রাতে বন্যহাতির তাণ্ডব, আতঙ্কে এলাকাবাসী

বন্যহাতির তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত একটি বাড়ী দেখছেন এলাকাবাসী
নালিতাবাড়ী (শেরপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৪ | ২১:০১ | আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৪ | ২১:০৩
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী পাহাড়ি গ্রামগুলোতে বন্যহাতির তাণ্ডবে আতঙ্কে মানুষ। প্রায় প্রতি রাতেই কৃষকের বসতবাড়ি ও বাগানবাড়িতে হামলা করছে বন্যহাতির পাল। এতে নির্ঘুম রাত কাটছে এলাকাবাসীর। বন্যহাতির কবল থেকে রক্ষায় সরকারিভাবে স্থায়ী পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে নয়াবিল ইউনিয়নের দাওধারা কাটাবাড়ি এলাকায় নাকুগাঁও স্থলবন্দরের সভাপতি ও বীরমুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমান মুকুলের বাগান বাড়িতে হানা দেয় বন্যহাতির দল। হাতির তাণ্ডবে মোস্তাফিজুর রহমানের বাড়ি ও গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি হয়।
ভুক্তভোগী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার রাত দুইটার দিকে ৫০/৬০ টি বন্যহাতি একযোগে তার বাগান বাড়িতে প্রবেশ করে তাণ্ডব চালায়। হাতির পাল ঘরের চাল খুলে ফেলে ও পশু-পাখির খাদ্য খেয়ে সাবার করেছে। এ সময় ঘরের আসবাবপত্র তছনছ করার পাশাপাশি বাগানে থাকা আম ও নারিকেল গাছসহ ২৫টি বড় গাছ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় হাতির দল। পরে তারা ওইসব গাছের কচি পাতা খেয়ে সাবার করেছে। এতে তাঁর কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এর আগে গত বুধবার রাতেও বন্যহাতির পাল নাকুগাঁও স্থলবন্দরের জিরো পয়েন্ট এলাকায় তান্ডব চালিয়ে কয়েকজন কৃষকের বসতঘর, ধানচাল ও আমন ফসলের বীজতলা মাড়িয়ে বিনষ্ট করেছে।
গারো আদিবাসী নেতা লুইস নেংমিনজা বলেন, প্রায় প্রতিরাতেই বন্যহাতি বসতবাড়িতে হামলা করে গ্রামবাসীর ব্যাপক ক্ষতি করছে। এখন বৃষ্টির মৌসুমের কারণে হাতি তাড়ানো যায় না। তাছাড়া বন্যহাতি এখন মশাল দেখেও তেমন ভয় পায় না। এ কারণে চিৎকার-চেঁচামেচি ও হৈ-হুল্লোড় করে হাতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলাও সম্ভব হচ্ছে না।
এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে, দিনের বেলায় বন্যহাতির পাল গহীন অরণ্যে লুকিয়ে থাকে। আর সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলেই খাদ্যের সন্ধানে বাড়িঘর ও ফসলের মাঠে তাণ্ডব চালায়। এ সময় ক্ষুধার্ত বন্যহাতিগুলো তাড়াতে গেলে তারাও মানুষের ওপর আক্রমণ করে। এতে মাঝে মধ্যেই হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে মানুষ মারা যাচ্ছে। নিজেদের বসতবাড়ি ও জানমাল রক্ষার্থে পাহাড়ি গ্রামবাসিরা রাত জেগে ফসল পাহাড়া দিচ্ছে। ঢাক-ঢোল ও পটকা ফুটিয়ে, মশাল জ্বালিয়ে হাতি তাড়ানোর চেষ্টা চলছে। কিন্ত যতই তাড়ানোর চেষ্টা চলছে ততই বন্যহাতির দল তেড়ে আসছে লোকালয়ে। হাতির কবল থেকে রক্ষা পেতে ঘর-বাড়ি ফেলে রেখে অনেকেই অন্যত্র আশ্রয় নিচ্ছেন। এতে যেন পাল্লা দিয়েই বাড়ছে মানুষ-হাতির দ্বন্দ্ব। নির্ঘুম রাত কাটছে পাহাড়ি গ্রামবাসিদের।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ বনবিভাগের মধুটিলা ফরেস্ট রেঞ্জকর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, গত কয়েকদিন ধরে বন্য হাতির পাল দিনে উপজেলার পাহাড়ি এলাকার গভীর জঙ্গলে অবস্থান করছে। আর সন্ধ্যা হলেই খাদ্যের সন্ধানে লোকালয়ে নেমে আসছে। বনবিভাগের লোকজন বন্যহাতির কবল থেকে ফসল বাঁচাতে কৃষকদের সবসময় সতর্ক করে যাচ্ছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা বন বিভাগের নির্ধারিত ফরমে আবেদন করে সরকারিভাবে ফসলের ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন। তাই বন্যহাতিকে উত্ত্যক্ত না করতে সবাইকে সতর্ক করেন তিনি।
- বিষয় :
- বন্যহাতির আক্রমণ
- নালিতাবাড়ী
- তাণ্ডব
- আতঙ্ক