গাজী টায়ার্স কারখানায় আগুন
কেউ মারা গেলেও লাশ পাওয়ার আশা নেই!

রূপগঞ্জের রূপসী এলাকার গাজী টায়ার্স কারখানার পোড়া ভবন। ছবি-ছবি-মেহেদী হাসান সজীব
বকুল আহমেদ ও জিয়াউর রাশেদ, রূপগঞ্জ থেকে
প্রকাশ: ২৯ আগস্ট ২০২৪ | ০৩:৪৬ | আপডেট: ২৯ আগস্ট ২০২৪ | ১১:৪১
ভবনের নিচতলায় পশ্চিম-দক্ষিণ পাশে আগুন জ্বলছে। কোথাও জিনিসপত্র পুড়ে কুণ্ডলী হয়ে পড়ে আছে। কোথাও ছাই। ভবনের দেয়ালও পুড়ে কালো হয়ে গেছে। কোনো কিছুই অক্ষত নেই।
গতকাল বুধবার নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের রূপসী এলাকার গাজী টায়ার্স কারখানার পোড়া ভবনের নিচতলায় ঢুকতেই এমন দৃশ্য দেখা গেল। আগুনে ভবনের ছাদ, বিম, পিলার ও রড পর্যন্ত গলে ধসে পড়েছে।
কারখানার ভেতরে মানুষের অবস্থান অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তাই ড্রোন ব্যবহার করে নিখোঁজদের সন্ধান চলছে। তবে তদন্ত দলের ধারণা, কেমিক্যাল পুড়ে যেভাবে আগুন জ্বলেছে, তাতে যদি কেউ মারা গিয়েও থাকে, তাহলে মৃতদেহ পাওয়ার আশা নেই। আগুনে তাদের কয়লা হয়ে যাওয়ার কথা।
বিধ্বস্ত ভবনের পাশে দাঁড়িয়ে নিখোঁজদের স্বজনরা গতকালও বিলাপ করছিলেন। দুপুর ১২টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের মোবাইল ফোনে ছবি দেখিয়ে বোন লিপি আক্তার আর্তনাদ করে বলছিলেন, ‘এই ছবি আমার ভাই আল-আমিনের। ঘটনার রাতে সে এখানে এসেছিল। পরে আর বাসায় ফিরে যায়নি। আগুনের সময় ভবনে আটকা পড়েছে আমার ভাই। ওর লাশটা কি দেখেছেন?’ ‘না’ সূচক জবাব শুনে আঁচল দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে চলে যান তিনি।
রোববার রাত ৮টার দিকে রূপগঞ্জের রূপসী এলাকায় গাজী টায়ার্স কারখানা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। তিন দিনেও আগুন পুরোপুরি নেভানো যায়নি। গতকালও বিভিন্ন তলায় আগুন ও ধোঁয়া দেখা গেছে। তবে কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে জড়িতদের এখনও শনাক্ত করা যায়নি।
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশনস) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ভবন অতি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ভেতরে তল্লাশি কার্যক্রম চালানো হয়নি। বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এখনও ভবনের বিভিন্ন ফ্লোরে আগুন আছে। নেভানোর কাজ চলমান।
গতকাল তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। কমিটির প্রধান নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হামিদুর রহমান বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে পরিদর্শন করেছি। পরে প্রতিবেদন আকারে বিষয়টি জানানো হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিখোঁজ কতজন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে যারা স্বজনের খোঁজে আসছেন, তাদের তালিকা করা হচ্ছে। ফায়ার সার্ভিস বিধ্বস্ত ভবনের ভেতরে ড্রোন পাঠিয়ে কোনো মৃতদেহ দেখতে পায়নি। তবে আমরা মনে করছি, এখানে ২১-২২ ঘণ্টা টানা কেমিক্যাল পুড়ে আগুন জ্বলেছে। যদি কেউ মারা গিয়েও থাকে, তাহলে লাশ পাওয়ার আশা নেই। তবে যখন ভেতরে কার্যক্রম চালাতে পারব, তখন আরও নিশ্চিত হতে পারব আদৌ কোনো লাশ আছে কিনা।
প্রত্যক্ষদর্শী কাহিনা গ্রামের এক তরুণ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তিনিসহ পাঁচজন একসঙ্গে সেদিন রাতে মালপত্র লুট করার উদ্দেশ্যে গাজী টায়ার্স কারখানায় এসেছিলেন। পাঁচজনই চারতলায় উঠে মালপত্র নেওয়ার চেষ্টা করেন। এরই মধ্যে আগুন দেখতে পান তারা। এ সময় ওই তরুণ অন্য চারজনকে দ্রুত নেমে পড়তে বলেন। কিন্তু তারা না নেমে পাঁচতলায় উঠে যান দামি কোনো পণ্যের আশায়। আর তিনি এক বান্ডিল গুনা নিয়ে নেমে যান ভবন থেকে। ওই চারজন এখনও নিখোঁজ।
তরুণ জানান, অগ্নিকাণ্ডের সময় ভবনে কয়েকশ মানুষ অবস্থান করছিল মালপত্র লুটের জন্য। তাদের অনেকেই বের হতে পারেনি।
অবশ্য ঘটনার পর ১৭৫ জন নিখোঁজ হওয়ার একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়।
- বিষয় :
- রূপগঞ্জ
- আগুন
- শিল্প প্রতিষ্ঠান
- নাশকতা