বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বালুমহাল ইজারা পেলেন যুবলীগ নেতা
ফরিদপুরে দরপত্র কেনেন ১৯ জন, জমা পড়ে একটি

ফাইল ছবি
ফরিদপুর অফিস
প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৫ | ২২:৪২
লংকারচর বালুমহাল। দরপত্র বেচা হয় ১৯টি। জমা পড়ে একটি। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ইজারা পেয়েছেন যুবলীগ নেতা। ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ঘটনা এটি। এতে স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্যের (এমপি) যোগসাজশের অভিযোগ উঠেছে। প্রতিকার চেয়ে লিখিত অভিযোগ দিলেও তা আমলে নিচ্ছেন না জেলা প্রশাসক (ডিসি)।
জানা যায়, গত ৬ ফেব্রুয়ারি তিনটি বালুমহালের দরপত্রের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন ডিসি। এগুলো বোয়ালমারী, মধুখালী ও আলফাডাঙ্গায়। লংকারচর মহালের সরকারি মূল্য নির্ধারণ করা হয় ১ কোটি ২০ লাখ ৭৩ হাজার ৪১৮ টাকা। ঘোষপুর ইউনিয়নে গড়াই নদীর এ মহালের আয়তন ৭৪ হাজার ১৪৭ একর।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, প্রথম ধাপে দরপত্র বেচার শেষ দিন ছিল ২৫ ফেব্রুয়ারি। ২৬ ফেব্রুয়ারি ছিল জমার শেষ দিন। দরপত্র কেনেন ১৯ জন। কিন্তু শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত জমা পড়ে একটি। এটি জমা দেন বোয়ালমারী উপজেলার ময়না ইউনিয়নের কান্দাকুল গ্রামের বাসিন্দা ও মেসার্স রবিউল ট্রেডার্সের মালিক রবিউল ইসলাম। প্রায় ৩৬ লাখ টাকা বেশি হওয়ায় তাঁকে ইজারা দেওয়া হয়।
এদিকে দরপত্র জমা দিতে হুমকি-ধমকি পান ঠিকাদাররা। বাধাও পান। তাদের অভিযোগ, কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলাম হুমকি-ধমকি দেন এবং ভয়ভীতি দেখান। তিনি ফরিদপুর-১ (মধুখালী, আলফাডাঙ্গা ও বোয়ালমারী) আসনের সাবেক এমপি। এ কারণে অন্য ঠিকাদাররা দরপত্র জমা দিতে পারেননি। রবিউলকে ইজারা পাইয়ে দেওয়ার বন্দোবস্ত করেন নাসিরুল।
জানা যায়, রবিউল ইসলাম বোয়ালমারী উপজেলা যুবলীগের সদস্য। ময়না ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি। ফরিদপুর-৪ আসনের সাবেক এমপি ও যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরীর ঘনিষ্ঠজনও।
এ নিয়ে সম্প্রতি ডিসির কাছে লিখিত অভিযোগ করেন মেসার্স মোহনা ট্রেডার্সের মালিক শেখ আজিজুল হক। এতে ১০ ঠিকাদার সই করেন। আজিজুল সমকালকে বলেন, ‘জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আফজাল হোসেন খান পলাশ, জুলফিকার হোসেন জুয়েলসহ কয়েকজন বিএনপি নেতার উপস্থিতিতে ডিসির হাতে অভিযোগপত্র তুলে দিয়েছি।’
অভিযোগে উল্লেখ করেন, রবিউল-নাসিরুল মিলে তাদের ভয়ভীতি দেখান। দরপত্র জমা না দিতে বলেন। এ অবস্থায় দরপত্র জমা দিতে ব্যর্থ হন তারা। বাহিনী দিয়ে দরপত্র ছিনিয়ে নেওয়া হয়। বিষয়টি কারও কাছে প্রকাশ না করতে হত্যার হুমকিও দেয়।
আজিজুল বলেন, ‘নাসিরুলের সঙ্গে আমাদের কথা ছিল, আওয়ামী লীগের কোনো লোক ইজারা নিতে পারবে না। নাসিরুলের ঘনিষ্ঠ রিপনকে দেওয়ার কথা হয়। কিন্তু বেশি টাকার বিনিময়ে যুবলীগ নেতাকে দেওয়া হয়েছে। আমরা যারা দরপত্র কিনেছিলাম, প্রত্যেককে হুমকি দেওয়া হয়েছে। এমনকি ঠিকাদার মৃত্যঞ্জয়কে তুলে নিয়ে যায়। তাঁকে ভয়ভীতি দেখায়।’
তিনি আরও জানান, গতবার সাবেক এমপি নিক্সন চৌধুরী ওই যুবলীগ নেতাকে বালুমহাল পাইয়ে দেন। এবার নাসিরের মাধ্যমে পেলেন।
যুবলীগ নেতা রবিউল ইসলাম সমকালকে বলেন, ‘এই বালুমহাল আমার। বিগত দিন, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের মালিক আমি। সরকারকে রাজস্ব বেশি দিয়েছি। তাহলে আমাকে দেবে না, কাকে দেবে?’
অভিযোগ অস্বীকার করেন ফরিদপুর-১ আসনের সাবেক এমপি খন্দকার নাসিরুল ইসলাম। তিনি সমকালকে বলেন, ‘আমি তো বালুর ব্যবসা করি না। আমি কেন বাধা দিতে যাব? আমি বাধা দিয়েছি– কোনো প্রমাণ দিতে পারবেন? যারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে, তারা আওয়ামী লীগ ও বিএনএমের লোক। ষড়যন্ত্র করে শিডিউল কিনে আমাকে হয়রানি করছে।’ তিনি সমকাল প্রতিবেদককে বলেন, ‘আপনি আগেও আমার বিরুদ্ধে নিউজ করেছেন। সবাই আমাকে ভয় পায়, আপনি ভয় পান না কেন?’
খন্দকার নাসিরুলের বিরুদ্ধে সমকালে ‘কৃষক দল নেতা নাসিরুলের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
ফরিদপুরের ডিসি মো. কামরুল হাসান মোল্যা সমকালকে বলেন, ‘আমার কাছে অভিযোগ আসেনি। আর এলেও আমলে নেওয়ার কিছু নেই। শিডিউল কিনে কেউ যদি ডিসি, ইউএনও অফিসে জমা না দিতে পারে জানাবে। কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে জানায়নি। তারা যদি আমার দপ্তরে এসে বাধা পেয়ে জানাত, তাহলে আমি দেখতাম কোন সেই পাওয়ারফুল লোক, কে সেই মাস্তান? বাইরে থেকে কেউ যদি বাধা সৃষ্টি করে, সে বিষয় তো আমার মাথাব্যথার না। জমা দেওয়ার পরে কেউ যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা অন্যায়-অবিচারের শিকার হয়, তাহলে আমার দেখার বিষয়।’
তিনি জানান, বালুমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভার সিদ্ধান্তে নীতিমালা অনুযায়ী ইজারা দেওয়া হয়েছে। নিয়ম রয়েছে, সরকারি মূল্যের চেয়ে যদি বেশি হয় এবং একক কেউ থাকে, তাহলে তাকে দেওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে অনিয়ম হয়নি।
- বিষয় :
- ফরিদপুর
- যুবলীগ নেতা