পুড়ে অঙ্গার শাহীন চাকলাদারের হোটেল জাবীর, নিহত বেড়ে ২৪

আগুন নেভার পর যশোরের জাবীর হোটেল থেকে লুটপাট চালায় লোকজন। ছবি: সমকাল
যশোর অফিস
প্রকাশ: ০৬ আগস্ট ২০২৪ | ২২:২৩
আইনের ছাত্র ফয়সাল ইসলাম আকাশ (২৬) লেখাপড়ার পাশাপাশি সহকারী হিসেবে কাজ করতেন যশোর বারের একজন সিনিয়র আইনজীবীর সাথে। যোগ দেন কোটা আন্দোলনে। দাবি পূরণ ও সরকার পতনের খবরে সোমবার বিকেলে বিজয় উল্লাসেও অংশ নেন তিনি। ছোটভাইকে ফোন করে জানায় বাসায় ফিরে মিষ্টি খাওয়াবে সবাইকে। কিন্তু এর কিছুক্ষণ পর ফোন করে জানায়, হোটেল জাবীর ইন্টারন্যাশনালের তৃতীয় তলায় আটকা পড়েছেন তিনি। দীর্ঘ চার ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়েও উদ্ধার করা যায়নি তাকে। রাতে আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসার পর হোটেলের সপ্তম তলায় নিথর দেহ পাওয়া যায় তার।
চিকিৎসক জানান শ্বাসনালী পুড়ে যাওয়ায় মৃত্যুর কারণ। মঙ্গলবার দুপুরে বাড়ির উঠোনে মরদেহের সামনে বিলাপ করতে করতে এসব কথা বলছিলেন অগ্নিদগ্ধে নিহত আকাশের স্বজন রবিউল ইসলাম রবি।
যশোর শহরের চিত্রা মোড়ে পুড়ে অঙ্গার হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ১৪ তলা বিশিষ্ট একটি ভবন। পাঁচ তারকা হোটেলটি একদিন আগেও ভবনটির গ্লাস আর অ্যালুমিনিয়ামের পাতের বহিরাবরক চকচক করছিল। অথচ আজ সেই ভবনটির অবকাঠামো ছাড়া আর কিছু নেই। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার পর লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে হোটেলের ভিতরে পুড়ে যাওয়া বালিশ, কাঁথা, বিছানা চাদর থেকে শুরু করে বিলাসবহুল সব জিনিসপত্র। এমনকি মঙ্গলবার দুপুর দুইটা পর্যন্তও লুটপাট করতে দেখা গেছে।
বৃহত্তর যশোর অঞ্চলের পাঁচ তারকা হোটেল জাবীর ইন্টারন্যাশনালের মালিক যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার। তিনি যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্যও ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর পাওয়ার পর সোমবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে যশোর শহরে মিছিল বের করে ছাত্র-জনতা। ওই মিছিল থেকে বিক্ষুব্ধ লোকজন চিত্রা মোড়ে অবস্থিত হোটেল জাবির ইন্টারন্যাশনালে ভাঙচুর শুরু করে। দ্বিতীয় দফায় বিকেল ৪টার দিকে লোকজন সেখানে আগুন ধরিয়ে দেয়। রাত সাড়ে ৯টার দিকে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসলেও মঙ্গলবার ভোর ৫টার দিকে পুরোপুরি আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ওই ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৪ জনে দাঁড়িয়েছে। এদের মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার এক নাগরিকও আছেন। দগ্ধ হয়েছেন আরও ২৩ জন।
হোটেলে তৃতীয় তলার মদের বার থেকে কয়েকজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। লুটপাটের সময় সেখানে আটকা পড়ে কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী।
যশোর জেনারেল হাসপাতাল ও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিহতের বেশির ভাগ আন্দোনলকারী। ভাঙচুর আর অগ্নিসংযোগের সময় অনেকেই কৌতুহলবশত হয়ে অগ্নিসংযোগকারীদের সঙ্গে হোটেলে প্রবেশ করেন। প্রায় দুই শতাধিক আন্দোলনকারীরা হোটেলটির বেজমেন্টে ঢুকেই সিঁড়ি বেয়ে ১৪ তলা পর্যন্ত উঠে যায়। একপর্যায়ে নিচে থাকা বিক্ষুব্ধ কয়েকজন যুবক পেট্রোল দিয়ে আগুন দিতে শুরু করে। পর্যায়ক্রমে তারা কয়েকটি তলাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে দাউ দাউ করে পুরো ১৪ তলাই কয়েক মিনিটের মধ্যে জ্বলতে থাকে। এতে উপরে থাকা বেশির ভাগ আন্দোলনকারীরা বের হতে পারেনি। ফলে আগুনের ধোয়ায় নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আটকে থেকে তারা মারা গেছে। তবে কতজন আন্দোলনকারী বা হোটেলটির অতিথি, কর্মকর্তা, কর্মচারী মারা গেছে সেটা কেউ নির্দিষ্টভাবে বলতে পারেনি।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, হাসপাতালে মরদেহ আসলেই স্বজনেরা ময়নাতদন্ত ছাড়াই নিয়ে গেছে। পুলিশ প্রশাসন মাঠে না থাকাতে কোন রকম ঝামেলা ছাড়াই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশে নিহতের নাম ঠিকানা তালিকা করেই মরদেহ হস্তান্তর করেছেন। আর আহতদের খুলনা ও ঢাকাতে রেফার্ড করা হয়েছে। নিহতদের বেশিরভাগের বাড়ি যশোর শহর ও আশেপাশের উপজেলায়।
- বিষয় :
- যশোর
- শাহীন চাকলাদার