ইনজেকশন পুশ করেন আয়া

চরফ্যাসন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীর শরীরে ইনজেকশন পুশ করছেন আয়া সমকাল
চরফ্যাসন (ভোলা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২৫ | ২৩:২৩
আবদুল্লাহপুর ইউনিয়নের আসমা বেগম ঠান্ডায় আক্রান্ত এক দিন বয়সী শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। ব্যবস্থাপত্র নিয়ে নার্সের সন্ধানে গেলে জোসনা বেগম নামে এক নারী তাঁর সন্তানকে ইনজেকশন পুশ করেন। বিনিময়ে ২০০ টাকা দাবি করলে তাঁকে ১০০ টাকা দেওয়া হয়। পরে আসমা জানতে পারেন, নার্স পরিচয় দেওয়া জোসনা হাসপাতালের আয়া।
জাহানপুর ইউনিয়নের আবুল কাশেম ফরাজী এসেছিলেন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত সন্তানকে নিয়ে। তাঁর সন্তানকেও জোসনা বেগম স্যালাইন পুশ করেছেন।
শুধু আসমা বেগম বা কাশেম ফরাজীর ক্ষেত্রে নয়, চরফ্যাসন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা এমন অনেক রোগীকেই স্যালাইন ও ইনজেকশন পুশ করছেন জোসনা বেগম ও রোকেয়া বেগমের মতো আয়া-ঝাড়ুদার। বিষয়টি কয়েকজন চিকিৎসক ও নার্স স্বীকার করে বলেন, জনবল সংকটের সুযোগ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে এ ধরনের কাজ চলছে।
আয়া জোসনা বেগম ও রোকেয়া বেগম জানান, নার্সদের কাছ থেকে ক্যানোলা ও স্যালাইন পুশ করা শিখেছি। রোগীর চাপ থাকলে তারা কুলিয়ে উঠতে পারেন না। তখন রোগীর স্বজনরাই ডেকে সাহায্য করতে বলেন। এতে তাদের উপকার হয়। তাই বিনিময়ে খুশি হয়ে টাকাও দেন।
উপজেলার সাত লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ২০২৩ সালে হাসপাতালটি ৫০ থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। বাড়ানো হয়নি জনবল ও অবকাঠামো। এ সুযোগে হাসপাতালে কর্মরত আয়া ও আউটসোর্সিং কর্মীরা অপকর্ম করে থাকেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের কয়েকজন কর্মচারী জানান, ১৭ জন নার্স রয়েছেন। এর পরও আয়া ও ঝাড়ুদার দিয়ে চলছে শিশু, কিশোর ও বয়স্কদের চিকিৎসাসেবা। কর্তব্যরত নার্সদের দায়িত্বে অবহেলার কারণেই রোগীরা না জেনে বা বাধ্য হয়ে আয়া ও ঝাড়ুদারের কাছ থেকে সেবা নিচ্ছেন। নার্সদের দাবি, রোগীর তুলনায় নার্স কম। এ কারণে রোগীর স্বজনরা না বুঝে আয়াদের শরণাপন্ন হন। আয়ারা তাদের না জানিয়ে গোপনে এসব অপকর্ম করছেন। কর্মতর্কাদের বিষয়টি জানালেও কোনো প্রতিকার মেলেনি।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. হানিফের অভিযোগ, রোগী এলে নার্সদর খুঁজে পাওয়া যায় না। পেলেও ২০০ থেকে ৩০০ টাকা ছাড়া সেবা দেন না। এ সুযোগে আয়া ও ঝাড়ুদাররা গ্রাম থেকে আসা সহজ-সরল মানুষকে ভুল বুঝিয়ে ১০০ টাকা নিয়ে স্যালাইন ও ইনজেকশন পুশ করছেন।
চরফ্যাসন হাসপাতালে দায়িত্বপ্রাপ্ত নার্স অপরাজিতা রানী জানান, জনবল সংকটের কারণে অনেক সময় আয়াদের সহায়তা নিতে হয়। তবে তারা নিজেরা একা এ কাজ করতে পারেন না। টাকা নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনেকে সেবা পেয়ে নার্সদের খুশি হয়ে টাকা দিয়ে থাকেন। টাকা দিয়ে পরে কেউ অভিযোগ করলে কিছু করার নেই।
স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শোভন বসাক বলেন, আয়া বা ঝাড়ুদার এসব কাজ করতে পারেন না। বিষয়টি জানতে পেরে রোকেয়া বেগম নামে আউটসোর্সিংয়ের এক আয়াকে শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তাঁর জবাব পেলে সে অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
- বিষয় :
- চিকিৎসা