অতিরিক্ত নিবন্ধন ফিতে কমেছে জমি বেচাকেনা

ফাইল ছবি
শাহাদাত হোসেন রতন, সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ)
প্রকাশ: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ০১:০৫
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে অতিরিক্ত নিবন্ধন ফি নির্ধারণ করায় জমি ক্রয়-বিক্রয় কমে গেছে। এতে কমেছে রাজস্ব, বিপাকে পড়েছে দলিল দাতা, গ্রহীতাসহ নিবন্ধন সংশ্লিষ্টরা।
ভূমিগ্রহীতারা জানিয়েছেন, জমি নিবন্ধনে ফি কমানোর দাবিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে স্মারকলিপি দিয়েও কোনো লাভ হয়নি। গত বছর ৩ সেপ্টেম্বর গণস্বাক্ষর দিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের ভবনাথপুর গ্রামের শহিদ সরকার জনসাধারণের পক্ষে এ স্মারকলিপি দেন। স্মারকলিপির অনুলিপি নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক, নারায়ণগঞ্জ জেলা রেজিস্ট্রার ও সোনারগাঁ উপজেলা সাব রেজিস্ট্রারকেও দেওয়া হয়েছিল। এরপর পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই। অতিরিক্ত নিবন্ধন ফির কারণে সোনারগাঁ সাব রেজিস্ট্রি কার্যালয়ে সাফ কবলা দলিল তৈরি কমে গেছে।
জানা যায়, সোনারগাঁ উপজেলার সব মৌজায় জমি বিক্রয়ের ক্ষেত্রে কাঠাপ্রতি বিক্রয় মূল্যের ওপর নিবন্ধন ফি ছিল তিন শতাংশ। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) আওতাধীন অঞ্চলের জন্য এ নিবন্ধন ফি ছিল চার শতাংশ। গত বছর ২৭ আগস্ট জমি বিক্রয়ের ক্ষেত্রে কাঠাপ্রতি ৫০ হাজার টাকা নিবন্ধন ফি নির্ধারণ করা হয়।
স্থানীয়দের দাবি, নারায়ণগঞ্জের ৫টি উপজেলার মধ্যে শুধু সোনারগাঁয়ে অতিরিক্ত ফি দিয়ে জমি নিবন্ধন হয়। জমি নিবন্ধন ফি বহুগুণ বেড়ে যাওয়ায় জমি ক্রয়-বিক্রয় কমে গেছে।
নোয়াগাঁও ইউনিয়নের চৌরাপাড়া গ্রামের সৌদি আরব প্রবাসী আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রবাসে যাওয়ার জন্য ৩০ শতাংশ বা ২০ কাঠা জমি ৬ লাখ টাকায় বিক্রয় করেন। সাফ কবলা দলিল করতে ১২ লাখ টাকা নিবন্ধন ফি দিতে হবে বলে জমিগ্রহীতা দলিল করছেন না। ফলে প্রবাসে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তিনি জানান, এই পরিমাণ জমি আগের পদ্ধতিতে বিক্রি করলে নিবন্ধন ফি দিতে হতো ১ লাখ ৭০ থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
বারদী ইউনিয়নের নুনেরটেক গ্রামের শহিদুল্লাহ মিয়া বলেন, জমি বিক্রয় করে তাঁর মেয়ের বিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। ১৭ শতাংশ বা ১১.৩৩ কাঠা জমি বিক্রির কথা হয়। ক্রেতা জানতে পারেন সাফ কবলা দলিল করতে সাড়ে ৭ লাখ টাকা নিবন্ধন ফি দিতে হবে। ফলে জমি বিক্রয় করতে পারেননি। তাই মেয়ের বিয়ের তারিখও নির্ধারণ করতে পারছেন না তিনি। তিনি জানান, এই ১৭ শতাংশ বা ১১.৩৩ কাঠা জমি আগের পদ্ধতিতে বিক্রি করলে নিবন্ধন ফি দিতে হতো ৭৫ হাজার থেকে ৭৮ হাজার টাকা।
সোনারগাঁ সাব রেজিস্ট্রি অফিসে কর্মরত দলিল লেখক বিল্লাল হোসেন জানান, নতুন নিবন্ধন ফি নির্ধারণের ফলে সাফ কবলা দলিল সৃজন প্রায় বন্ধ। আড়াইহাজার ও রূপগঞ্জ উপজেলায় কাঠাপ্রতি নিবন্ধন ফি ২০ হাজার টাকা। অথচ এ উপজেলায় নিবন্ধন ফি ৫০ হাজার টাকা। ফলে দাতা ও গ্রহীতার মাঝে সাফ কবলা দলিল তৈরিতে সমস্যার সৃষ্টি হয়। আগের পদ্ধতিতে নিবন্ধন ফি নিলেই বিষয়টির সমাধান সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
আরেক দলিল লেখক মফিজুল ইসলাম বলেন, ফি অনেক বেড়ে যাওয়ায় জমি নিবন্ধন কমে গেছে। ফলে অনেকেই বেকার হয়ে পড়েছেন। দ্রুত নতুন ফি নির্ধারণ জরুরি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার মুজিবুর রহমান বলেন, অতিরিক্ত নিবন্ধন ফি নির্ধারণ করায় সাফ কবলা দলিল সৃজন কমে যাচ্ছে। দলিল সৃজন কমে যাওয়ায় রাজস্ব কমে গেছে। আগের পদ্ধতিতে জমি নিবন্ধন করতে পারলে দলিল সৃজন ও রাজস্ব বাড়বে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ আব্দুল হাফিজ বলেন, সোনারগাঁ ছাড়া অন্যান্য উপজেলায় নতুন নিবন্ধন ফি নির্ধারণ করে দলিল করা হচ্ছে। সোনারগাঁয়ে নতুন করে নিবন্ধন ফি নির্ধারণ প্রয়োজন। তাহলেই দলিল করার সংখ্যা বাড়বে।
- বিষয় :
- জমি উদ্ধার