জোর করে নেওয়া হচ্ছিল ভারতে, ইমিগ্রেশনের সহায়তায় স্ত্রী তনুশ্রীকে পেলেন কবির

কবির হোসেন ও তনুশ্রী দাস। ছবি: সমকাল
তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) সংবাদদাতা
প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৪ | ২০:২০ | আপডেট: ১৯ আগস্ট ২০২৪ | ২০:৩৯
প্রথম দেখা থেকে ভালো লাগে, ফোন নাম্বার বিনিময়। এরপর প্রণয় ও পরিণয়। কিছুদিন সংসার করার পর বিষয়টি জেনে যায় তরুণীর পরিবার। ফলে কৌশলে নব দম্পতিকে ঠাকুরগাঁওয়ে নিয়ে আটকে রাখে তরুণীর পরিবার। এর একপর্যায়ে অপহরণ ও ধর্ষণ মামলায় তরুণকে যেতে হয় জেলে। এদিকে তরুণীকে অজ্ঞাত স্থানে আটকে রেখে ভারতে পাঠানোর বন্দোবস্ত করে তার পরিবার। আর জেলে থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে স্ত্রীর সন্ধান করতে থাকেন তরুণ। কিন্তু কোনো খোঁজ পাচ্ছিলেন না। অবশেষে শনিবার তরুণ জানতে পারেন স্ত্রীকে অমতে ভারতে পাঠাচ্ছে তার পরিবার। এর পর সেনাবাহিনী, পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনকে জানান ওই তরুণ। শেষমেশ পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর বিজিবি ও ইমিগ্রেশনের সহায়তায় স্ত্রী তনুশ্রী দাসকে ফিরে পান রংপুরের কবির হোসেন। তনুশ্রী দাস ঠাকুরগাঁওয়ের বাসিন্দা।
রোববার দুপুরে পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর ইমিগ্রেশনে এ ঘটনাটি ঘটে।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, দেড় বছর আগে রংপুর ঘুরতে যান ঠাকুরগাঁওয়ের চন্ডিপুর এলাকার তরুণী তনুশ্রী দাস। কারমাইকেল কলেজ মাঠে পরিচয় হয় রংপুরের দর্শনার বাসিন্দা কবির হোসেনের সঙ্গে। পরিচয় সূত্রে দুজনের ভালো লাগা শুরু হয়। একপর্যায়ে ফোন নম্বর দেওয়া-নেওয়া। এভাবেই গড়ে উঠে দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক। ৯ মাস প্রেম করার পর গত বছরের ৫ জুন পরিবারের অমতে বিয়ে করেন তনুশ্রী ও কবির। তবে বিয়ের আগে ধর্ম পরিবর্তন করেন তনুশ্রী। ধর্মান্তরিত হওয়ার পর তনুশ্রীর নাম হয় সিদরাতুল মুনতাহা। কয়েকদিন সংসারও করেন তারা। তবে বিয়ের কয়েকদিন পর বিষয়টি জানতে পারে তরুণীর পরিবার। মুসলমান ছেলের সঙ্গে বিয়ে মেনে নিতে পারেনি তারা। বিয়ের কয়েকদিন পর রংপুর থেকে তাদের ঠাকুরগাঁওয়ে নিয়ে যান তরুণীর পরিবার। পরে স্বামী কবিরকে আটকে তার বিরুদ্ধে অপহরণ ও ধর্ষণ মামলা করা হয়। সে মামলায় একদিন কারাবাসও হয় কবিরের। তবে আদালতে স্ত্রী তনুশ্রী জবানবন্দি দিলে জামিনে মুক্তি পান তিনি। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর খুঁজতে থাকেন স্ত্রীকে। কিন্তু কোথাও পাচ্ছিলেন না কবির। অবশেষে শনিবার জানতে পারেন স্ত্রীকে তার বাবা-মা বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পাঠাবেন। এমন খবর পেয়ে পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশনে ছুটে যান কবির। বিষয়টি তিনি সেনাবাহিনী, পুলিশ বিজিবিসহ প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তাকে জানান এবং বিজিবি চেকপোস্টে বিয়ের যাবতীয় কাগজপত্র জমা দেন। তরুণী সিদরাতুল মুনতাহা (তনুশ্রী দাস) পরিবারের কাছ থেকে রক্ষা পেতে বিজিবিকে জানান, নিজের বিয়ের বিষয়টি এবং স্বামীর সঙ্গে সংসার করার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। পরে বিজিবি তরুণীর বাবা-মায়ের সামনেই কবিরের হাতে তাকে তুলে দেন।
তনুশ্রী দাস বলেন, ‘ভালোবেসে গত ২০২৩ সালের ৫ জুন আমরা বিয়ে করি। আমি ধর্মান্তরিত হই। বিয়ের পর কিছুদিন আমার স্বামীর সঙ্গে ছিলাম। কিন্তু আমার পরিবার পুলিশের মাধ্যমে আমাদের ঠাকুরগাঁও নিয়ে আসে। এরপর অনেক কিছু ঘটে। ১ বছর ৩ মাস পর আমাদের আবার দেখা হলো। এই অনুভূতি বুঝানোর মতো নয়।’
কবির হোসেন বলেন, ‘যখন শুনলাম আমার স্ত্রীকে তার অমতে ভারতে পাঠানো হচ্ছে তখন আমি দ্রুত সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি ও ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করি। আমার স্ত্রী ভারতে যেতে চান না। সে আমার সঙ্গে সংসার করতে চান। পরে বিজিবির সহযোগিতা স্ত্রীকে ফিরে পেয়েছি। সবার কাছে দোয়া চাই, আমরা যেন সুখে শান্তিতে সংসার করতে পারি।’
এ বিষয়ে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে বিজিবি ও ইমিগ্রেশন অফিসার ইনচার্জ এর সঙ্গে কথা হয়। কিন্তু তারা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুমতি ছাড়া কথা বলতে পারবেন না বলে জানান।