বকশীগঞ্জে ভাঙনে দিশেহারা নদীপাড়ের মানুষ
মসজিদসহ অর্ধশতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন

মুন্দিপাড়া ব্রিজের পূর্বপাশের অ্যাপ্রোচ ধসে পড়ায় দেওয়ানগঞ্জ-বকশীগঞ্জ সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ছবি: সমকাল
বকশীগঞ্জ (জামালপুর) সংবাদদাতা
প্রকাশ: ২২ মে ২০২৫ | ১৯:৪৭
জামালপুরের বকশীগঞ্জে ভয়াবহ ভাঙনের কবলে পড়েছে নদীপাড়ের মানুষ। গত কয়েকদিনে মসজিদ, বাজারসহ প্রায় অর্ধশতাধিক বাড়িঘর, গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে এলাকার শতশত মানুষ।
সরেজমিন দেখা গেছে, মুন্দিপাড়া ব্রিজের পূর্বপাশের অ্যাপ্রোচ ধসে পড়ায় দেওয়ানগঞ্জ-বকশীগঞ্জ সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে ব্রিজটি। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন দুই উপজেলার হাজার হাজার মানুষ। ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি এলাকাবাসীর।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত কয়েকদিনের টানা ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বেড়েছে দশানী নদীর পানি। পানি বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ভাঙন। প্রতিদিন ভাঙছে বসতভিটা, রাস্তাঘাট-ফসলি জমি। ইতোমধ্যে মেরুরচর ও সাধুরপাড়া ইউনিয়নের প্রায় ৫০টি বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। মেরুরচর ইউনিয়নের মুন্দীপাড়া গ্রামের বিদ্যুৎ মিয়া, সুন্দর আলী, জুয়েল মিয়া, সেমাজুল হক, শিক্কু মিয়া, লুৎফর রহমান, শফিকুল ইসলাম, সাজু মিয়া, মজিবুর রহমান, সোলায়মান হক, কালামত আলী, আলাল মিয়া, আমিরুল ইসলাম, ঘুঘরাকান্দি এলাকার ফকির আলী, গামা শেখ, হাসেম আলী, মকবুল শেখ, ফরিদ, মজিবুর রহমান, দুখু মিয়া, টুনু মিয়া, শের আলী, হযরত আলী, ওমান মিয়া, ইসরাফিল, আলামিন, সাধুরপাড়া ইউনিয়নের আইড়মারী এলাকার হেকতমত আলীসহ প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার ভাঙনের কবলে পড়েছে।
এছাড়াও ঘুঘরাকান্দি বাজার ও একটি মসজিদ ভেঙে গেছে। ঘরবাড়ি হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন তারা। ভাঙনের মুখে হুমকিতে আরও প্রায় পাঁচ শতাধিক বাড়িঘর। প্রতিনিয়ত ভাঙনের ফলে এলাকার মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন নদীপাড়ের মানুষ। অনেকেই ভাঙনের কবল থেকে বাঁচতে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন ঘরবাড়ি। অনেকেই আবার ভয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার নদীভাঙন এলাকা পরিদর্শনে যান মেরুরচর ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম মঞ্জু। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত নদীভাঙন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি।
ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যুৎ মিয়া, সুন্দর আলী, জুয়েল মিয়া, সেমাজুল হক জানান, বেশ কয়েকবার নদীভাঙনের শিকার হয়েছেন তারা। এবার অসময়ে তীব্র ভাঙনে বাড়িঘর নদীগর্ভে চলে গেছে। আতঙ্কে দিনাতিপাত করছেন তারা।
তারা আরও বলেন, এখানকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ দরিদ্র কৃষক। তাদের অনেকের নতুন করে ঘর তোলার সামর্থ্য নেই।
ঘুঘরাকান্দি এলাকার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ফকির আলী, গামা শেখ, হাসেম আলী, মকবুল শেখ জানান, তাদের সবাই কমবেশি ভাঙনের শিকার। ভাঙনে সহায়-সম্বল বলতে যা ছিল, তার সব শেষ হয়ে গেছে। ফসলি জমিও নদীতে চলে যাচ্ছে। বারবার আবেদন করা হলেও ভাঙন রোধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ তাদের।
মেরুরচর ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, বর্ষা মৌসুম শুরু হতেই তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হচ্ছে। ইউএনও ও পানি উন্নয়ন বোর্ডে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে ভাঙন রোধে রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাসুদ রানা জানান, মুন্দিপাড়া ব্রিজটির এপ্রোচ ধসে যাওয়ার খবর পেয়েই সংস্কারের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মানুষ যাতে ভোগান্তির শিকার না হয় সেজন্য ব্রিজের পাশেই একটি সাঁকোর ব্যবস্থা করা হবে। নদীভাঙনে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের তালিকা করে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।