সাতকানিয়ায় নিহত দুই
গণপিটুনির আগে থানার লুট হওয়া পিস্তল দিয়ে গুলি ছোড়ে নেজাম

উদ্ধার হওয়া পিস্তলটি। ছবি: সমকাল
চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ: ০৬ মার্চ ২০২৫ | ১৭:২৫ | আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২৫ | ১৯:০২
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় গণপিটুনিতে দুজনের মৃত্যুর পর ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া পিস্তলটি নগরের কোতোয়ালি থানা থেকে লুট হওয়া। অস্ত্রটি দিয়ে সেদিন গুলি করেছিলেন গণপিটুনিতে নিহত নেজাম উদ্দিন। এতে পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হন। তার কাছে কীভাবে অস্ত্রটি গেল তা তদন্ত করছে পুলিশ। অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। তবে দুজনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি। কাউকে গ্রেপ্তারও করা হয়নি। তবে পুলিশ বলছে, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আভ্যন্তরীণ বিরোধে খুন হয়েছেন নেজাম ও আবু ছালেক।
বৃহস্পতিবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সাইফুল ইসলাম।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর চট্টগ্রাম নগরের ১৬টি থানার মধ্যে ছয়টি থানার বিভিন্ন ধরনের মোট ৮১৫টি অস্ত্র লুট হয়। এর মধ্যে ছয় শতাধিক অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। তবে দুই শতাধিক অস্ত্র এখনও উদ্ধার হয়নি।
এসপি সাইফুল ইসলাম বলেন, ঘটনার দিন নেজাম সেখানে গিয়ে অস্ত্র প্রদর্শন করেন। হত্যাকাণ্ডের পর সেখান থেকে যে অস্ত্রটি উদ্ধার করা হয়েছিল, সেটি সিএমপির কোতোয়ালি থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র। সেখানে অনেক অস্ত্র প্রদর্শিত হয়েছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সব একই ধরনের পিস্তল ছিল।
তিনি বলেন, পুলিশের অনেক অস্ত্র খোয়া গেছে। এ অস্ত্রগুলো কীভাবে কাদের কাছে গেল, সেগুলো আমরা তদন্ত করছি।
গত সোমবার রাতে সাতকানিয়া উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা এলাকায় মাইকে ডাকাত ঘোষণা দিয়ে গণপিটুনিতে দুজনকে হত্যা করা হয়। তারা হলেন- নেজাম উদ্দিন ও আবু ছালেক।
নিহত দুজনকে কর্মী দাবি করে জামায়াত ইসলামী নেতারা বলেছেন, হত্যাকাণ্ডটি পরিকল্পিত। এওচিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মানিকের নির্দেশে তার দুই ভাইয়ের তত্ত্বাবধানে এই হত্যাকাণ্ডটি সংগঠিত হয়েছে। তবে পুলিশ বলছে, মানিকের নির্দেশনায় নয়, আভ্যন্তরীণ বিরোধে খুন হয়েছেন দুজন।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, অনেকেই অনেক রাজনৈতিক কথা বলছেন। বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলের কোনো ব্যক্তি বা চেয়ারম্যানের উপস্থিতি ছিল কিনা, আসলে আমরা কিন্তু এ ধরনের কোনো ব্যক্তি বা চেয়ারম্যানের উপস্থিতি খুঁজে পাইনি। এমনকি সেখানে তাদের কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা বা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের শক্ত অবস্থানও আমরা খুঁজে পাইনি।’
তিনি আরও বলেন, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ধরতে পুলিশ নিয়মিত কাজ করেছে। সেখানে তাদের থাকার কোনো সুযোগ নেই।
সাইফুল ইসলাম বলেন, আধিপত্য বিস্তারে অভ্যন্তরীণ বিরোধে খুন হন নেজাম ও ছালেক। ঘটনার দিন তারা সাতটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে সেখানে গিয়ে ব্যবসায়ীদের অস্ত্র প্রদর্শন করেছিলেন। ঘটনার দিনসহ নিহতরা সেখানে গত তিন মাসে নয়বার গিয়েছিলেন। তারা চাঁদার জন্য নিয়মিত সেখানে যেতেন বলে পুলিশ তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে। চার-পাঁচ দিন আগেও তারা সেখানে গিয়ে এক মেম্বারের স্ত্রীকে থাপ্পড় মেরেছিলেন, যার কারণে জনগণের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
পুলিশ সুপার বলেন, এ ঘটনায় দুটি পক্ষ আছে। একটা পক্ষ যারা আহত হয়েছেন এবং আরেকটি পক্ষ যারা মারা গেছে। কোনো পক্ষ থেকেই কোনো মামলা হয়নি। যেহেতু সেখানে অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে, তাই পুলিশের পক্ষ থেকে একটি অস্ত্র মামলা করা হয়েছে।