননি। ৪ হাজার টাকার বেশি নিলে অন্যায় করেছেন। তবে কেউ অভিযোগ দিলে দেখবেন তিনি।
কৈচাপুর ইউপি চেয়ারম্যান জাহিদ আহমেদ সারোয়ার বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার জানা নেই। এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ নিয়ে আসে নাই।’
সেচ কমিটির সদস্য উপজেলা কৃষি কমকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, এরই মধ্যে উপজেলা সেচ কমিটির মাধ্যমে ইউনিয়নভিত্তিক সেচমূল্য একরপ্রতি ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে অবশ্যই সেচ কমিটির নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।