ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

জলঢাকা

চিকিৎসক সংকটে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, রোগীর দুর্ভোগ

চিকিৎসক সংকটে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, রোগীর দুর্ভোগ

ছবি: সংগৃহীত

 জলঢাকা (নীলফামারী) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৪ | ০৫:১৪

জনবল সংকটে ধুঁকছে নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। বিশেষ করে চিকিৎসক সংকটের কারণে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন উপজেলার প্রায় পাঁচ লাখ বাসিন্দা। প্রতিদিন বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে প্রচুর সংখ্যক রোগী ভিড় করছেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। তাদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্তব্যরত গুটিকয়েক চিকিৎসক।

রবি ও সোমবার সরেজমিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, আউটডোর ও জরুরি বিভাগে প্রচুর সংখ্যক রোগীর লাইন। বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরে দেখা যায়, নির্ধারিত বেডের পাশাপাশি মেঝেতে এবং করিডোরে বিছানা পেতে রোগীরা চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা বেলাল, জাহেদুল ও পরবানন্দ নামে কয়েকজন রোগী জানান, হাসপাতালে সবসময় রোগীর ভিড় থাকে। চিকিৎসক দেখাতে হলে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। অনেকে গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েন। ভর্তি রোগীরা ফাঁকা শয্যা না পেয়ে হাসপাতালের মেঝেতে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হন।

জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক আমির আযম বলেন, এখানে সবসময় রোগীর চাপ থাকে। রোববার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত তিনি ৭৭ রোগীকে দেখেছেন। আরও অনেক রোগী এখনও তাঁকে দেখানোর অপেক্ষায় আছেন।

হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডের ১৯ নম্বর বেডের ইয়াকুব আলী ও ২০ নম্বর বেডের শফিকুল অভিযোগ করে জানান, এখানে ডাক্তার কম থাকায় তারা ঠিকমতো চিকিৎসা পাচ্ছেন না। তারা দু’দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এর মধ্যে একদিন ডাক্তার এসে তাদের দেখে গেছেন।

সিনিয়র স্টাফ নার্স সুমন জানান, ডাক্তারের সংকট আছে। কিন্তু তারা রোগীদের নিয়মিত সেবা প্রদান অব্যাহত রাখতে চেষ্টা করছেন।

জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আউটডোরে চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন ৭১ হাজার ২১০ জন। জরুরি বিভাগে চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন ২৭ হাজার ৭৩৮ জন। হাসপাতালে ভর্তি হয়ে স্বাস্থ্যসেবা নেওয়া রোগীর সংখ্যা ৯ হাজার ৪৫৯ জন। কিন্তু বিপুল সংখ্যক রোগীকে সেবা দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত জনবল নেই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে। 

জানা যায়, ১৯৬৮ সালে ৩১ শয্যা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। পরবর্তী সময়ে ২০১১ সালে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। মঞ্জুরিকৃত জনবল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে দেওয়া হয়নি। এখানে মোট পদসংখ্যা ১৯৯ জন। এর মধ্যে কর্মরত রয়েছেন ১১৯ জন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ চিকিৎসকের ঘাটতি প্রকট। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোট ৩৩ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও কর্মরত রয়েছেন মাত্র ১১ জন। এ ছাড়া তৃতীয় শ্রেণির ১০৪টি পদ থাকলেও কর্মরত আছেন ৫৮ জন, চতুর্থ শ্রেণির ২৮টি পদের মাত্র ১৫ জন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত আছেন। আলট্রাসনোগ্রাম মেশিনসহ হাসপাতালের নানা মেশিন ও সরঞ্জামও জনবল সংকটের কারণে নিয়মিত ব্যবহার করা যাচ্ছে না অথবা পড়ে রয়েছে। 

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এ.এইচ.এম রেজওয়ানুল কবির বলেন, হাসপাতালটিতে ২৪ ঘণ্টা স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধ সরবরাহ স্বাভাবিক থাকায় রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। সেই তুলনায় মঞ্জুরিকৃত জনবল না থাকায় স্বাস্থ্যসেবা দিতে তারা হিমশিম খাচ্ছেন।

উপজেলার বাসিন্দাদের সহজে স্বাস্থ্যসেবা দিতে দ্রুত চিকিৎসকসহ শূন্য পদগুলোতে জনবল নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানান তিনি। 

আরও পড়ুন

×